1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিনে স্বদেশী ভাষা, পুরে কি আশা?

প্রভাষ আমিন
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বছর দশেক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে এক কাজিনের বাসায় বেড়াতে গিয়ে মজার দৃশ্য দেখেছিলাম৷ সেই কাজিনের দুটি মেয়ে আছে৷ তাদের দেখাশোনার জন্য বাসায় একজন বয়স্ক নারী ছিলেন৷

https://p.dw.com/p/47E1O
Bangladesch Dhaka Amar Ekushey Buchmesse 2022
ছবি: Mortuza Rashed/DW

কিন্তু সমস্যা হলো, সেই নারী স্প্যানিশ ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বোঝেন না৷ আবার আমার কাজিনের বাসায় কেউ স্প্যানিশ ভাষা বোঝেন না৷ ভাষার এই দূরত্ব নিয়েই চলছিল তাদের প্রতিদিনের কাজ৷ কীভাবে? আমার কাজিন মোবাইলে ইংরেজিতে তার কথা লিখতেন৷ তারপর গুগল ট্রান্সলেটরে সেটি স্প্যানিশে অনুবাদ করে দিতো৷ এভাবেই তাদের যোগাযোগ৷ জরুরি কাজ হয়তো চলছিল৷ কিন্তু তাতে তাদের মধ্যে কোনো কার্যকর যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি৷ কারণ গুগল ট্রান্সলেটর যে হাস্যকর সব অনুবাদ করে তার অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই সবারই কমবেশি আছে৷ আর গুগল ট্রান্সলেটরের দোষই বা দেই কেন, যুগ যুগ এক ভাষার সাহিত্য আরেক ভাষায় অনুদিত হচ্ছে; তাতে কি কখনো মূল সাহিত্যের রসটা পাওয়া যায়?

মূক ও বধিররা ইশারা ভাষায় কথা বলে বটে৷ কিন্তু মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ হয় ভাষায়৷ কে কোন ভাষায় কথা বলবেন, তা নির্ধারিত হয়; তিনি কোথায় জন্মেছেন, তার জাতীয়তা কী তার ওপর৷ আমরা কথায় কথায় বলি না- মাতৃভাষা৷ আসলে আমার মা যে ভাষায় কথা বলেন, আমি সে ভাষায়ই কথা বলবো৷ এটাই আমার মাতৃভাষা৷ বাংলাদেশে জন্ম নিলেও একজন চাকমা কিন্তু তার ভাষায় কথা বলতে শিখবে, বলবে৷ একটা কৌতুক বলি৷ সিলেটের এক লোক গেছে লন্ডনে৷ ফিরে এসে সবাইকে বলছে, কী কী দেখে এলো৷ তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, কী তাজ্জব, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও ফরফর করে ইংরেজি বলছে৷ এটা তার কাছে বিস্ময়কর লেগেছে, কারণ তিনি ইংরেজি জানেন না৷ আবার যুক্তরাজ্যের শিশুদের কাছে ইংরেজি তার মায়ের ভাষা৷ ভাষা কিন্তু জ্ঞান নয়, জ্ঞান অর্জনের একটি বাহন মাত্র৷ একটি ভাষা কাজ চালানোর মত করে শিখতে মাস ছয়েক লাগে৷ আবার সারাজীবন তপস্যা করেও অনেকে নিজের মায়ের ভাষার আসল রূপের দেখা পান না৷

বিশ্বে অনেক ভাষা আছে, যার অনেকগুলো আবার হারিয়েও গেছে৷ এমনকি বাংলাদেশেও বাংলা ছাড়া আরো অনেক ভাষা আছে, যার অনেকগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তপ্রায়৷ সবার কাছেই তার নিজের ভাষা সবচেয়ে পছন্দের৷ আমার কাছে যেমন বাংলা৷ আমি ভাষাবিদ নই৷ তাই নিশ্চিত করে বলতে পারবো না৷ তবে বাংলার মত এমন চমৎকার, ছন্দময় ভাষা খুব বেশি নেই৷ অনেক বিদেশি বাংলা ভাষাকে ভালোবেসেছেন৷ সম্প্রতি প্রয়াত কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর বাংলাভাষী নন৷ কিন্তু বাংলার প্রতি তার ভালোবাসার প্রকাশে ছিলেন অকৃপণ৷ রোমান হরফে বাংলা লিখে বাংলা গান গেয়েছেন তিনি৷ কিন্তু শুনে বোঝার উপায় নেই, লতা বাংলাভাষী নন৷ পড়তে না পারলেও বা বুঝতে না পারলেও লতার কানে বাংলা সুধার মতই লাগতো৷ রবীন্দ্রনাথের লেখা আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে, ‘মা, তোর   মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো’ কিন্তু নিছক গানের কথা নয়, আবেগের কথা নয়; এটাই সত্যি৷

বাংলা ভাষা আরেক কারণে সবার আগে৷ বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো জাতি তার ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দেয়নি৷ ৭০ বছর আগে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা্য় মানুষ পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিলেও ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা আসলে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা৷ তাই তো ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা৷ বাংলা এবং বাঙালি আজ সবাইকে পথ দেখিয়েছে৷

বাংলা শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাষা নয়৷ বিশ্বের অন্তত ৩০ কোটি বাঙালি বাংলা ভাষায় কথা বলেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, বিহার, উড়িষ্যাসহ বিভিন্ন রাজ্যে বালাভাষী মানুষ আছে৷ আর অভিবাসনসূত্রে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই খুঁজলে কম বেশি বাংলাভাষী মানুষ পাওয়া যাবে৷ তারপরও নেতৃত্বটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশেরই হাতে৷ কারণ বাংলা ভাষাভিত্তিক জাতির আর কোনো স্বাধীন দেশ নেই৷ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী-সাহিত্যিকেরাও বলেন বাংলা ভাষার ভবিষ্যত বাংলাদেশেই৷ কিন্তু এত যে রক্ত, এত ত্যাগ, এত আন্দোলন, এত আবেগ, এত ভালোবাসা, এত পথ দেখানো, এত দায়িত্ব; সেই বাংলা ভাষার জন্য গত ৭০ বছরে, নিদেনপক্ষে স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা কী করেছি? ফেব্রুয়ারি এলেই সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন নিয়ে আমরা অনেক হই-হল্লা করি বটে৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না৷ সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন মানে কিন্তু এই নয়, অন্য সব ভাষাকে আমরা ঝেটিয়ে বিদায় করে দেবো৷ বিশ্ব এখন একটা গ্রামে পরিণত হয়েছে৷ সেই গ্রামে বাস করতে হলে, প্রয়োজনে আমাদের অন্য ভাষাও শিখতে হবে৷ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা্, চাকরির প্রয়োজনে আমাদের অন্য ভাষা শিখতে হতে পারে৷ কেউ ইংরেজি শিখবে, কেউ ফ্রেঞ্চ, কেউ চায়নিজ, কেউ জাপানিজ; যার যেটা লাগে৷ কেউ চাইলে একাধিক বিদেশি ভাষাও শিখতে পারেন৷ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বা সৈয়দ মুজতবা আলীর মত বহু ভাষাবিদ বাঙালিকে নিয়েও তো আমরা গর্ব করি৷ আগেই যেমন বলেছি, একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন কিন্তু শুধু বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন নয়৷ এটি সকল মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন৷ যতই বিদেশি ভাষা শিখি আর না শিখি; আগে তো বাংলা ভাষাটা শিখতে হবে ভালো করে, বাংলাকে ভালোবাসতে হবে৷ রবীন্দ্রনাথ যেমন বলে গেছেন, ‘আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, তারপর ইংরেজি শিক্ষার পত্তন৷’ কিন্তু আমাদের সেই গাঁথুনিটাই পোক্ত হয় না, তাই আমরা বারবার পিছিয়ে যাই৷ বছর বছর আমরা বলবো, লিখবো; কিন্তু সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন আদৌ কখনো হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে৷ সন্দেহের কারণ হলো আমাদের হীনমন্যতা৷ ভিনদেশি কারো সাথে দেখা হলেই আমরা অস্থির হয়ে যাই, তার ভাষায় কথা বলতে৷ ভারতীয় কারো সাথে দেখা হলে ভুল হিন্দিতে, পাকিস্তানের কারো সাথে দেখা হলে ভুল উর্দুতে কথা বলার চেষ্টা করি৷ ইংরেজির কথা না হয় নাই বললাম৷ কিন্তু যার সাথে কথা বলছি, তিনি কি কখনো বাংলা বলার চেষ্টা করেন? এখানে আসলে দুই ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের স্বার্থটা গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা তার ভাষায় কথা বলে শুরুতেই নিজেদের কম গুরুত্বপূর্ণ করে ফেলি৷ চীনের বেশির ভাগ মানুষই নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা জানেন না, ইংরেজিও না৷ তাতে কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির নেতৃত্ব দিতে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না৷ ব্যবসার দোহাই দিয়ে তাদের ইংরেজি শিখতে হচ্ছে না৷ বরং বাংলাদেশের মানুষ এখন ব্যবসার স্বার্থে চীনের ভাষা শিখছেন৷

এই যে আমাদের মাতৃভাষার গাঁথুনিটা শক্ত নয়, এর দায় কিন্তু পুরোটাই আমাদের৷ বাংলাদেশের মত এমন বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোথাও নেই৷ এখানে বাংলা ভার্সন আছে, ইংরেজি ভার্সন আছে, ইংরেজি মিডিয়াম আছে, আলিয়া মাদ্রাসা আছে, কওমি মাদ্রাসা আছে৷ এই নানামুখী শিক্ষা ব্যবস্থার স্রোত যখন উচ্চশিক্ষায় গিয়ে মেশে, তখন প্যাঁচ লেগে যায়৷ সন্তান কোনোরকমে স্কুল-কলেজ শেষ করেই উচ্চশিক্ষার নামে বিদেশে চলে যাবে, এটাই আমাদের গোপন লক্ষ্য৷ তাই ইংরেজি মিডিয়ামের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত৷ আমরা মুখে গাই ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ আর সন্তানদের চড়া দাম দিয়ে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াই৷ ‘আমার সন্তানের বাংলাটা ঠিক আসে না, ইংরেজিকে ফ্লুয়েন্ট’ এটা বলার সময় আমাদের চেহারায় গর্ব ফুটে ওঠে৷ কিন্তু এটা যে গর্ব নয়, লজ্জার সেটা বোঝার মত জ্ঞানও আমাদের নেই৷ অথচ আমরা যদি বলতে পারতাম, ‘আমার ছেলে চমৎকার বাংলা বলে, ইংরেজিটাও ভালো বলে’ তাহলে সেটা হতো সত্যিকারের শিক্ষা৷

শুরুতেই যে জট লাগানো বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, তার প্রভাব পরে পরবর্তীতে৷ শিক্ষা ব্যবস্থার দূরবস্থা বোঝাতে আমরা বলি, ‘অমুক শুদ্ধ করে তিন লাইন ইংরেজি লিখতে পারে না’৷ সেই অমুক কিন্তু শুদ্ধ করে তিন লাইন বাংলাও লিখতে পারেন না৷ ভুল বানান আর ভুল বাক্যের ছড়াছড়ি সর্বত্র৷ উচ্চ আদালতে যে ইংরেজিতে রায় লেখা হয়, সেটা কাদের জন্য? আমাদের আইনজীবীরা, বিচারকেরা কি বাংলায় লিখতে পারেন না?

বাংলা নিয়ে যে আমাদের এত গর্ব, সেই বাংলাকে কম্পিউটারে সর্বজনীন করতে এক মেডিকেল ছাত্রের ‘অভ্র’ কি-বোর্ড আবিষ্কার পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ কিন্তু এখনও আমরা একটা ডিজিটাল ডিকশনারি বানাতে পারিনি৷ আপনি ইন্টারনেটে একটি ইংরেজি অক্ষর লিখলেই সাথে সাথে অনেকগুলো শব্দের পরামর্শ চলে আসবে৷ ভুল বানান লিখলে কম্পিউটার সেটা শুধরে দেবে৷ কিন্তু বাংলা লিখতে হবে আপনাকে নিজের মত৷ মেডিকেল শিক্ষার্থী কি-বোর্ড বানিয়েছে, কিন্তু তেমন কেউ তো আরডিজিটাল ডিকশনারি বানাবেন না৷ সেটা করতে হবে বাংলা একাডেমিকেই৷

