1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিমানবন্দরে চুরির ঘটনা থামছে না কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ চুরি, লাগেজ কেটে মূল্যবান মালামাল চুরি যেন প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ অনেকেই আর ফেরত পাচ্ছেন না নিজেদের মালামাল৷ এর ফলে ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের৷

https://p.dw.com/p/4HIXX
Bangladesch |  Chaos am Flughafen Dhaka
ছবি: bdnews24.com

বিমানবন্দরে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের মালামাল চুরির ঘটনার বিষয়টি সম্প্রতি সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া খেলোয়াড়দের ডলার চুরি হওয়ার পর আবারো সামনে এসেছে৷ মারামাল চুরির বিষয়ে অনেক যাত্রী বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অভিযোগ করে থাকেন৷

তবে বন্দরের নির্বাহী পরিচালকের দাবি, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ চুরির ঘটনা এক প্রকার অসম্ভব৷ তার মতে, যাত্রীরা যে বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেন সেখান থেকে এমন ঘটনা ঘটতে পারে৷    

থামছে না চুরির ঘটনা

গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানে নেপাল থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন ফুটবল দলের সদস্যরা৷ বিমানবন্দরে নামার পর বাংলাদেশে দলের ফুটবলার কৃষ্ণা রানী সরকার দেখতে পাসন তার লাগেজ ভাঙা৷ ডলার, টাকা ও উপহারসামগ্রী উধাও৷

যাত্রীরা প্রতিদিনই অভিযোগ নিয়ে আসেন: মোহাম্মদ জিয়াউল হক

বাফুফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৃষ্ণা রানী সরকারের ব্যাগ থেকে ৫০০ ডলার এবং ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে৷ এছাড়া সানজিদা আক্তারের ব্যাগ থেকে ৫০০ ডলার ও শামসুন্নাহারের ব্যাগ থেকে হারিয়েছে ৪০০ ডলার৷

ঢাকার বিমাবন্দরে নামার পর লাগেজ না যাওয়া কিংবা লাগেজের ভেতরের মালামাল বুঝে না পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়৷ সংবাদমাধ্যমে এরকম প্রায়ই যাদের লাগেজ চুরি হয় তাদের ভোগান্তির খবর আসে৷

সৌদি প্রবাসী কর্মী এসএম ইসহাক গত ৮ জুলাই তার ৩টি লাগেজের মধ্যে একটি কাটা দেখতে পান৷ এর ভেতরে থাকা অনেক জিনিস আর পাননি তিনি৷

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাঈদ-সেঁজুতি দম্পতি গত ১০ জানুয়ারি বিমান বন্দরে তাদের লাগেজ খোয়ান৷ এখনো ফিরে পাননি৷

সৌদি প্রবাসী শ্যামল আহমেদ গত বছরের নভেম্বরে দেশে ফেরার সময় বিমান বন্দরে তার লাগেজ খোয়া যায়৷ কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার মালামাল ফেরত পাননি৷

বিমান বন্দরে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে যার নাম ‘ম্যাজিষ্ট্রেটস, অল এয়াপোর্ট গ্রুপ'৷ সেখানেও প্রচুর অভিযোগ আসে বলে জানা যায়৷

আর গত মাসে সিভিল অ্যাভিয়েশেন এ নিয়ে একটি গণশুনানির আয়োজন করে৷ সেখানেও তারা প্রচুর অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানা গেছে৷

লাগেজ গায়েব বা মালামাল চুরিতে বিমানের কর্মীরা জড়িত৷ এর প্রমাণও মিলেছে৷ পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এ চক্রে জড়িত ২০-২৫ জন একাধিকবার সিআইডি এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের (এপিবিএন) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ জানা গেছে, চাকরিচ্যুত হওয়ার পর তাদের কেউ কেউ আবার আইনি কৌশলে বিমানবন্দরে ফিরেছেন৷

বিমানবন্দর থেকে এয়ার ট্যাক্সিতে করে গন্তব্যে!

এদিকে গত এক বছরে বিমান এবং সিাভিল অ্যাভিয়েশনের বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে৷ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেও চুরি থামছে না৷

দায়িত্বে কারা আছেন?

নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দরে দায়দায়িত্ব মূলত তিনটি বিভাগের৷ সিভিল অ্যাভিয়েশন, এয়ারলাইন্স এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের (এপিবিএন)৷

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজেদেরসহ সব বিদেশি এয়ার লাইন্স-এর গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-এর দায়িত্ব পালন করে৷

সিভিল অ্যাভিয়েশেন সার্বিক দায়িত্বে আছে৷ আর মটিরিং করে এপিবিএন৷ বিমান অবতরণের পর মালামাল কনভেয়ার বেল্টে নিয়ে আসার কাজ করে বিমানের হ্যান্ডেলাররা৷

তবে প্রতিটি পর্যায়ে মনিটরিং-এর জন্য সঙ্গে এপিবিএন সদস্যরা থাকেন৷ আর সবখানেই রয়েছে সিসি ক্যামেরা৷ এদিকে বিমানন্দরে হারিয়ে যাওয়া মালামাল উদ্ধাপরে সহযোগিতার জন্য লস্ট এন্ড ফাউন্ড একটি বিভাগ রয়েছে৷

একাধিক সূত্র জানায় কর্মচারীদের মধ্যেই বিমানবন্দরে একটি চোর চক্র আছে৷ তারা বেশ শক্তিশালী৷ বিমান বন্দর সূত্র জানায়, প্রতিদিন সেখানকার লস্ট এন্ড ফাউন্ড বিভাগে একশ'রও বেশি অভিযোগ আসে৷ এগুলোর ৯০ ভাগেরও বেশি চুরির ঘটনা৷  তবে তার একটি অংশ পরে পাওয়া যায়৷ নিয়ম হলো পাওয়া না গেলে ২০ কেজি মালামালের জন্য প্রতি কেজিতে ২০ ডলার করে ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়৷ আর তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ ডলার ক্ষতিপুরণ দেয়ার নিয়ম আছে৷ তবে এই ক্ষতিপুরণ পাওয়াও বিশাল এক ঝক্কির ব্যাপার৷

এদিকে কোনো যাত্রী যদি হারানো মালামালের জন্য মামলা করতে চান তাহলে তাকে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় গিয়ে মামলা করতে হয়৷ ফলে অনেক যাত্রীই এ বিষয়ে সাধারণ অভিযোগ জানানোর পর আর থানা পুলিশ করতে যান না হয়রানির ভয়ে৷

শুধু তাই নয়, চুরির ঘটনা ঘটার পর দায়িত্ব নিয়ে শুরু হয় টানা-হেঁচড়া৷ যাত্রীরা ঠিক বুঝতে পারেন না কার কাছে গেলে প্রতিকার পাবেন৷

কর্তৃপক্ষ যা বলছে

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, ‘‘যাত্রীরা প্রতিদিনই লাগেজ চুরি বা কাটার অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন৷ তবে তারা সংখ্যায় কম৷ আমি ঠিক জানি না তারা বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে না গিয়ে কেন আমাদের কাছে আসেন৷ হয়তো তারা ওখানে সেবাটা ঠিক মত পান না৷’’

আমি দায়িত্ব নেয়ার পর লিখিত অভিযোগ পাইনি: মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আসলে আমরা তো আর তাদের ফিরিয়ে দিতে পারি না৷ আমরা সিভিল অ্যাভিয়েশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করি৷ আর আমরাও তদন্ত করি৷ সত্যতা পেলে সেই অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করি৷’’

তবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমি সাড়ে পাঁচ মাস আগে দায়িত্ব নেয়ার পর আমাদের বিমান বন্দর থেকে কোনো লাগেজ চুরি বা কাটার কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি৷ আর নারী ফুটবলাদের ঘটনা আমাদের এখান থেকে হয়নি৷ আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দিয়ে তা নিশ্চিত হয়েছি৷’’

তার দাবী, ‘‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সব খানেই সিসি ক্যামেরা ও মনিটরিং আছে৷ এখানে এই বিষয়গুলো এখন বলতে গেলে অসম্ভব৷''

তিনি বলেন, ‘‘যা হয় তা হলো কোনো যাত্রী যে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাই করেন সেখান থেকে চুরি হতে পারে৷ আবার কোনো যাত্রীর লাগেজে কন্ট্রাব্যান্ড কোনো আইটেম থাকতে পারে৷ তখন সেটাতো তালা মারা থাকলে ওই বিমানবন্দরে কেটে চেক করবে৷ আবার বক্স করা থাকলে তা ভাঙ্গা হয়৷’’

তার কথা, ‘‘তারপরও আমাদের কাছে তো অভিযোগ করতে হবে৷ অভিযোগ না করলে আমরা ব্যবস্থা নেব কীভাবে? আমার আহ্বান যাত্রীদের কাছে তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে যেন আমাদের কাছে করেন৷ আমরা এটার একটা সমাধান করতে চাই৷ কিন্তু সেটা না করে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পোস্ট দিয়ে তাদের লাগেজ চুরি বা কাটার কথা জানান৷’’

এ বিষয়ে বিমানবন্দরের লস্ট এন্ড ফাউন্ড বিভাগের ম্যানেজার আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান