1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌বিকল্প রাজনীতির দিশা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১০ মে ২০১৯

ভারতের মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলি যখন পরিবেশের বিপদ সম্পর্কে নিজেদের বক্তব্যে নেহাতই দায়সারা, সেখানে পরিবেশ সংরক্ষণই নিজের নির্বাচনি ইস্যু করেছেন দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের এক নির্দল প্রার্থী৷

https://p.dw.com/p/3IHsT
Indien Kalkutta Kampagne für die Umwelt
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay

ভোটের বাজারে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, বিতর্ক-বিবাদে সারা দেশ যখন সরগরম, তখন অন্য কথা বলছেন কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী নীরজ আগরওয়াল৷ পরিবেশ রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, কিন্তু ভারসাম্য বজায় রেখে, বর্জ্য নিষ্কাশনে নিয়ন্ত্রণ, পানীয় জলের সংরক্ষণ নিয়ে কথা বলছেন তিনি৷ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটাদের বোঝাচ্ছেন৷ কেউ বুঝছেন, কেউ বুঝছেন না৷ কিন্তু নীরজ অক্লান্ত৷ এই বিশ্বকে ভবিষ্যতের শিশুর বাসযোগ্য করে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়েছেন তিনিও৷ দেশের সমস্ত বড় রাজনৈতিক দল যে বিষয়গুলি এড়িয়ে যায়, বর্তমান কেন্দ্র সরকারে জঙ্গল ধ্বংস করে খনি চালু করা, বা নদীর বুকে একের পর এক বাঁধ গড়ে তোলার আত্মঘাতী পরিকল্পনা নিয়ে যখন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা নীরব;‌ ‘‌স্বচ্ছ ভারত’ বা গঙ্গা নদীকে পরিষ্কারের জাতীয় মিশন যখন শুধুই প্রচারের ঢক্কা নিনাদ হয়ে থেকে যায়, কোটি কোটি টাকা খরচ হয় প্রচারে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না— তখন নীরজ ব্যক্তি মানুষের সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে পরিবেশ সংরক্ষণের কথা বলছেন৷ এবং স্বপ্ন দেখছেন, যেদিন আরো অনেক মানুষ সচেতন হবে, সেদিন ভারতে পরিবেশ রক্ষা এক গণআন্দোলনের চেহারা নেবে৷

নীরজ তাঁর নির্বাচনি প্রচারের ওয়েবসাইট ‘‌বিকল্প২০১৯’-এ নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছেন, যে তিনি রাজনীতিতে একেবারেই নতুন, আনকোরা৷ ডয়চে ভেলেকেও তিনি জানালেন, এর আগে তাঁর কোনো নির্বাচনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা তাঁর নেই, যদিও বেসরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থায় তিনি নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থানে ছিলেন৷ কিন্তু সরাসরি জনগণের সঙ্গে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা নেই তাঁর৷

কিন্তু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র, দূষণের মতো বিষয়গুলিকেই বেছে নিলেন কেন?‌ বিশেষত এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন কোনো রাজনৈতিক দলকেই কথা বলতে শোনা যায় না! তাদের নির্বাচনি ইশতাহারে খুব কম শব্দ খরচ করা হয় পরিবেশ নিয়ে৷‌ নীরজের বক্তব্য এ ব্যাপারে খুব পরিষ্কার৷ তিনি বললেন, ‘‌‘‌আমরা ভাবি যে, একজন সাধারণ লোক, তার জন্যে এই জিনিসগুলো যদি না ঠিক করা হয়, তা হলে তারা কীভাবে বেঁচে থাকবে, বা একটা স্বাস্থ্যকর, শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাবে? শুধু এই নির্বাচন কেন যে কোনো নির্বাচনেই যদি এই বিষয়গুলোকে ঠিকভাবে গুরুত্ব না দেওয়া হয়, তাহলে লোকজন কীসের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটা আমরা বুঝতে পারিনি৷’’

‘প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো রাখা হোক’

ভারতে আর কোনো দল কি এরকম পরিবেশগত সমস্যাগুলোকে নির্বাচনের ইস্যু করেছে বা নীরজের সঙ্গে তাদের কারও কি যোগাযোগ আছে?‌ না, নির্বাচনে অংশ নেওয়া এতগুলো দল এবং এত প্রার্থীর মধ্যে আর কেউ পরিবেশের কথা বলছে কিনা, সেটা নীরজ জানেন না৷ তবে যতগুলো বড় রাজনৈতিক দল আছে, তাদের নির্বাচনি ইশতাহার নীরজরা খুঁটিয়ে পড়েছেন এবং নিজেদের ইশতাহারের সঙ্গে তাদের একটা তুলনামূলক বিশ্লেষণ নিজেদের যে ওয়েব সাইট আছে, তাতে রেখেছেন৷ তাতে যেটা বোঝা যাচ্ছে যে প্রকৃতি, পরিবেশ, দূষণ, বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ— এগুলো নিয়ে কেউ সেরকমভাবে কিছু বলেওনি, আর গুরুত্বও দেয়নি৷ ‘‌‘‌আমরা ভাবছি যে, এই নির্বাচন এবং আগামীতে যতগুলো নির্বাচন আসবে, এই বিষয়গুলো নিয়ে তারা কথা বললে সাধারণ মানুষের জন্যে ভালো হবে৷’’ বললেন নীরজ আগরওয়াল৷

এই মুহূর্তে ভারতে যেসব পরিবেশগত সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে, সে সম্পর্কেও মানুষদের সচেতন করছেন নীরজ৷ যেমন ছত্তিসগড়ে একটা বড় বনাঞ্চল আকরিক খননের জন্য বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ তার জন্য সবুজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ওই অঞ্চলে৷ নীরজের বক্তব্য, ‘‌‘‌আমরা বুঝি যে, সরকারের একটা পদ্ধতি আছে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য৷ কিন্তু সেটা পরিবেশের ক্ষতি করে তো হতে পারে না! কাজেই‌ ছোট বা বড় প্রেক্ষিতে আমরা চাইছি যে, প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো রাখা হোক, আর আমাদের যা উন্নয়নের প্রয়োজন আছে, সেটা কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে করা যায় (‌সেটা দেখা হোক)‌৷’’

এবং ওঁরা সাড়া পাচ্ছেনও৷ বাড়ি বাড়ি ঘুরে যখন প্রচার চালাচ্ছেন, বা কোনো বড় শিল্পসংস্থার কর্ণধারের কাছে গিয়ে যখন সমস্যাটা বলছেন, সবাই বিষয়টা বুঝছে৷ এবং নীরজের আশা, ‘‌‘‌ওঁরা সবাই যদি পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে একটু বেশি সবাক হন, তাহলে এটা একটা বড় আন্দোলনের চেহারা নিয়ে নিতে পারে৷’’ তাতেই আরো উৎসাহিত বোধ করছেন নীরজ বা তাঁর সমমনস্ক লোকজন৷ এই নির্বাচনকে ওঁরা ব্যবহার করছেন নিজেদের কথা, পরিবেশের কথা একসঙ্গে অনেক বেশি লোকের কাছে পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু নির্বাচনের পর সেই চেষ্টাটা শেষ হয়ে যাবে না৷ বরং আরো বেশি জায়গা জুড়ে, আরো বেশি লোকের কাছে ওঁরা যাবেন৷ বোঝাবেন পরিবেশ সংরক্ষণের মতো ইস্যুকে অগ্রাহ্য করার বিপদ সম্পর্কে৷