1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিরল আদিম অরণ্যে মূল্যবান গবেষণা

১৫ জুলাই ২০২০

বিশ্বের অন্য অনেক প্রান্তের তুলনায় ইউরোপে বনজঙ্গল বেশি চোখে পড়ে বটে, কিন্তু তার প্রায় সবটাই অর্থনৈতিক কারণে মানুষের সৃষ্টি৷ সামান্য কিছু আদিম অরণ্য থেকে শিক্ষা নিতে বিজ্ঞানীরা উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3fL8a
ইউরোপের সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর ও বড় জঙ্গলে ভরা বোইয়া মিকা উপত্যকা ছবি: EuroNatur/Matthias Schickhofer

রোমানিয়ার সিবিউ শহর থেকে গাড়িতে ঘণ্টাতিনেক দূরে বোইয়া মিকা উপত্যকা৷ সেখানে এখনো পর্যন্ত সাধারণ মানুষের পা পড়ে নি৷ একদল বিজ্ঞানী ইউরোপের সম্ভবত সবচেয়ে সুন্দর ও বড় জঙ্গলে ভরা এই উপত্যকায় যাতায়াত করেন৷ সেখানে গবেষকদের জন্য এমন এক গুপ্তধন লুকিয়ে রয়েছে, যা দামী পাথরের মতো বিরল ও দূরের গ্রহের মতো রহস্যময়৷ দলের সদস্য মার্টিন মিকোলাশ বলেন, ‘‘বোইয়া মিকা সত্যি অনবদ্য, কারণ এটা ইউরোপের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের শেষ উপত্যাকাগুলির অন্যতম যেখানে মানুষের তৈরি কোনো পথ নেই, যা সত্যিই বেশ দুর্গম৷’’

প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত এই উপত্যকায় আসছেন৷ কারণ দুর্গম এই জায়গাটি গবেষণার জন্য খুবই উপযুক্ত৷ ইউরোপে প্রায় ১,০০০ হেক্টর জুড়ে উপত্যকা থেকে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত এমন অক্ষত প্রকৃতি সত্যি বিরল৷

বর্তমানে ইউরোপের প্রায় ৯৫ শতাংশ জঙ্গল বাণিজ্যিক কারণে কৃত্রিমভাবে গড়ে তোলা হয়েছে৷ সে কারণে প্রাকৃতিক অরণ্যের চরিত্র বুঝতে হলে বোইয়া মিকা উপত্যকার মতো জায়গায় আসতে হবে৷ শুধু এমন জায়গায় এলেই জঙ্গলের ইকোসিস্টেমের আদি ও অকৃত্রিম রূপ দেখা যায়৷ মার্টিন মিকোলাশ মনে করেন, ‘‘এমন জায়গার অস্তিত্ব সত্যি খুব জরুরি৷ বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা কীভাবে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে, শুধু এমন উপত্যকায় আমরা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারি৷’’

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে পাহাড় চড়ার পর অবশেষে ক্যাম্পে পৌঁছানো গেল৷ এক সপ্তাহ ধরে প্রাকৃতিক জঙ্গলের রহস্য ভেদ করতে বিজ্ঞানীদের দল সেখান থেকে আশেপাশের পাহাড় ঘুরে দেখবেন৷ পরের দিন সকালে অসংখ্য পরিমাপ যন্ত্র নিয়ে গবেষকরা জঙ্গলের আরও গভীরে প্রবেশ করলেন৷ ঘন জঙ্গল ভেদ করে এগিয়ে চলা সত্যি বেশ কঠিন৷ তাছাড়া জঙ্গলের মধ্যে তাঁরা মোটেই একা নন৷ মার্টিন মিকোলাশ জানালেন, ‘‘এখানে পাতার উপর ভালুকের পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ দেখতে পাচ্ছেন, একই রেখায় ছাপ এগিয়ে গেছে৷ এত বড় পা অন্য কোনো প্রাণীর হতে পারে না৷ ভালুকটা সম্ভবত পাতার নীচে পোকার খোঁজ করছিল৷’’

বোইয়া মিকা উপত্যকায় আনুমানিক ১৫টি ভালুক বসবাস করে৷ গবেষকদল অবশ্য তাতে দমে না গিয়ে কাজ চালিয়ে গেছেন৷ অর্থাৎ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গোটা জঙ্গল পরিমাপ করেছেন৷ তাঁরা এভাবে গাছপালার সংখ্যা, বয়স, উচ্চতা ও জাত লিখে রাখেন৷ তাঁরা মরা গাছের গুঁড়ির ঘনত্ব ও বণ্টন ভালোভাবে হিসাব করেন৷ তাছাড়া অনেক গাছের ইতিহাস জানতে সেগুলির তাঁরা নমুনাও সংগ্রহ করেছেন৷

প্রায় ১০ বছর আগে জটিল এই গবেষণা প্রকল্প শুরু হয়েছিল৷ ইউরোপের হাতে গোনা অবশিষ্ট আদিম অরণ্যগুলিতে বিজ্ঞানীরা বাস্কেটবল মাঠের মাপের কিছু গোল জায়গা বেছে নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ এভাবে প্রায় এক হাজার প্লট চিহ্নিত করা হয়েছে৷ এই গোষ্ঠী প্রায় ৪০,০০০ গাছের নমুনা সংগ্রহ করেছে৷ ফলে আদিম অরণ্য সম্পর্কে ইউরোপের সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডার সৃষ্টি হয়েছে৷ মার্টিন মিকোলাশ বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমরা প্রায় তিন মাস জঙ্গলেই কাটাই৷ দলে অনেক মানুষ থাকে৷ এই মুহূর্তে ফাগারাশ পাহাড়ে আমাদের দলে ২৫ জন রয়েছে৷ সব মিলিয়ে তিনটি দল বিভিন্ন উপত্যকায় ছড়িয়ে রয়েছে৷’’

একটি প্রশ্ন মার্টিন মিকোলাশ-কে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে৷ আদিম অরণ্য কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাচ্ছে? ভবিষ্যতে এমন জঙ্গলের অস্তিত্ব কি বিপন্ন হতে পারে? তাঁর মতে, ‘‘জটিল বিষয় হলো, তাপমাত্রার চরম ফারাক বেড়েই চলেছে৷ ফলে প্রকৃতি অস্থির হয়ে উঠছে৷ গাছ উপড়ে দেওয়া ঝড়, খরা, দাবানল, পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়ছে৷’’

এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়ে চলার ফলে কি আদিম অরণ্য হুমকির মুখে পড়ছে? সেই প্রশ্নের জবাব পেতে গবেষকরা সবার আগে অতীতে ঢুঁ মারতে চান৷ বোইয়া মিকা অরণ্য গত কয়েক শতাব্দীতে কত ঘনঘন পোকার উপদ্রব বা খরার কবলে পড়েছে? এবং এই অরণ্য কত দ্রুত আবার সবকিছু সামলে নিয়েছে? এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব পাওয়া গেছে৷ গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে অতীতেও এই অরণ্যে একাধিক বিপর্যয় ঘটেছে৷ তবে তা সত্ত্বেও কোনো স্থায়ী ক্ষতি হয় নি৷

মাক্স লেবসানফ্ট/এসবি