ফোনালাপ' তদন্ত করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়
১৩ ডিসেম্বর ২০১৮বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে৷
ইংরেজিতে ওই কথোপকথনের অডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে৷ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমও অডিওসহ খবরটি প্রকাশ করেছে৷ এশিয়ান ট্রিবিউন দাবি করেছে, মেহমুদ নামে এক পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন৷ তাদের দাবি, মেহমুদ নামের ওই ব্যক্তি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-র একজন কর্মকর্তা৷ তাদের কাছে সাত মিনিটের ওই কথোপকথনের অডিও আছে বলে দাবি করেছে সংবাদ মাধ্যমটি৷
ইংরেজিতে ওই কথোপকথনে ভীষণ সমস্যায় থাকার কথা বলে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে মেহমুদের সহায়তা চাওয়া হয়৷ এজন্য চীনকে ম্যানেজ করার অনুরোধও জানানো হয়৷ মেহমুদ জবাবে চীন যাতে বিএনপিকে সহায়তা করে, তার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানান৷ তারা পরস্পরকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেন এবং আগে ইসলামাবাদে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা স্মরণ করেন৷
মেহমুদকে আরো জানানো হয় , তার পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার জব্দ করে রেখেছে৷ অনেক মামলা দিয়েছে৷ যদি দেশ থেকে বের হতে পারেন, তাহলে মেহমুদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন৷ আর মেহেমুদ জানান, ঢাকায় তার লোক তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে৷
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন তার নির্বাচনি এলাকা কুমিল্লার দাউদকান্দিতে আছেন৷ খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে দাউদকান্দি মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন করা হয়েছে৷
মামলাটি করেছেন দাউদকান্দি আসনে খন্দকার মোশাররফের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়ার ছেলে ও দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী সুমন৷
দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগটি পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি৷ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আমলে নিতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অমুমোদন লাগে৷ আমরা এরই মধ্যে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি৷ তাঁরাও উপরে যোগাযোগ করেছেন৷ আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও মামলা গ্রহনের প্রক্রিয়া চলছে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই পর্যায়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই৷''
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আইএসআই-এর সঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অডিও কথোপকথন নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি৷ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না৷ মামলা হয়েছে, মামলা মামলার মতো চলবে৷''
আইএসআই-এর সঙ্গে কথিত এই কথোপকথন শুধু দু'জনের ব্যাপার না, এর আর কোনো বিস্তৃত রূপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অনেক কিছুই হতে পারে৷ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়ও আছে৷ কিন্ত তা-ও তদন্ত শেষ হলেই বলা যাবে৷ তদন্ত আগে শেষ হোক, তারপর দেখা যাবে৷''
খন্দকার মোশররফ হোসেন এরইমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে একটি বিবৃতি দিয়েছেন৷ বিবৃতিতে তিনি দাবি করেন ওই অডিওটি বানানো৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘আমি মেহমুদ নামে কোনো পাকিস্তানি ব্যক্তিকে চিনিনা, আইএসআই-এর কারো সঙ্গে আমার পরিচয় নেই৷ ওই নামে কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়নি৷''
কথোপকথনের বিষয় উল্লেখ করে জানতে চাওয়া হয় যে, ওইসব বিষয় নিয়ে তিনি টেলিফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেছেন কিনা৷ জবাবে তিনি বলেন,‘‘ অডিওটি আমার শোনার সুযোগ হয়নি৷ এ নিয়ে আমি কারো সঙ্গে কোনো কথা বলিনি৷ এটা ম্যানুফ্যাকচার্ড৷''
তিনি দাবি করেন, ‘‘নির্বাচনের সময় আমাকে নানাভাবে ডিস্টার্ব ও হয়রানি করার জন্যই এসব করা হচ্ছে৷ আজও (বৃহস্পতিবার) আমার একটি নির্বাচনি ক্যাম্পে কিছু হয়নি, তারপরও ক্যাম্প তুলে দেয়া হয়েছে৷ মামলা হয়েছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ওই অডিও'র ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি৷ মামলার আবেদন করা হয়েছে৷ আর সেটা করেছেন আমার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছেলে৷''