ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু তানজিল আহমেদও মনে করেন ন্যায়বিচার পাননি বিশ্বজিতের পরিবার! তাঁর প্রশ্ন, ‘‘প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার পরেও ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামীদের সাজা কীভাবে কমে?''
স্যাকলায়েন খান বলছেন, ‘‘কোপাকুপিতে অংশ নিল ১৪-১৫ জন৷ তবে কেন ফাঁসি হলো মাত্র দু'জনের?''
পাঠক আবদুল্লাহ ইমরানের মতে বিশ্বজিতের হত্যার বিচার নিয়ে নাকি তামাশা করা হয়েছে৷ আর তানভির আহমেদের ধারণা, যে দু'জনকে ফাঁসি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তারাও নাকি খালাস পেয়ে যাবেন৷
এ ধারণা অবশ্য তাঁর একার নয়, আরো অনেকেরই৷ যেমন ফেসবুকে মোহাম্মদ আবু তাহেরের বক্তব্য, ‘‘সেদিন হয়ত খুব বেশি দূরে নয়, যখন এই দু'জনসহ বাকি সকলকেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে৷ আমরা এ রকম বহু দেখছি৷ ক্ষমতার ছায়ায় থেকে এভাবেই অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়৷ তাই তো এই দেশে বার বার ফিরে আসে খুন, ধর্ষণ সহ যাবতীয় অন্যায় কর্মকাণ্ড৷ মাঝে মাঝে মনে হয় এ পোড়া দেশে রাষ্ট্রপতি বানানো হয় অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য! আজব এ দেশ আর আজব এ দেশের আইন-কানুন৷ এ দেশের আইনের সব ধারাই যেন গরিব আর অসহায়দের দিকে তাক করে আছে৷''
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
ব্লগার হত্যা
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসির সামনে দুর্বৃত্তরা মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এরপর একে একে হত্যার শিকার হন ব্লগার নীলাদ্রী নিলয়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর বাবু, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন৷ এ সব হত্যাকাণ্ডের কোনোটির বিচারে ‘উল্লেখযোগ্য’ অগ্রগতি না হওয়ায় সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
সাংবাদিক দম্পতি হত্যা
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়৷ গত চার বছরে এই মামলার তদন্ত থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ হয়ে র্যাব-এর হাতে পৌঁছেছে৷ গত মে মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা প্রত্যেক হত্যাকাণ্ড তদন্তের মাধ্যমে তার বিচার করতে পেরেছি৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড অন্য কথা৷ ওটা এখানে না আসাই ভালো৷’’
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
ধর্ষণের বিচার
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৬৬০ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ অথচ কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
ত্বকী হত্যা
নারায়ণগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে ২০১৩ সালের ৬ মার্চ হত্যা করা হয়৷ হত্যার দুদিন পর শীতলক্ষ্যার একটি খালে তার লাশ পাওয়া যায়৷ রাষ্ট্রের অনিহা থাকায় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার থমকে আছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেন রফিউর রহমান রাব্বি৷ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমানের পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
তনু হত্যা
চলতি বছরের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মৃতদেহ পাওয়ার পর দেশব্যাপী প্রতিবাদ উঠেছিল৷ দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি উঠেছিল৷ কিন্তু এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ তবে তদন্তকাজ চলছে৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনা
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এগারশ’র বেশি মানুষের প্রাণ যায়৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক ছিল৷ তিন বছরেরও বেশি সময় পর গত জুলাইতে এই ঘটনায় করা হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়৷ ঢাকার এক অনলাইন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ বছরে উল্লেখ্যযোগ্য শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৮টি৷ এর কোনোটিরই বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি৷ প্রতিবেদনটি পড়তে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নীচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ঘটনার দিনই তাঁর ভাই গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন৷ এই অভিনেতা খুন হওয়ার পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠলেও এখনও মামলার বিচার শুরু করা যায়নি৷ আরও তথ্য জানতে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা
২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় মারা যান সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ পাঁচজন৷ এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা – দু’টিই হবিগঞ্জে দায়ের হলেও পরে সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
হতাশ রামুর ক্ষতিগ্রস্তরা
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় কোরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে বৌদ্ধপল্লীতে হামলা চালিয়ে ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে একদল লোক৷ ঐ ঘটনার চার বছর পরও মামলা গতিশীল না হওয়ায় হাতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা৷ পিপি মমতাজ আহমদ সম্প্রতি বলেন, এই হামলার ঘটনায় দায়ের করা ১৯টি মামলায় ইতোমধ্যেই অভিযোগ গঠন করা হয়েছে৷ আরও তথ্য জানতে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
-
বিচার পাওয়ার আশা যেন দুরাশা
নারী নির্যাতনের মামলা ৫,০০৩টি, রায় ৮২০টির
২০১৫ সালে প্রকাশিত মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক জরিপ বলছে, গত নয় বছরে দেশের নয়টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২২,৩৮৬ জন নারী ধর্ষণসহ বিভিন্ন নির্যাতনের ঘটনায় চিকিৎসা নেন৷ এই ঘটনাগুলোর বিচারিক প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে এ সব ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ৫,০০৩টি৷ রায় ঘোষণা হয়েছে ৮২০টি, শাস্তি হয়েছে ১০১ জনের৷ শতকরা হিসাবে রায় ঘোষণার হার ৩.৬৬ এবং সাজা পাওয়ার হার ০.৪৫ শতাংশ৷
পাঠক নিজাম উদ্দিন প্রেম বিশ্বজিৎ খুনের এই রায় কীভাবে দেয়া হলো, তা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘ এটা কীভাবে ন্যায়বিচার হলো? যারা ‘ওপেনলি 'হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত, তাদের কীভাবে শাস্তি কম হয়? সবাই তো একই অপরাধে অপরাধী৷ তাহলে শাস্তি কম-বেশি হলো কেন? আদালত প্রমাণ চায়৷ কিন্তু এখন তো সব প্রমাণই বিচারকের সামনে৷ তাহলে বিচারক কীসের ভিত্তিতে এই রায় দিয়েছেন?''
নিজাম উদ্দিনের মতো প্রায় একই মত পোষণ করে মেহেদি আসিফ মন্তব্য করেছেন, ‘‘বিচারকগণ কি ঘটনার ভিডিও দেখেননি? কী দেখে আর কীসের তদন্তের ভিত্তিতে এই রায় হলো?''
তারিকুল আনিস অবশ্য মনে করেন, ‘‘বিচারকদের দক্ষতা ও সততা অনেক আগেই থেকে প্রশ্নবিদ্ধ৷ আমার জানা মতে বাদি ও বিবাদির বিচারকরা নিজেদের আয় বৃদ্ধির জন্য মামলা লম্বা সময় ধরে চালান৷ শুধু তাই না, ভুক্তভোগীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টাকা নেন৷''
খুবই হতাশ হয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘‘আমাদের দেশের আইন ও আইনবিদরা দেশের মানুষকে সঠিক বিচার ও নিরাপত্তা কবে দিতে পারবে?''
বিচারের রায় নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন পাঠক হাসান, তারেক আহমেদ, মো.আবদুল্লাহর মতো আরো অনেকে৷
আশরাফুল ইসলাম রাজুর কথায়, ‘‘আমি মনে করি পক্ষপাতদুষ্ট রায় হয়েছে৷ আসামীরা ক্ষমতাসীন দলের হওয়াতে ছাড় পেয়েছে৷ যেখানে খুনের প্রকাশ্য ভিডিও ছিল, তারপরও কীভাবে সেখানে এইরকম রায় হয়? ‘ভেরি স্ট্রেঞ্জ'!''
‘‘কোপাইছে চারজনে, মৃত্যুদণ্ড দুইজনের৷'' তন্ময় ইসলামের মন্তব্য৷
শাওন মাহমুদ বেপারিরও একই মত৷ ‘‘ক্যামেরার সামনে বিশ্বজিৎকে মেরেছে মোট ছ'জন আর ফাঁসির রায় দু'জনের কেন?''
‘‘দলীয় সরকার যে ন্যায়বিচার করবে না, তা একরকম নিশ্চিতই ছিল৷'' মন্তব্য আবুল হাসানের৷
তবে পাঠক সাগর শিল আর জসিম উদ্দিনের মতে, ‘‘দু'জনেরই আর বিচার হওয়ার দরকার কী? ওদেরও খালাস দিয়ে দিলেই হয়৷''
অনেকের মতো হতাশ আবদুল সামাদ, রজব আলী এবং হোসেন মামুনও৷ তাঁরা ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, একবারে তো আর সবাইকে মাফ করা যায় না৷ তাই দু'জনকে পরে মাফ করা হবে৷ তাঁরা নিশ্চিত যে, এই দু'জনও ছাড়া পেয়ে যাবে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমায়৷
ধ্রুব নিল খুব দুঃখ করে জানিয়েছেন, ‘‘একেই বলে অবিচার৷'' আর জিয়াউর রহমানের সোজা কথা, ‘‘এই বিচার মানি না৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