প্রভাষ আমিন, সাংবাদিক ও লেখক
প্রভাষ আমিন, সাংবাদিক ও লেখকছবি: DW

অনেকেই অভিযোগ করেন, বাংলা খুব জটিল ভাষা৷ বাংলায় তিনটা ‘র’, ‘ড়’, ‘ঢ়’ আছে; তিনটা ‘স’, ‘শ’, ‘ষ’ আছে; তিনটা ‘জ’, ‘ঝ’, ‘য’ আছে; দুইটা ‘ন’, ‘ণ’ আছে৷ উচ্চারণ কাছাকাছি হলেও প্রত্যেকটি অক্ষর দিয়ে আলাদা আলাদা শব্দ হয়৷ ‘নারী’ আর ‘নাড়ি’র মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক৷ মানুষ ঈদের সময় নাড়ির টানে বাড়ি যায়, নারীর টানে নয়৷ বাংলা একাডেমি কদিন আগে ‘ঈদ’কে ইদ বানানোর অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে৷ ‘ঈদ’ দেখলেই হৃদয়ে আনেন্দের যে দোলা লাগে, কল্পচোখে দেখি বাঁকা চাঁদ; ‘ইদ’এ তা পাই না৷ ‘আষাঢ়’ লিখলে কল্পনায় যে ছবি ভাসে, কেউ ‘আসার' লিখলে তা কখনোই পাওয়া যাবে না৷ এই ছোট্ট ছোট্ট কাজই বাংলা ভাষার সৌন্দর্য্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ৷ একজন ভালো আবৃত্তিকার যখন উচ্চারণ করবেন, ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে…’ তখন আপনার কল্পনার ঘোড়া আপনাকে অনেকদূর নিয়ে যাবে৷

ফেব্রুয়ারি, মার্চ আর ডিসেম্বরে, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গেয়ে কেঁদে বুক ভাসানোর নাম দেশপ্রেম নয়৷ বাংলাকে সত্যিকারের মর্যাদার আসনে বসানোটা দেশপ্রেম৷ তারচেয়ে বড় কথা হলো, নিজেদের আরো যোগ্য করে তোলা৷ বাংলাদেশের মানুষ যেমন ব্যবসার স্বার্থে চায়নিজ ভাষা শিখছে৷ তেমনি আমরা যদি নিজেদের তেমন যোগ্য করে তুলতে পারতাম, যে অন্য দেশের মানুষ তাদের স্বার্থেই বাংলা শিখে আমাদের কাছে আসবে৷ কিন্তু আমরাই যদি হীনমন্যতায় কুকড়ে গিয়ে গর্ব করে বলি, ‘আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’, তাহলে কার ঠেকা পরেছে বাংলাকে মর্যাদা দেয়ার৷

আমি ভাষাবিদ নই, বহু ভাষাবিদ তো নয়ই৷ খলবলিয়ে বাংলায় কথা না বললে আমার মন ভরে না৷ প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় আমি বলতে চাই, ‘আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে/করি বাংলায় হাহাকার/আমি সব দেখে শুনে খেপে গিয়ে/করি বাংলায় চিৎকার…৷’

ভাষা একটি প্রবহমান বিষয়৷ গ্রহণ-বর্জনেই এগিয়ে যায় ভাষা৷ অনেক বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় ঢুকে গেছে সাবলিলভাবে৷ ভাষার দরজা বন্ধ করাও যেমন যাবে না, আবার একেবারে অর্গল খুলে দিয়ে এফএম রেডিওর আরজে'দের হাতে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার অধিকারও দেয়া যাবে না৷ হাজার বছর আগের ‘চর্যাপদ’ও বাংলায় লেখা; আবার হেলাল হাফিজের ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ও বাংলায় লেখা৷ কিন্তু হাজার বছরে বাংলা ভাষা বদলে গেছে অনেক৷ এই ‘জলে’ আর ‘জ্বলে’র মধ্যে যে কাব্যিক মোচড়, এটাই বাংলার সৌন্দর্য্য৷

রামনিধি গুপ্তের জিজ্ঞাসা দিয়েই শেষ করি লেখা-

‘নানান দেশের নানান ভাষা৷

বিনে স্বদেশী ভাষা,

পুরে কি আশা?’