1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাদলের ইস্তফা, মোদী সরকারে প্রথম চাপ

১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

মোদীর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন পঞ্জাবের হরসিমরত কাউর বাদল। তাঁর ইস্তফা বিজেপির জন্য বিড়ম্বনা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

https://p.dw.com/p/3iejQ
ছবি: IANS

চিরদিন সবার সমান যায় না। ভারতীয় সংসদের অলিন্দে এখন সে কথাই মূল আলোচনার বিষয়। এই প্রথম দ্বিতীয়দফার মোদী সরকার শরিক দলের কাছ থেকে একপ্রকার ধাক্কা খেল। এবং যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে পঞ্জাবের পর হরিয়ানাতেও ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ধাক্কার সূত্রপাত, কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে আনা তিনটি বিল পাস করানো নিয়ে। যার প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরসিমরত কউর বাদল। বৃহস্পতিবার অকালি দলের এই সাংসদ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আর খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী থাকতে চান না। বস্তুত, তাঁর স্বামী এবং অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিংহ বাদলও সাম্প্রতিক কৃষিক্ষেত্র সংস্কার সংক্রান্ত বিল নিয়ে সরকারের তীব্র বিরোধিতা করেন। তাঁর ইস্তফা রাষ্ট্রপতি গ্রহণও করেছেন।

পঞ্জাবের অকালি দল দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির বন্ধু। বিজেপি শাসিত এনডিএ জোটের অন্যতম সদস্য। ফলে সেই দল থেকে এ ধরনের ধাক্কা, ভবিষ্যতে বিজেপিকে চাপে ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ। বিজেপি-র সবচেয়ে পুরনো শরিক ছিল শিবসেনা ও অকালি। শিবসেনা আগেই বেরিয়ে গিয়েছে। এ বার অকালিও মন্ত্রিসভা ছাড়ল। তবে তারা আপাতত এনডিএ-তে আছে।

কেন হঠাৎ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন হরসিমরত? সংসদের বাদল অধিবেশনে তিনটি কৃষি সংক্রান্ত বিল এনেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এক, অত্যাবশ্যক পণ্য আইনের সংশোধন করে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ যত ইচ্ছে মজুত করার ছাড়পত্র দেওয়া। দুই, কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী, রফতানিকারী ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কিনতে পারবে এবং তিন, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায় ফসলের দাম নিশ্চিত করা যাবে। প্রথম বিলটি আগেই পাশ হয়ে গিয়েছিল। শেষ দু'টি বিল বৃহস্পতিবার লোকসভায় তোলা হয়।

পঞ্জাব এবং হরিয়ানাকে ভারতের ফসল ভান্ডার বলা হয়। বড় বড় চাষীরা বাস করেন এখানে। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি সংক্রান্ত এই তিনটি বিলেরই তীব্র বিরোধিতা করছেন সেখানকার চাষীরা। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিটি বিলই কৃষক স্বার্থের পরিপন্থী। কংগ্রেস, আপ সহ বিরোধী দলগুলিও এই বিলের বিরোধিতা করছে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্জাবে বনধ ডেকেছেন চাষীরা। এই পরিস্থিতিতে চাষীরা জানিয়ে দেন, পঞ্জাবের যে সাংসদরা ওই বিল সমর্থন করবেন, তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

ফলে খানিকটা বাধ্য হয়েই, চাষীদের পক্ষ নিতে হয় অকালি দলকে। কারণ, এই দলে প্রচুর বড় কৃষক আছেন। বাদল পরিবারকেও  অন্যতম বড় কৃষক বলা হয়।  বৃহস্পতিবার লোকসভায় অকালি সাংসদ সুখবীর সিংহ বাদল প্রথম ওই বিলের বিরোধিতা করেন। তিনিই স্ত্রী হরসিমরতের পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন। তবে অকালির দুই সাংসদই জানিয়েছেন, বিলের বিরোধিতা করলেও তাঁরা আপাতত এনডিএ থেকে বেরিয়ে যাবেন না। বাইরে থেকে সমর্থন করবেন।

এর আগে মোদীর মন্ত্রিসভা থেকে একমাত্র শিবসেনার এক মন্ত্রী পদত্যাগ করেছিলেন। তবে তা উদ্ভব ঠাকরের সঙ্গে বিজেপির গণ্ডগোল এবং তার জেরে উদ্ভবের সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে। ওই ঘটনাটি ছাড়া এখনও পর্যন্ত কোনও শরিক দলের মন্ত্রী এ ভাবে বিড়ম্বনায় ফেলেনি মোদী সরকারকে। অকালি সমর্থন সরিয়ে নিলেও মোদী সরকার পড়বে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতদিন মোদী সরকার দাবি করত, তাদের নিজেদের ভিতর কোনও সমস্যা নেই। বৃহস্পতিবারের ঘটনা নতুন সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়ে দিল। হরিয়ানার চাষীরাও নতুন বিল নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ফলে বিজেপির আর এক বন্ধু দুষ্যন্ত চৌটালাও এ বার বিজেপিকে চাপে ফেলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে অকালির অবস্থান নিয়ে বিরোধী শিবির যথেষ্ট ব্যঙ্গ করছে। তাদের বক্তব্য, বাদলরা যদি এতই কৃষকবন্ধু হন, তা হলে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন না কেন?

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)