বিধিনিষেধ তুলে দিতেই পুরোনো চেহারায় ঢাকা
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের জারি করা কঠোর লকডাউন ১১ আগস্ট তুলে নেওয়ার পর অনেকটাই চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানী ঢাকা। ১৯ দিনের লকডাউন শেষে স্বাভাবিক জীবনের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার চিত্র দেখে নেওয়া যাক ছবিঘরে।
চিরচেনা জ্যাম
কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে অফিস শুরুর সময়েএয়ারপোর্টমুখী রাস্তায় সেই চিরচেনা জ্যাম। লকডাউন শেষে রাস্তায় বের হওয়ার পর অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে উত্তরা যাচ্ছেন এমন এক যাত্রী বলেন, “এতদিন বের হইসি, কিন্তু জ্যাম ছিল না। গতকাল থেকে প্রচুর জ্যাম। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তাতেই বসে থাকতে হচ্ছে।“
ফুটপাথ জমে উঠছে
মিরপুর-১ নম্বর গোল চক্করের ফুটপাথের ফলের দোকানসহ সব দোকানে লোকসমাগম বেড়েছে। লকডাউনের পর ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে সগির মিয়া নামের একজন হকার বলেন, “যদি সরকার আর লকডাউন না দেয়, তাইলে খায়া পইরা কোনোমতে বাঁচন যাইব। মানুষের জীবনের লগে জীবিকাও বাঁচানের দরকার আছে।“
কাঁচাবাজারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
ঢাকার অন্যতম প্রধান পাইকারি ও কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে ভোরবেলা গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও মুখেই মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে মোসলেম উদ্দিন নামের একজন সবজি বিক্রেতা বলেন, “এই খাটাখাটনির মধ্যে মাস্ক পইরা কাম করা সম্ভব না। আর আমরা খাইটা খাওয়া মানুষ, আমগো করোনা ধরব না।“
মার্কেটে ভিড় বেশি, ক্রেতা কম
নিউ মার্কেটের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। অধিকাংশ বিক্রেতাই সংবাদকর্মী দেখলেই তড়িঘড়ি মুখে মাস্ক পরে নিচ্ছেন। বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে এক শাড়ি বিক্রেতা বলেন, “মানুষ মার্কেটে আসতেছে এটা ঠিক, কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।“
উপেক্ষিত সরকারি নির্দেশনা
সরকারের পক্ষ থেকে যতসংখ্যক সিট ততসংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও মিরপুর-মতিঝিল রুটের বিকল্প পরিবহণের বাসে উঠে দেখা যায় সেখানে দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন অনেকে। কেন এ অনিয়ম জানতে চাইলে বাসটির যাত্রী এবং স্টাফদের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করতে দেখা যায়।
প্রাণচাঞ্চল্য এসেছে আদালতপাড়ায়
দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে পুরোদমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতদিন ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা চালু থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই বেগ পেতে হয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী। তার মতে, আদালতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস বন্ধ থাকলে বিচারসংশ্লিষ্ট সবাইকেই ভুগতে হয়।
গণপরিবহণে বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার
সরকার লকডাউন শিথিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্দেশনা দিয়েছে, সিটের সমানসংখ্যক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ আগের ভাড়ায় চালাতে হবে এবং মালিকেরা অর্ধেক সংখ্যক গাড়ি রাস্তায় নামাবেন। সাধারণ যাত্রীরা ৬০% বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানালেও অর্ধেক পরিবহণ রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
‘এমনে চলতে থাকলে পথে বইতে হইবো’
ফার্মগেট এলাকার চা দোকানি রতন পাটওয়ারি বলেন, ääলকডাউনে পুলিশ দোকান খুলতে দেয় নাই। মাসের পর মাস ধইরা দোকান বন্ধ। খরচ সামলাইতে না পাইরা বৌ-বাচ্চারে দ্যাশে পাঠায় দিসি। এমনে চলতে থাকলে আমাগো পথে বহন ছাড়া গতি নাই।“
‘আর কত লস করা যায়?’
ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাবের জেনারেল ম্যানেজার মো. মোহন জানান, লকডাউনের সময় মানুষের আনাগোনা ছিল একদমই কম। গতবছর থেকেই মালিক শুধু লোকসান গুনছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এভাবে তো ব্যবসা চালানো সম্ভব না। আগে যেখানে দোকানে বসার জায়গা পাওয়া যেতো না, সেখানে এখন লোক ই পাওয়া যায় না। এভাবে আর কত লস করা যায়. বলেন?”
‘করোনার ভয়ে কেউ সেলুনে আসে না’
মিরপুরের শান্তা হেয়ার ড্রেসারের স্বত্বাধিকারি অনিল চন্দ্র দাস বলেন, “লকডাউন, করোনার ভয় সব মিলায়া মানুষ এখন ঘর থেকা বের হয় না। দোকানের আর কর্মচারীর দৈনিক খরচ উঠানোই দায় হইয়া গেসে। যে দুই-চারজন কাস্টমার সেলুনে আইতেসে, তারা সবাই পরিচিত আর কি।“