1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
দুর্নীতিভারত

বিধায়কের বাড়িতে কোটি টাকা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৪ জানুয়ারি ২০২৩

তৃণমূলের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে নগদ কোটি কোটি টাকা৷ অভিযানে ১১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আয়কর দপ্তর৷

https://p.dw.com/p/4MBnG
 West Bengal Razzia TMC
ছবি: Payel Samanta/DW

নিজ দলের নেতার বাড়িতে কোটি টাকা মেলার বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনায় দেখছেন তৃণমূলের নেতাদের অনেকে। নেতাদের প্রশ্ন, বিজেপির অভিযুক্ত নেতাদের বাড়ি তল্লাশি হয় না কেন?

দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি তৎপরতা বাড়িয়েছে একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ তার জেরে জেলবন্দি পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ জেলে রয়েছেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরু-কয়লা পাচার মামলায় আরো অনেকে এখন কারাগারে৷

এনিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চাপানউতোর যখন তুঙ্গে, সেই সময় আয়কর দপ্তর বড় অভিযান চালাল শাসক দলের বিধায়কের বাড়িতে৷ মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়িসহ একাধিক জায়গায় এই সপ্তাহে হানা দেন আধিকারিকরা৷

বাড়ি, গুদাম, কারখানা, মিলে তল্লাশির চালিয়ে ১১ কোটি নগদ টাকা উদ্ধারের দাবি আয়কর দপ্তরের দাবি৷ জাকিরের বাড়ি থেকে দুই কোটি ও তার মালিকানাধীন শিব মিলস ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে নয় কোটি টাকা মিলেছে বলে দপ্তর সূত্রে খবর৷

এর আগে এভাবে টাকা উদ্ধার হয় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে৷ তার দুটি ফ্ল্যাটে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি-র তল্লাশিতে মেলে নগদ প্রায় ৫০ কোটি টাকা৷ সঙ্গে আরো কয়েক কোটি টাকার অলঙ্কার৷

কেন্দ্রের শাসক দলের অভিযুক্ত নেতাদের বাড়িতে অভিযান করছে না: উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

পার্থ ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়েছিল৷ এবার আরেক প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়িতে টাকা মেলায় বিরোধীরা বিঁধেছে তৃণমূল কংগ্রেসকে৷

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘যত বড় নেতা তত বড় লুট৷ আমাদের চোর ধরো জেল ভরো অভিযান চলবে৷’’

জাকির পাল্টা দাবি করেছেন, সবটাই সাদা টাকা৷ তার বক্তব্য, ‘‘আমার বাড়িতে সামান্য যে টাকা পাওয়া গিয়েছে, সেটা শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য রাখা ছিল৷ স্ত্রী-সন্তানের টাকাও এর মধ্যে ছিল৷ নগদে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য চালকলে টাকা রাখতে হয়৷''

তার দাবি, গত বছর তিনি ১০ কোটি টাকা আয়কর দিয়েছেন৷ তার আগের বছর সাড়ে নয় কোটি৷

জাকিরের ডেরায় তল্লাশির দিন কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিরুদ্দিন ববির হোটেলে হানা দেয় আয়কর দপ্তর৷ ৩৭ ঘণ্টার তল্লাশিতে গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে বলে দপ্তর সূত্রে খবর৷ আমিরুদ্দিনের দাবি, তিনি ব্যবসায়ী৷ তার সব সম্পত্তি বৈধ৷

এ সবের পিছনে কেন্দ্রের ষড়যন্ত্র ও পক্ষপাত আছে, একথা বারবার বলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য নেতারা৷

গত সপ্তাহে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন৷ তার ভাষায়, ‘‘সব গ্রাম কেন্দ্রীয় দল চষে ফেলবে৷ সুতি, রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গিপুরের মাতব্বররা চলে যাবে!’’

পার্থ-ঘনিষ্ঠের মতো জাকিরের হেফাজত থেকে টাকা উদ্ধারের সঙ্গে প্রভাবশালী যোগের প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ৷

অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এই টাকা কি অন্য কোনো প্রভাবশালীর টাকা? তিনি জাকিরের কাছে টাকা রেখে নিশ্চিত হতে চেয়েছেন৷’’

যারা চুরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তো অভিযান হবে: অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ

আয়কর দপ্তরের জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির৷ সূত্রের খবর, এই টাকার উৎস কী সেটা তার কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে৷ সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন আমিরুদ্দিন৷ দুজনকেই আয়কর দপ্তর তলব করে পাঁচ বছরের আয়ের নথি আনতে বলেছে৷

তৃণমূলের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট নেতারা নথিপত্র পেশ করবেন৷ কিন্তু দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘সারদা মামলায় সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন লিখিত বয়ানে আদালতে জানিয়েছিলেন, শুভেন্দু অধিকারী ব্ল্যাকমেল করে টাকা নিয়েছেন৷ শুভেন্দুর বাড়িতে কেন অভিযান করছে না কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি?’’

এই পক্ষপাতের তত্ত্বকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রের শাসক দলের অভিযুক্ত নেতাদের বাড়িতে কেন কেন্দ্রীয় সংস্থা অভিযান করছে না, এর জবাব তাদের দিতে হবে৷ যদি নিরপেক্ষভাবে তারা কাজ করে, তাহলে এই প্রশ্ন উঠবে না৷’’

এর ব্যাখ্যায় বিজেপি নেতা অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা চুরি করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তো অভিযান হবে! শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তে বিজেপি বাধা দেয়নি৷ এজন্য তৃণমূল হাইকোর্টেও গিয়েছিল৷ আদালত সিবিআইকে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলেছে৷’’