1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএসএফ, সীমান্তহত্যা নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা

১৭ নভেম্বর ২০২১

বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানো নিয়ে তুমুল বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ।

https://p.dw.com/p/435xQ
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা
ছবি: Payel Samanta/DW

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করছিল। এবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতেও একই অভিযোগ উঠে এলো। বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানোর প্রশ্নে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বিধায়ক তাপস রায় রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে সীমান্তহত্যা, গুম, অপহরণের অভিযোগ তুললেন। যা নিয়ে বুধবারও উত্তপ্ত বিধানসভা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।

বস্তুত, মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্য সরকার একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। ১১২-৬৩ ভোটে পাশ হওয়া সেই প্রস্তাবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। কেন্দ্র বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানো হবে। সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চলে তারা কাজ করতে পারবে। ওই অঞ্চলে তারা সাধারণ মানুষের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে, আটক করতে পারবে। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই তা সে সব করতে পারবে।

রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। এভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছেন, 'কেন্দ্র পিছনের দরজা দিয়ে রাজ্যের এলাকা দখল করতে চাইছে।' তার বক্তব্য, এর আগে বিএসএফ-এর যে এক্তিয়ার ছিল, তাতে তারা সীমান্তের অপরাধ বন্ধ করতে পারেনি। কোন যুক্তিতে তারা নতুন এক্তিয়ারে অপরাধ বন্ধ করতে পারবে?

সীমান্তে হত্যা

তাপস রায় বিএসএফের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য তুলে ধরেছেন বিধানসভায়। তার বক্তব্য, 'গত পাঁচ বছরে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে ২৪০টি অত্যাচার, ৬০টি খুন এবং আটটি নিখোঁজের ঘটনার অভিযোগ আছে। সেই বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়িয়ে বিজেপি রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ দখল করতে চাইছে আর আমরা দাঁত বার করে দেখব?'

মালদহ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ‘লুকোচুরি সীমান্ত’ ও ভোটের গল্প

তাপসের এই অভিযোগের জবাবে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভায় তিনি বলেছেন, 'যারা সীমান্তে পাহারা দেয় বলে আমরা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি, তাদের নামে অশালীন, নিম্নরুচির কথাবার্তা বিধানসভায় ব্যবহার করা হয়েছে।' বিজেপির আরেক বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেছেন, 'বিএসএফ শুধু গ্রেপ্তার বা বাজেয়াপ্ত করতে পারে। তাদের হাতে তদন্ত বা বিচারের ক্ষমতা নেই। পুলিশের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। তাহলে অসুবিধা কোথায়?'

অসুবিধা অনেক বলেই মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের কর্মকর্তা কিরিটি রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সীমান্তহত্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএসএফ-এর ক্ষমতা বাড়ার অর্থ সীমান্তে অশান্তি আরো বাড়বে। কোন যুক্তিতে সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভিতরে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজন হয়?''

সম্প্রতি উপনির্বাচনে দিনহাটা থেকে জিতে আসা বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেছেন, সীমান্তে পাচারের সঙ্গেও বিএসএফ যুক্ত। তারা কার্ড দেখিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে কাজ করতে আসা নারীদের গায়ে তল্লাশির নামে হাত দেয়। কোনোভাবেই বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানোর যুক্তি মানা যায় না। এতে অশান্তি বাড়বে। বস্তুত, বাম এবং কংগ্রেসও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বাড়ানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাশ করেছে। এর আগে পাঞ্জাব বিধানসভাও একই কাজ করেছে। কিন্তু তাতে কি লাভ হবে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফ-এর এক সাবেক অফিসার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের। ফলে বিধানসভার প্রস্তাব আইন বদলাতে পারবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় নীতির উপর চাপ তৈরি করতে পারবে। বুধবারই বিএসএফ-এর তরফে বলা হয়েছে, স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলেই তারা কাজ করবে। তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। এখন দেখার, পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুইটি সীমান্ত অঞ্চলের চাপের সামনে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত বদল করে কি না।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)