1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

''বাবা, আমি শ্বাস নিতে পারছি না''

২৯ জুন ২০২০

''অক্সিজেন চাইছি। ওরা দিচ্ছে না। বাবা, আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না।'' এটাই ছিল হায়দরাবাদের করোনা আক্রান্ত ৩৪ বছরের যুবকের শেষ ভিডিও বার্তা।

https://p.dw.com/p/3eTmU
ছবি: Imago Images/Hindustan Times/S. Khanna

পরপর দশটা বেসরকারি হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি করেনি। শেষ পর্যন্ত হায়দরাবাদ চেষ্ট হাসপাতালে তিনি ভর্তি হতে পেরেছিলেন। কিন্তু সেখানে বারবার কাকুতি-মিনতি করেও সাহায্য পেলেন না। অক্সিজেন জুটলো না তাঁর। শেষ পর্যন্ত শ্বাস নিতে না পারার ভিডিও পাঠালেন বাবাকে। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেলেন ওই যুবক।

ভিডিওতে ওই যুবক বলেছেন, ''তিন ঘণ্টা ধরে আমি অক্সিজেন চাইছি। কিন্তু কেউ শুনছে না। মনে হচ্ছে আমার হৃদযন্ত্র থেমে যাবে। বিদায় ড্যাডি। সকলকে বিদায়।'' এর কিছুক্ষণের মধ্যে সত্যিই তাঁর হৃদযন্ত্র থেমে যায়।

সামাজিক মাধ্যমে ওই ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে। লোকে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলছেন, করোনাকালে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁদের কী বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে।

কিছুদিন আগে অ্যামেরিকায় পুলিশ যখন কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করেছিল, তখন তাঁর শেষ কথা ছিল, ''আমি শ্বাস নিতে পারছি না।'' তবে সেটা ছিল বর্ণবাদী পুলিশের অত্যাচারের মুখে পড়া ফ্লয়েডের শেষ কথা, যা নিয়ে গোটা বিশ্বে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। তার সঙ্গে হায়দরাবাদের যুবকের শেষ কথার কোনো তুলনা চলে না। কারণ এখানে বর্ণবাদ নেই।

হায়দরাবাদে ছিল চিকিৎসায় অবহেলা। যার জন্য ওই যুবককে বলতে হয়েছে, তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না। ওই যুবকের শেষকৃত্য করে ফেরার পর ছেলের ওই ভিডিও দেখেন তাঁর বাবা। তিনি জানিয়েছেন, ''আমার ছেলে সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। আমার ছেলের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা যে কোনও লোকের ক্ষেত্রে হতে পারে। কেন আমার ছেলেকে অক্সিজেন দেওয়া হলো না? ওই ভিডিও দেখার পর আমি বিপর্যস্ত। ভেঙে পড়েছি।''

এর মধ্যে একটি বেসরকারি হাসপাতাল তাঁর ছেলের লালারস পরীক্ষার জন্য দিয়েছিল। তাঁদের রিপোর্ট এসেছে, ওই যুবকের করোনা হয়েছিল।

করোনাকালে রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন শহর থেকে একের পর এক অভিযোগ আসছে। কিছুদিন আগেও কলকাতায় পুলিশ সারা রাত ধরে চেষ্টা করে একজন রোগীকে কোনও হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেনি। পরের দিন দুপুরে তাঁরা একটি নার্সিংহোমে রোগীকে ভর্তি করতে পারে। দিল্লিতে চিত্তরঞ্জন পার্কে হৃদরোগে আক্রান্ত একজন বয়ষ্ক মানুষকে হাসপাতাল ভর্তি করেনি। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। দিল্লিতে সরকারি হাসপাতালে জায়গা থাকা সত্ত্বেও রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তারপর সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে সরকারকে।

ভারতে এখন করোনার প্রকোপ আরও বেড়েছে। একদল বিশেষজ্ঞ হায়দরাবাদে ১৪ দিনের জন্য লকডাউন ঘোষণা করতে বলেছেন রাজ্য সরকারকে। গুয়াহাটিতে ১৪ দিনের লকডাউন শুরু হয়েছে। প্রতি রোববার লকডাউন থাকবে বেঙ্গালুরুতে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দিল্লিতে প্রায় তিন হাজার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ছুঁয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোভাগে থাকা এক চিকিৎসকেরও মৃত্যু হয়েছে দিল্লিতে। রাজধানীতে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪১৭। মানে এই ৪১৭টি এলাকায় করোনার প্রকোপ খুব বেশি।  সেখানে কাউকে ঢুকতে ও বেরতে দেওয়া হচ্ছে না।

জিএইচ/এসজি(এএনআই, এনডিটিভি)