1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিচারের সরাসরি সম্প্রচারে স্বচ্ছতা কি বাড়বে?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলা আরো একবার দিশা দেখালো ভারতকে৷ কলকাতা হাইকোর্টে প্রথমবার একটি মামলার শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা হবে৷

https://p.dw.com/p/3Y3VY
ছবি: DW/P. Tewari

ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় মামলার শুনানি গোপনীয়তায় ঘেরা থাকে৷ বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন আদালত কক্ষে জনতা উপস্থিত থাকে, কিন্তু উপস্থিতির হার খুবই সীমিত৷ ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়ে যায় প্রায় অগোচরে৷  অভিযোগকারী বা অভিযুক্তের পক্ষে কী সওয়াল রাখা হলো, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানা সম্ভব হয় না৷ সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা খবরে শুনানির সারসংক্ষেপ থাকে বটে, কিন্তু তাতে মামলার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা গড়ে ওঠে না৷ ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় রায় দেয়, আদালতের শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে৷ তারপর দেড় বছর কেটে গেলেও ভারতের কোনো আদালতে এখনো শুনানির সরাসরি সম্প্রচার হয়নি৷ কলকাতা হাইকোর্ট এক্ষেত্রে পথ দেখাতে চলেছে৷

কলকাতা হাইকোর্টের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপের নেপথ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি সংক্রান্ত একটি মামলা৷ পার্সি সম্প্রদায়ের এক মহিলা বিয়ে করেছিল অ-পার্সি এক পুরুষকে৷ সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী, এই দম্পতির সন্তান উপাসনাস্থল অগ্নিমন্দিরে প্রবেশের অধিকারী নয়৷ পার্সি মহিলা এই অধিকার দাবি করে মামলা করেছেন৷ মামলার একটি পক্ষ পার্সি সম্প্রদায়ের সংগঠন আদালত বলে, এই মামলার বিষয়বস্তু গোটা পার্সি সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পার্সিরা আদালতে এসে এই শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন না৷ তাই পুরো সওয়াল-জবাব সকলের কাছে পৌঁছে দিতে শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করা হোক৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি কৌশিক চন্দের ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দিয়েছেন৷ আদালত সূত্রে খবর, এই মামলার লাইভ স্ট্রিমিং হবে ইউটিউবে৷ খরচ দেবে পার্সি সংগঠনটি৷

কলকাতা হাইকোর্টের এই নির্দেশকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখছে আইনজীবী মহল৷ দুই শীর্ষস্থানীয় অভিজ্ঞ আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ ও বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ অরুণাভ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ওপেন ট্রায়াল বা খোলাখুলি বিচার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়৷ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হত্যা মামলার শুনানি হচ্ছিল তিহার জেলে৷ কারাগারে ওপেন ট্রায়াল না হওয়ায় তখন আইনজীবী রাম জেঠমালানি এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ সুতরাং শুনানির সরাসরি সম্প্রচার করলে অনেক মানুষের কাছে এই প্রক্রিয়া পৌঁছে যাবে৷ এজলাসে বসে ৫০ জন যা দেখতো, তা এখন হাজার হাজার মানুষ দেখতে পাবে৷’’ ইন ক্যামেরা বিচার প্রক্রিয়া অর্থাৎ শুনানির ভিডিওগ্রাফি নতুন কিছু নয়৷ তবে সরাসরি সম্প্রচার একেবারেই নতুন পদক্ষেপ৷ বিকাশরঞ্জনের বক্তব্য, ‘‘আইনজীবীরা কী সওয়াল করলেন, বিচারপতি কতটা মন দিয়ে শুনলেন, সেটা সরাসরি মানুষ দেখতে পাবে৷ কেউ যদি তার ভিত্তিতে কোনো বক্তব্য রাখতে চান, পরে সেটাও রাখতে পারবেন৷ ফলে মামলা ঘিরে রহস্যময়তা অনেকটাই কেটে যাবে৷’’

‘মামলা ঘিরে রহস্যময়তা অনেকটাই কেটে যাবে’

তবে ধর্ষণ বা পারিবারিক বিবাদ সংক্রান্ত মামলার শুনানি সরাসরি জনতার কাছে পৌঁছে যাওয়ার দরকার নেই বলেই মনে করেন এই দুই আইনজীবী৷ ত্রিপুরার প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিকাশঞ্জনের মতে, ‘‘এসব মামলায় একান্ত ব্যক্তিগত কথা আলোচনায় উঠে আসে৷ অনেক ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক কথা আলোচিত হয়৷ এতে অপরাধের শিকার যিনি, তাঁর সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷’’ শুনানি সরাসরি সম্প্রচারের ফলে বিচার প্রক্রিয়া অনেকটাই স্বচ্ছ হবে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা৷ দূরত্বের কারণে আন্দামানের কোনো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা হয়৷ কোনো মামলায় সাক্ষীকে হাজির করা না গেলে একই পদ্ধতি নেয়া হয়৷ তাহলে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেওয়ার পরও কেন আজ পর্যন্ত দেশের কোনো আদালতে লাইভ স্ট্রিমিং করা হলো না কেন? অরুণাভ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সরাসরি সম্প্রচারের জন্য যে পরিকাঠামো দরকার, তা সব আদালতে নেই৷ আর্থিক সমস্যা রয়েছে৷ নতুন কর্মী নিয়োগ করা দরকার৷ তবে দেরিতে হলেও নতুন পদ্ধতি শুরু করা দরকার৷’’