1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিধান পরিষদ গঠনের উদ্যোগ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ মে ২০২১

পাঁচ দশক পর পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে চলেছে বিধান পরিষদ৷ এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ করেছে রাজ্য মন্ত্রিসভা৷ পরিষদ গঠন কতটা প্রয়োজনীয়, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/3u2yR
Indien Kalkutta | Kabinett
ছবি: Payel Samanta/DW

ব্রিটেনের অনুকরণে তৈরি ভারতীয় সংবিধান৷ তাতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সংস্থান আছে৷ কেন্দ্রীয় আইনসভায় দুটি কক্ষ৷ লোকসভা ও রাজ্যসভা৷ এই দুই কক্ষ কেন্দ্রীয় স্তরে সম্মিলিতভাবে আইন প্রণয়ন করে৷ অধিকাংশ রাজ্যের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট৷ কেন্দ্রে রাজ্যসভার যে স্থান, রাজ্যে বিধান পরিষদ সেই গুরুত্ব বহন করে৷ এই মুহূর্তে ভারতের ৬টি রাজ্যে বিধান পরিষদ রয়েছে৷ উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটকে৷ এটি রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ হিসেবে স্বীকৃত৷

পশ্চিমবঙ্গে ১৯৫২ সালে প্রথম বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে প্রায় দু'দশক বিধান পরিষদের অস্তিত্ব ছিল৷ সংবিধানের ১৭১ নম্বর ধারা অনুসারে, বিধানসভার সদস্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে পরিষদের সদস্য সীমাবদ্ধ রাখতে হয়৷ কিন্তু তা কখনোই ৪০-এর কম হবে না৷ পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদ গঠিত হলে সর্বাধিক ৯৯ জন সদস্য হতে পারবেন৷ সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর৷ প্রতি দু'বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেবেন৷ শুধু মনোনয়ন নয়, পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের ভোটে৷ বিধানসভা থেকে স্থানীয় প্রশাসনের সদস্য কিংবা স্নাতক থেকে শিক্ষক, অনেকেরই এক্ষেত্রে ভোটদানের অধিকার রয়েছে৷

বিধান পরিষদ গঠন করার প্রতিশ্রুতি নির্বাচনের আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক বিধায়ক ও প্রবীণ নেতা বয়সের কারণে টিকিট পাননি৷ তাঁদের একাংশকে আইনসভার সঙ্গে জুড়ে রাখতে বিধান পরিষদ তৈরির কথা তিনি বলেছিলেন৷ নির্বাচনে জয়লাভের পর গত ১৭ মে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পাশ হয়েছে৷ এটি বিলের আকারে রাজ্য বিধানসভায় পাশ করাতে হবে৷ তারপর রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেলে তৈরি হবে বিধান পরিষদ৷

পশ্চিমবঙ্গ শুধু নয়, ভারত-সহ গোটা বিশ্ব এখন কোভিডের মোকাবিলা করছে৷ বিশেষত ভারত দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল৷ এই পরিস্থিতিতে বিধান পরিষদ গঠনের উদ্যোগ কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ সরব হয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি৷ তাদের বক্তব্য, দলের লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এর ফলে রাজ্যে শাসকের দলতন্ত্র আরও মজবুত হবে৷ বামপন্থীরাও বিধান পরিষদ গঠনের বিরোধিতা করেছেন৷ ১৯৬৯ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার যখন বিধান পরিষদের অবলুপ্তি ঘটায়, তখন সেই সিদ্ধান্তের শরিক ছিলেন বামেরা৷

বিমলশঙ্কর নন্দ

তাদের বক্তব্য, পরিষদের সৃষ্টি থেকে বিলুপ্তি পর্যন্ত প্রায় সব বিলে বিনা প্রশ্নে ছাড়পত্র দিয়েছে উচ্চকক্ষ৷ তাছাড়া রাজ্যের মন্ত্রিসভা এই পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ থাকে না৷ পরিষদে অর্থবিল পেশ করা যায় না৷ তাই নতুন একটি কক্ষ তৈরি করে তার খরচ বহন করা এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কতটা যুক্তিযুক্ত সেই প্রশ্ন বামেরা তুলেছে৷ সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, "এই সময় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত৷ তার বদলে বিধান পরিষদের মতো সাদা হাতি পোষা ঠিক নয়৷ এতে জনগণের উপর বাড়তি বোঝা চাপবে৷” পর্যবেক্ষকদের একাংশ এই অতিরিক্ত খরচের জন্য বিধান পরিষদ গঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন৷ অতীতের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে তৃণমূল নেত্রী একগুচ্ছ নতুন প্রকল্পের কথা বলেছেন৷ জয়ের পর মহিলাদের মাসিক ভাতা থেকে পড়ুয়াদের ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন প্রকল্পের খাতে নয়া খরচ যুক্ত হবে৷ এর উপর বিধান পরিষদের খরচ বহন করতে হলে রাজকোষের অবস্থা আরও বেহাল হবে বলে তারা মনে করছেন৷ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মনে করছে৷ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, "সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট মানুষদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ৷” কারা পরিষদে আসবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে৷ তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিধানসভার কার্যকলাপের উপর নজরদারির সঙ্গে প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিষদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে৷ বিধান পরিষদের প্রয়োজনীয়তা একেবারে খারিজ করেননি রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ৷ এ বারের নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী বিমলশঙ্কর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যদি জ্ঞানী-গুণী মানুষেরা আইনের বিচার-বিশ্লেষণ করেন, তা হলে অবশ্যই পরিষদের প্রয়োজনীয়তা আছে৷ কিন্তু এটা যদি কেবল শাসক দলের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়, তবে কোনো কাজে আসবে না৷ সরকার গণতন্ত্রকে সম্মান দিলে সবটাই ভালো৷ রাজ্যের শাসক দল সেটা করে বলে আমার মনে হয় না৷”