বিজ্ঞানীরা কি মৌমাছিবান্ধব কীটনাশক খুঁজে পেয়েছেন?

ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে, কীটনাশকের ফলে মৌমাছিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে৷ বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কীটনাশকে প্রযুক্ত নিওনিকোটিনয়েড বিষের ফলে মৌমাছি ও অপরাপর কীটপতঙ্গের মস্তিষ্ক ও শরীর প্রভাবিত হয়, তাদের প্রজনন ক্ষমতা ও আয়ু কমে যায়৷

মৌমাছিরা তো আর শুধু মধু তৈরি করে না৷ ফুল থেকে মধু সংগ্রহের সময় তারা পরাগ বহণ করে বলে খাদ্য উৎপাদনেও তারা একটা বড় ভূমিকা রাখে৷ কিন্তু বাসযোগ্য স্থান কমে যাওয়ার ফলে ও বিষাক্ত কীটনাশকের প্রভাবে মৌমাছিরা আজ বিপন্ন৷

নিওনিকোটিনয়েড বিষযুক্ত কীটনাশক মৌমাছি ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক৷ ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত করা হয়৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাঁরা এবার একটি নতুন সমাধান খুঁজে পেয়েছেন, যার ফলে মৌমাছিদের পক্ষে ক্ষতিকর নয়, এমন নিওনিকোটিনয়েড কীটনাশক তৈরি করা সম্ভব হবে৷

গবেষকরা বলছেন, মৌমাছিরা কিভাবে ক্ষতিকর বিষকে নিষ্ক্রিয় করে, সেটা তাঁরা শনাক্ত করতে পেরেছেন৷ দু’টি নিওনিকোটিনয়েড গোত্রীয় বিষের প্রভাব তুলনা করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, মৌমাছিরা তাদের মধ্যে থিয়াক্লোপ্রিড নামের একটি বিষকে খুব তাড়াতাড়ি হজম করে ফেলে৷ এর ফলে এমন কীটনাশক তৈরি করা সম্ভব হবে, যা মৌমাছিদের পক্ষে ক্ষতিকর হবে না বলে গবেষকদের ধারণা৷

পরিবেশবাদীরা এখনও সন্দিগ্ধ৷ সাসেক্স ইউনিভার্সিটির লাইফ সায়েন্স বিভাগের ডেভ গুলসন ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন যে, তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল কুলগাছের ক্ষেতের পাশে মৌমাছিদের বাসা৷ গুলসন দেখেছেন, থিয়াক্লোপ্রিড মৌমাছিদের বাসার ক্ষতি করে৷ ‘‘মুক্ত প্রকৃতিতে থিয়াক্লোপ্রিড যে ভোমরার চাকের ক্ষতি করে, তার প্রমাণ আছে,’’ বলেন গুলসন৷

ব্রিটেনের কীটনাশক বর্জন নেটওয়ার্কের পরিচালক কিথ টাইরেল বলেন, আমাদের ‘রাসায়নিক চিন্তাধারা’ থেকে দূরে সরে যেতে হবে৷

শুধু মৌমাছিরাই কীটনাশকের প্রকোপে পড়ে, এমন নয়, বলেন টাইরেল৷ কীটনাশক কীটপতঙ্গের জন্য ক্ষতিকর৷ প্রজাপতিদের সংখ্যাও কমে গেছে৷ কীটনাশক যে মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর স্বাস্থ্যের হানি ঘটানোরও ক্ষমতা রাখে, যুক্তরাজ্যের পেস্টিসাইড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক তা জনসাধারণকে বোঝানোর চেষ্টা করছে৷

পরিবেশবাদীরা বলছেন, আমাদের কৃষিকাজের ধরন এবং ধারণাটাই পাল্টে ফেলতে হবে, অরাসায়নিক পদ্ধতিতে কীট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এমন সব পদ্ধতি, যা প্রকৃতির পন্থায় কাজ করে৷