বার্লিন সিটি প্যালেসের ইতিহাস
প্রুসিয়ান রাজাদের বসতি ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন সংস্কৃতি কেন্দ্র৷ এ বছর হুমবোল্ট বর্ষ হলেও চালু হচ্ছে না ফোরামটি৷ কিছু কারিগরি ত্রুটির সমাধান হয়নি৷ অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী বছর পর্যন্ত৷ প্যালেসের আদ্যোপান্ত নিয়ে এই ছবিঘর৷
১৯০০ সালের বার্লিন সিটি প্যালেস
প্যালেসটির ভিত স্থাপন হয় ১৪৪৩ সালে৷ আর ১৭০১ সালে, ভবনটি বানানো শুরু করে রাজ পরিবার৷ ইতালীয়ান ঢঙে ভবনে বাইরের দিকটার নকশা করেন স্থপতি আন্দ্রিয়াজ শুলটার৷ প্রাসাদটিতে মোট কক্ষের সংখ্যা এক হাজার ২১০টি৷ ফলে উত্তর আল্পস অঞ্চলে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবনের মর্যাদা পায় ওই ভবন৷
ধ্বংসযজ্ঞ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, বিমান হামলার শিকার হয় ভবনটি৷ প্যালেসের দক্ষিণ এবং উত্তর প্রান্তের সবকটি ভবন পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে৷ ভবনের অন্য প্রান্তগুলো রক্ষা পায় ওই হামলায়৷ অক্ষত থাকে কারুকাজময় বাইরের দেয়াল আর সিঁড়ি৷
অবহেলার পর যত্নআত্তি
যুদ্ধের পর, ভবনে অক্ষত অংশ নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছিল একটা৷ ১৯৫০ সালের দিকে, পূর্ব জার্মানির সমাজতান্ত্রিক শাসকদের মনে এলো ভিন্ন চিন্তা৷ তাদের দাবি, জার্মানির ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সঙ্গে এই প্যালেসের সম্পর্ক নেই৷ তাই সেটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার৷ ওই সময় বিক্ষোভ করে সাধারণ মানুষ৷ গণ সমাবেশের কথা মাথায় রেখে সেখানে বানানো হয় মার্ক্স-অ্যাঙ্গেল চত্বর৷
সমাজতন্ত্রী ধারা
১৯৭০ সালের কথা৷ পূর্ব জার্মানির নেতা ইরিচ হোনেকার সেখানে তৈরি করেন ‘পালাস্ট ডার রিপাবলিক’৷ যা পরে হয়ে যায় পূর্ব জার্মানির সংসদ৷ পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চায় যুক্ত হয় ভবনটি৷ বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলার পর, ভবনটিও বন্ধ করে দেয়া হয়৷
অস্তিত্ব রক্ষা
দুই জার্মান একত্রিত হওয়ার পর সিটি প্যালেস সংস্কারে চলে জোর আলোচনা৷ ১৯৯৩ সালে ভবনটির পুণ:নির্মাণের দাবিতে পুরনো ছবি নিয়ে প্রদর্শনী করে রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দেয় একটি সংগঠন৷ পরে সংসদে ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে বার্লিন সিটি প্যালেস পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়৷
ফিরে এলো পুরনো রূপ
২০০৮ সালে ভবনটি পুনর্গঠনে শুরু হয় স্থপতিদের প্রতিযোগ৷ ইতালির স্টেলা ফ্রাঁঙ্কো জিতে নেন সেই প্রতিযোগ৷ তার নকশায় ছিলো পুরনো স্থাপত্য কৌশলের সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয়৷ তারপর শুরু হয় নির্মাণ কাজ৷ যা এখন হুমবোল্ট ফোরাম নামে পরিচিতি পাবে
নজরদারি
সিটি প্যালেসের আদি-অন্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘হুমবোল্ট বক্স’৷ ২০১১ সাল থেকে এই বক্সটিকে বলা হয় বার্লিনের অস্থায়ী ল্যান্ডমার্ক৷ ভবন খুলে দেয়ার প্রথম ৫০ দিনে, এক লাখ মানুষ ঘুরে দেখেছেন হুমবোল্ট বক্স৷ বক্স দেখার সঙ্গে সিটি প্যালেসের পুন:নির্মাণ কাজও দেখার সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকেরা৷
ঘটনা চলমান
২০১৩ সালের ১২ জুন, জার্মান রাষ্ট্রপতি জোয়াকিম গাউক ভবনটির পুন:নির্মাণ কাজের ভিত গাড়েন৷ পাথর খণ্ডে আছে দুটো সংখ্যা: ১৪৪৩ ও ২০১৩৷ ভবনের দুই ভিত স্থাপনের বছর৷
নতুন দেয়ালে পুরনো কাজ
নতুন করে নির্মাণ শুরুর পর, পুরনো নকশাগুলোকে খুব সযত্নে তৈরি করা হচ্ছে৷ ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলি ও ভাস্কর্য মিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে তিন হাজারে৷ প্রধান ফটক তৈরিতেই গুণতে হচ্ছে প্রায় ৮০ মিলিয়ন ইউরো৷ এই অর্থের বেশিরভাগই আসছে অনুদান থেকে৷ পুরো ভবনের কাজ শেষ করতে ব্যয় হবে ৫৯০ মিলিয়ন ইউরো৷ যার বেশিরভাগ বহন করছে সরকার৷
প্রত্যাশার পারদ
ভবনটি তৈরির অপেক্ষায় আছে বার্লিন জাদুঘর৷ কারণ ইউরোপের বাইরের সংগ্রহটি সেখানে রাখতে চান কর্তৃপক্ষ৷ হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা হলো, সিটি প্যালেসেই অনুষ্ঠিত হবে সব আন্তর্জাতিক সম্মলেন৷ বিকল্প হিসেবে ভবন চত্বরে সাংস্কৃতিক পরিবশেনার জন্য বানানো হবে একটি মঞ্চ৷