বিপদ মাথায় নিয়ে বসবাস
পৃথিবীর কোনো অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ, কোথাও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বেশি, কোথায়ও পাহাড় ধস হয়, কোথাও ঘূর্ণিঝড় বেশি আঘাত হানে৷ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়৷
ভূমিকম্প
পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় সিসমিক বেল্টের মধ্যে ‘অ্যালপাইড বেল্ট’ দ্বিতীয়৷ এটি হিমালয়ের মধ্য দিয়ে জাভা থেকে সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত৷ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের ১৭ শতাংশ এই অঞ্চলে হয়েছে৷ যার মধ্যে অন্যতম ২০১৫ সালে নেপালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার (প্রায় নয় হাজার মানুষ মারা যায়) এবং ২০০৫ সালে পাকিস্তানে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার (৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু) ভূমিকম্প হয়৷
সুনামি
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট আরেকটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সুনামি৷ ২০১১ সালে উত্তরপূর্ব জাপানে সমুদ্রের তলদেশে ৯ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে হওয়া সুনামিতে প্রায় ১৬ হাজার মানুষ মারা যায়৷ তার আগে ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে সৃষ্ট সুনামিতে দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
আগ্নেয়গিরি: রিং অব ফায়ার
প্রশান্ত মহাসাগর ঘিরে প্রায় ২৫ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চলকে রিং অব ফায়ার বলে৷ ৭৫ শতাংশ সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এ অঞ্চলে অবস্থিত৷ যেগুলোতে মাঝে মধ্যেই অগ্নুৎপাত হয়৷ এই অঞ্চলে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার সুমবাওয়া দ্বীপে মাউন্ট তামবোরাতে ১৮১৫ সালে ভয়াবহ অগ্নুৎপাত বৈশ্বিক তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল৷
ঘূর্ণিঝড়ের চলার পথে
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় নিয়মিত আঘাত হানে৷ সাধারণত জুন থেকে নভেম্বরে ওই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে৷ তবে সবচেয়ে বিপদজনক সময় জুন থেকে অক্টোবর৷ ওই অঞ্চলে মার্কিন সংস্থা ‘ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যামিনিস্ট্রেশন’ (এনওএএ) এর উদ্যোগে ‘হ্যারিকেন প্রিপেয়াডনেস উইক’ পালন করা হয়৷ যেখানে স্থানীয়রা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রশিক্ষণ পান৷
ভূমিধস
পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে অতি বৃষ্টিতে প্রায়ই ভূমিধস ঘটনা ঘটে৷ ২০১৭ সালের ১১ জুন ভারি বর্ষণে বাংলাদেশের রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়৷ নিহতরা নিম্নআয়ের মানুষ এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বানিয়ে বসবাস করতো৷ বর্ষা মৌসুমে প্রশাসন থেকে সতর্ক করার পরও তারা নিরাপদ স্থানে সরে যায়নি৷
কেন এসব অঞ্চলে বসবাস করে মানুষ
এসব অঞ্চলে বসবাস করা বেশিরভাগ মানুষ সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তেমন সচেতন নন৷ এছাড়া নিয়মিত ছোট ছোট দুর্যোগ ঘটলেও বড় আঘাত পরপর আসে না৷ তাই মানুষ নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ পায় না৷ শেকড়ের টানেও মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই এসব অঞ্চলে বাস করে যাচ্ছে৷