1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিরোধীদের অপহরণ, রাজনীতির নয়া ট্রেন্ড?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী প্রার্থীদের অপহরণের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ অবশ্য অভিযোগ খারিজ করেছে ক্ষমতাসীন দল৷

https://p.dw.com/p/47eOa
Westbengalen Vorwürfe gegen der Regierung durch die Oppositionsparteien
ছবি: Payel Samanta/DW

রবিবার পশ্চিমবঙ্গে ১০৮টি পুরসভার নির্বাচন৷ প্রচার পর্ব শেষ হয়েছে শুক্রবার৷ স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশে বাধা থেকে ভয় দেখানো, এমন নানা অভিযোগ প্রতিবার সামনে আসে৷ তবে এবার নতুন অভিযোগ আসছে অপহরণের৷ বিজেপি-বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচনে হারের আশঙ্কা করে অনেক ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীদের তৃণমূল তুলে নিয়ে গিয়েছে৷ তৃণমূল বলছে, ভরাডুবির ভয়ে অজুহাত খাড়া করছে বিরোধীরা৷

বজবজ পুরসভার বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থী অঙ্কুর চক্রবর্তীকে ৯ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ সেদিনই ছিল মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল৷ বাম প্রার্থী বলেন, ‘‘আমি দলের কাজ সেরেই রাতে বাড়ি ফিরছিলাম৷ সেইসময় আমায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় ওরা৷ যাতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিই, সেজন্য চাপ দেয়৷ এর ফলে আমি মনোনয়ন জমা দিতে পারিনি৷''

অঙ্কুরের অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকেই৷ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের ১৩টি ওয়ার্ডে কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা৷ ফলে নির্বাচনের আগেই এই পুরবোর্ড তৃণমূলের দখলে চলে এসেছে৷

তৃণমূল রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করতে চাইছে: রঞ্জিত

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পুরসভায় ২০ নং ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থী উজ্জ্বলা সাউকে মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময় অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ৷ ঘণ্টাখানেক বাদে উজ্জ্বলা ফিরে এলেও আর প্রার্থী হতে চাননি৷ এক্ষেত্রেও অভিযোগ ছিল তৃণমূলের দিকে৷ ভোটের আগে শুধু নয়, ভোটের দিনও অপহরণের অভিযোগ উঠেছে৷ ১২ ফেব্রুয়ারি পুরভোটের দিন আসানসোলে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মধুসূদন দে-কে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ সব অভিযোগই খারিজ করেছে তৃণমূল৷

বিস্তর হইচই হয়েছে কলকাতা লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার ঘটনায়৷ ভাটপাড়া পুরসভার ৩৫ নং ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী রঞ্জিত মল্লিককে ১৬ ফেব্রুয়ারি অপহরণের অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে৷ পোস্টার লাগানোর সময় দুষ্কৃতিকারীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়৷ এই প্রার্থীকে এর আগেও বাড়ি থেকে তুলে অন্যত্র আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে৷ রঞ্জিত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে বিজেপির প্রার্থী থাকলে তৃণমূলের পক্ষে সেটা ভয়ের ব্যাপার৷ ১৬ তারিখ আমাকে অপহরণ করে আমার থেকে মুচলেকা নেয়া হয়েছে যে, তৃণমূলের হয়ে আমাকে প্রচার করতে হবে৷ এ রাজ্যে বিরোধীরা এমন অগণতান্ত্রিক পীড়নের শিকার৷''

এরপর রঞ্জিতকে ফের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় চারদিন আগে৷ গণপ্রহারের পাশাপাশি খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলে প্রার্থীর অভিযোগ৷ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘যাদের নামে আমি অভিযোগ করেছিলাম তাদের কাউকেই পুলিশ ধরেনি৷ অপরাধীরা খোলাখুলি ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ আমার কোনো নিরাপত্তা নেই৷ তৃণমূল রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করতে চাইছে৷''

রাজনীতি আর আদর্শের জায়গায় নেই: নীলাদ্রি

বিজেপির এই প্রার্থীর অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল শুধু বিরোধী প্রার্থী নয়, প্রার্থীর পরিবারের সদস্যদের উপরও চড়াও হচ্ছে৷ ব্যারাকপুরের বিজেপি নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণেই আমাদের প্রার্থীকে অপহরণ করা হয়েছিল৷ হুমকি দিলেও রঞ্জিত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি৷ তাই বারবার ওকে অপহরণের ছক করা হচ্ছে৷''

তৃণমূল এই অভিযোগকে বিরোধীদের পরিতাপ হিসেবেই দেখছে৷ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি আইনজীবী৷ রাজনৈতিক অপহরণ মামলাগুলিতে দেখেছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো সারবত্তা থাকে না৷ বিরোধীরা পুরসভা ভোটে সুবিধা করতে পারছে না৷ তাই অপহরণ, পোস্টার ছেঁড়া, মারধর ইত্যাদি অভিযোগ তুলে হেরে যাওয়ার একটা ডিফেন্স গড়ে তুলছে৷''

ভোটের হিসেব দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভা ভোটে বিজেপি ৯ শতাংশ ও বামেরা ১২ শতাংশ ভোট পেয়েছে৷ মানুষের সমর্থন পুরোটাই তৃণমূলের দিকে৷ তা হলে অপহরণ করতে যাবে কেন? হারার ভয়ে এ সব বিরোধীদের তৈরি গল্প৷''

নয়া প্রবণতা সুস্থ রাজনীতির বিরুদ্ধে, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজনীতি আর আদর্শের জায়গায় নেই, রোজগার সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই পুরসভার ভোটে নির্বাচিত হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ এর সঙ্গে রাজনীতির অপরাধীকরণ হয়েছে৷ এটা আগে ছিল না৷ পেশিশক্তি ও অর্থের জোরে অপরাধীরা যখন রাজনীতিতে আসছে, তারা প্রার্থীকে হারানোর জন্য অপহরণের মতো পদক্ষেপ নেবে, এটাই স্বাভাবিক৷'' 

১২.০২.২০২২ তারিখের ছবিঘরটি দেখুন:

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য