1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়ি ফেরা হবে না দিনমজুরদের

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২০ এপ্রিল ২০২০

সোমবার থেকে ভারতের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কাজের প্রয়োজনে শ্রমিকদের যাতায়াতে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র সরকার৷ কিন্তু এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে পারবেন না তারা৷ অর্থাৎ, বাড়ি ফিরতে পারবেন না ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা৷

https://p.dw.com/p/3bAXt
ফাইল ছবিছবি: Reuters/R. De Chowdhuri

ওরা পরিযায়ী দিনমজুর৷ অর্থনীতির ভাষায় ইমিগ্র্যান্ট ডেইলি ওয়েজ আর্নার৷ ঘর ছেড়ে তারা ছড়িয়ে থাকেন দেশের সর্বত্র৷ প্রতিদিন পরিশ্রমের বিনিময়ে যে মজুরি পান, তার থেকে বাঁচিয়ে রেখে রেখে এক-দু মাস অন্তর বাড়িতে পাঠান৷ বা হয়ত আরো বেশি ব্যবধানে, যাতে একসঙ্গে বেশ কিছুটা টাকা বাড়ির লোক হাতে পান৷ করোনা সংক্রমণ রুখতে আচমকা দেশজুড়ে লক ডাউন ঘোষিত হওয়ার পর সবথেকে বিপদে পড়েছেন এই ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা৷ রাতারাতি রোজগার বন্ধ৷ যেখানে ঝুপড়ি ঘরে একসঙ্গে অনেকে গাদাগাদি করে থাকেন, তার চারপাশে দোকানপাট বন্ধ৷ যদিওবা কিছু খোলা, অনুমোদিত দামের থেকে অনেক বেশিতে যেখানে বিকোচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, যা কেনার সামর্থ তাদের নেই৷ কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার গরিবদের জন্য বিনামূল্যে চাল, ডাল, তেল দিচ্ছে, কিন্তু সেই ত্রাণ বণ্টন হচ্ছে রেশন দোকান থেকে, রেশন কার্ডের বিনিময়ে৷ ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের সেটাও নেই, ফলে সব দিক দিয়ে ফাঁকিতে পড়েছেন৷
যে কারণে ভারতে লক ডাউনের শুরু থেকেই শোনা যাচ্ছে বিপন্ন পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার মরিয়া চেষ্টার কথা৷ লোকে পায়ে হেঁটে ফেরার অসম্ভব চেষ্টা করছেন৷ মুম্বাই থেকে শ্রীনগর৷ দিল্লি থেকে চেন্নাই৷ যে রাস্তা বিমানে যেতেও তিন ঘণ্টা লাগে৷ পশ্চিমবঙ্গও এই বিপর্যয়ের মানচিত্রের বাইরে নয়৷ গত সপ্তাহেই বীরভূমের সিউড়িতে এক দল পরিযায়ী শ্রমিকের রাস্তা আটকায় পুলিশ, যারা বোলপুর থেকে হেঁটে ঝাড়খণ্ডে নিজেদের গ্রামে ফেরার চেষ্টা করছিলেন৷ এভাবে অন্য রাজ্যে আটকে পড়া, অর্থকষ্টে, খিদে-তেষ্টায় দিশেহারা, ঘরে ফিরতে মরিয়া শ্রমিকদের সংখ্যা ঠিক কত, সে হিসেব কারো কাছে নেই৷ জানালেন আন্তর্জাতিক সহায় সংস্থা অ্যাকশন এইড-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার অন্যতম আধিকারিক চিত্তরঞ্জন মন্ডল৷ এই রাজ্যে আটকে পড়া ভিনরাজ্যের শ্রমিক এবং অন্য রাজ্যে আটকে পড়া পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের সাহায্য করার যে চেষ্টা করছে অ্যাকশন এইড, তার সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন তিনি৷ জানালেন, ‘‌‘‌কেউ ইটভাঁটায় কাজ করে, ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছে৷ কেউ দোকানে কাজ করে, কেউ বা দোকান, গারমেন্টসে, ছোটখাট গারমেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে৷ এবার বন্ধ আছে ওটা৷ মালিক এবার আর পয়সা দেয়নি৷‌এদের কাছে যতটুকু পয়সা ছিল, তা আস্তে আস্তে এরা খেয়ে ফেলেছে৷ খেয়ে ফেলেছে এবং এদের কাছে আর কোনো পয়সা নেই এই মুহূর্তে৷ অনেক পয়সা এদের বাকিও আছে৷ এমপ্লয়ার পয়সা দেয়নি৷ এখন তারা খুবই প্যাথেটিক সিচুয়েশনে আছে৷ কেউ মুড়ি খেয়েও আছে, এরকমও আমি খবর পেয়েছি৷ মারাত্মক চিন্তায়ও আছে, যে আমরা এই কদিন কী করে বাঁচব!‌৩ মে পর্যন্ত লক ডাউন৷ এবং হট স্পট বা রেড জোনগুলোতে তো টোটালি লক্‌ড৷ সেখানেও লেবাররা রয়েছে৷ তারা তো কোথাও বেরোতে পারছে না৷ যদিও গভর্নমেন্ট বলেছে তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেবে, কিন্তু প্র্যাকটিক্যালি কতটা খাবার পৌঁছচ্ছে, সেটা একটা ইস্যু৷’’

‘এদের কাছে আর কোনও পয়সা নেই’

এই দিনমজুরদের পাশাপাশি সমান বিপন্ন অসংগঠিত ক্ষেত্রের অন্যান্য কর্মীরাও, যারা পরিচারকের কাজ করেন, নানা সংস্থার হয়ে জিনিসপত্র ডেলিভারি দেন, ক্যাটারিং বা ওই জাতীয় ব্যবসায় জোগাড়ের কাজ করে কোনওমতে জীবিকা নির্বাহ করেন৷ যে ছোট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এঁদের নিয়োগ করে, টানা এক মাস ব্যবসা বন্ধ থাকাও তাদেরও আর্থিক অবস্থা খারাপ৷ কাজেই এই কর্মীরা ঘরে বসে থাকলেও যে বেতন পেতে থাকবেন, সেটা দুরাশা৷ বরং এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা, বা বেতন না দেওয়া৷ সে দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর টিভি ভাষণে যতই বলুন, কাউকে চাকরি থেকে তাড়াবেন না৷ বরং উঁচু তলার চাকরিতেও শুরু হয়েছে ২০ থেকে ৩০% বেতন ছাঁটাই, তরঙ্গের মতো যার প্রভাব এসে পড়ছে নিচুতলায়৷ 

৩১ মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...