1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাড়ছে গ্যাসের দাম

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৪ মার্চ ২০১৯

আবারো গ্যাসের দাম বাড়বে বাংলাদেশে৷ তিন দিন ধরে চলা গণশুনানি শেষ হয়েছে৷ কম-বেশি যাই বাড়ুক, এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ মানুষ৷ জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে, ক্ষতি হবে ব্যবসায়ীদেরও৷

https://p.dw.com/p/3F42O
ছবি: AFP/Getty Images/M. Bernetti

এবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির শুরুতেই বিরোধীতা করেছে ‘কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ’ বা ক্যাব৷ বিইআরসি গত অক্টোবরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা চ্যালেঞ্জ করে ক্যাব-এর আহ্বায়ক ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনটি করেন৷ নতুন করে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরুর পর তিনি হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন করেন, যার ওপর বুধবার শুনানি হয়৷ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ৩১ মার্চ আদেশের জন্য দিন রেখেছেন৷ ওই দিন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানা যাবে৷

আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গণশুনানির কার্যক্রম আমরা স্থগিত করতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু আদালত বলেছে, গণশুনানিতে তো আর দাম বাড়ানো হচ্ছে না, ফলে শুনানি চলতে পারে৷ তবে ৩১শে মার্চ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে৷ আমরা বিইআরসি-র এই প্রক্রিয়ায় গণশুনানি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছি৷’’

৩১ মার্চ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে: জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্যাসের দাম বাড়ালে পরিবহণ, বিদ্যুৎ, পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সব খাতে ব্যয় বাড়বে৷ এই বাড়তি ব্যয়ের প্রতিটি অর্থ আবার ব্যবসায়ীরা জনগণের কাছ থেকেই পণ্য ও সেবার দাম বাড়িয়ে আদায় করবেন৷ ফলে শেষ পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মূল্য সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে৷ ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আর লাভবান হবেন মাত্র ৫ থেকে ১০ ভাগ মানুষ৷’’ এখন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো তো এখনো লাভেই আছে৷ অথচ সরকার তো ব্যবসায়ী না, সরকার জনগণকে সেবা দেবে৷ কিন্তু এখানে হচ্ছে উলটোটা৷

গ্যাসের দাম বাড়ালে সব খাতে ব্যয় বাড়বে: শামসুল আলম

গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো গত ডিসেম্বরে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা বিইআরসি-কে৷ মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হয়৷ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি অনুমিতই ছিল৷ গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, যার দাম পড়ছে প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ৩০ টাকা৷ এই দর দেশীয় গ্যাসের চার গুণের বেশি৷ এখনো গ্যাসের ঘনমিটার ৭ টাকা ১৮ পয়সা৷ এলএনজির কারণে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার৷ গণশুনানি করে বিইআরসি গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়িয়েছিল৷ অবশ্য ভোটের আগে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় গ্যাসের বাড়তি দাম সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপায়নি৷ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সেটি সমন্বয় করা হয়৷ ভোটের দু'মাস পর এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷

বিতরণকারীরা মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা শুনলে যে কেউ আঁতকে উঠবেন৷ এবারের প্রস্তাবে সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে ১০৩ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷ দেশে গত ১০ বছরে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ছ'বার৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ক্যাপটিভ ও যানবাহনের সিএনজির দাম৷ দুই চুলার গ্যাস বিল ছিল ৪৫০ টাকা, যা এখন ৮০০ টাকা৷ নতুন প্রস্তাবে তা ১ হাজার ৪৪০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে৷ এক চুলার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত দর ১ হাজার ৩৫০ টাকা৷ ২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রতি ঘনমিটার সিএনজির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৬ টাকা ৭৫ পয়সা৷ এখন তা ৪০ টাকা, যা বাড়িয়ে ৫৪ টাকা করার কথা বলা হয়েছে৷ নতুন প্রস্তাবে বিদ্যুতে ২০৮ শতাংশ, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯৬ শতাংশ, শিল্পে ১৩২ শতাংশ ও বাণিজ্যিক খাতে ৪১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে৷

আমরা কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি করি না: মনোয়ার ইসলাম

বিইআরসি-র চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো কোনো পক্ষ না৷ এখানে আমাদের কোনো স্বার্থও নেই৷ কোম্পানিগুলো যখন প্রস্তাব দেয়, তখন আমাদের তো গণশুনানি করতেই হবে৷ আমরা তো কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দাম বৃদ্ধি করি না৷ শুনানির পর আমাদের কাছে যেটা যৌক্তিক মনে হয়, সেই পরিমাণ দামই আমরা বৃদ্ধি করে থাকি৷’’ এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কথা কতটা বিবেচনায় রাখেন? জবাবে জনাব ইসলাম বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা সাধারণ মানুষের কথা খেয়াল রাখি৷ কিন্তু শুরু অভিযোগ করলে তো হবে না, সবকিছুই চিন্তা করতে হবে৷’’

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বে রপ্তানি খাত৷ যেসব পণ্যের একটি বড় অংশ দেশে আমদানি হয়, তাদের বিপদটাও কম নয়৷ রপ্তানি খাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে প্রতিযোগিতা সমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷ দেশে উৎপাদন খরচ বাড়লে বাজার পেয়ে যেতে পারে আমদানি পণ্য৷ বিদেশি সুতার সঙ্গে তেমনই এক লড়াই দেশের বস্ত্রকল বা টেক্সটাইল মিলগুলোর৷

টেক্সটাইল কারখানাগুলো টিকে থাকতে পারবে না: ফারুক হাসান

গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রস্তাবিত হারে গ্যাসের দাম বাড়ালে গার্মেন্টস সেক্টর বিশেষ করে টেক্সটাইল কারখানাগুলো টিকে থাকতে পারবে না৷ বর্তমানে সুতা উৎপাদনের যে খরচ, সেটাই উঠছে না৷ বিদেশি সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাচ্ছে না৷ আমাদের তো সুতা আমদানি করতে হয়৷ সেখানে ভারত, চীন, পাকিস্তান নিজেরা সুতা উৎপাদন করে৷ ফলে আমাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হবে৷ এখানে কিন্তু বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে৷ বিদেশে রপ্তানির আয়ের ৮৩ ভাগই আসে গার্মেন্টস থেকে৷ ব্যাকুয়ার্ড লিংকেজেও বহু মানুষ কাজ করেন৷ ফলে এগুলো খেয়াল রাখা না হলে, বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে৷

প্রসঙ্গত, দেশে এখন দৈনিক মোট গ্যাস সরবরাহ প্রায় ৩২০ কোটি ঘনফুট, যার ৪০ শতাংশই বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত হয়৷ গ্যাসের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর দাবি তুলবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)৷ শেষ পর্যন্ত বিদ্যুতের দামের চাপ সাধারণ মানুষের ঘাড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ পাশাপাশি বিদ্যুতের দাম বাড়লে তার প্রভাব শিল্পেও পড়বে৷

২০ ডিসেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...