বাতিল থেকে আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার!
প্রকাশকরা অনেক পাণ্ডুলিপি প্রথমে ফিরিয়ে দিয়ে পরে হা-হুতাশ করেছেন৷ এক প্রকাশক হ্যারি পটারের স্রষ্টা জে কে রাউলিং-কে তাঁর দিনের চাকরিটা না ছাড়তে বলেছিলেন!
‘হ্যারি পটার’
ব্রিটিশ লেখিকা জে কে রাউলিংয়ের প্রথম হ্যারি পটার কাহিনিটি ফিরিয়ে দিয়ে আজ অবধি আফসোস করছে ১২টি প্রকাশনী৷ শেষমেষ রাউলিংয়ের লিটারারি এজেন্ট ‘হ্যরি পটার অ্যান্ড দ্য সর্সারার্স স্টোন’ বইটি দেন এক ছোট ব্রিটিশ প্রকাশনীকে – সেটা ছিল ১৯৯৭ সাল৷ সেই থেকে বইটির কোটি কোটি কপি বিক্রি হয়েছে ও বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে৷
‘মবি ডিক’
প্রকাশকরা হার্মান মেলভিল-কে বলেছিলেন, তাঁর বইয়ের দৈর্ঘ্য বড় বেশি আর তিনি তিমিমাছের বদলে ‘মনোলোভা মহিলাদের’ নিয়ে কিছু লিখতে পারেন কিনা! বইটি শেষমেষ ১৮৫১ সালে প্রকাশিত হয়৷ মেলভিল জীবিত থাকতে ক্যাপ্টেন আহাব আর মবি ডিক নামের সাদা তিমির এই কাহিনি বিশেষ সাফল্য পায়নি৷ কিন্তু আজ বইটিকে সর্বকালের মহান মার্কিন উপন্যাসগুলির মধ্যে গণ্য করা হয়৷
‘দ্য স্পাই হু কেম ইন ফ্রম দ্য কোল্ড’
ব্রিটিশ লেখক জন ল্য কারে-র এই শীতল যুদ্ধের ক্লাসিক ও আন্তর্জাতিক বেস্টসেলারটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, কেননা প্রকাশনীর সম্পাদকের মনে হয়েছিল, এ লেখকের কোনো ভবিষ্যৎ নেই৷ ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হবার পর বইটি বছরের সেরা ক্রাইম নভেল হিসেবে ‘গোল্ডেন ড্যাগার’ পুরস্কার লাভ করে৷ দু’বছর পরে এ বইয়ের গল্প নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়৷ ব্রিটিশ গুপ্তচর অ্যালেক লিমাসের ভূমিকায় ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা রিচার্ড বার্টন৷
‘ক্যারি’
টেলিকাইনেটিক ক্ষমতাধারী কিশোরী ক্যারি’র কাহিনি ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার আগে ৩০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল৷ ‘ক্যারি’ ছিল লোমহর্ষক কাহিনি লেখক স্টিফেন কিং-এর প্রথম উপন্যাস৷ প্রকাশনার পর প্রথম বছরে বইটির দশ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয় শুধুমাত্র পেপারব্যাক সংস্করণে৷ ‘ক্যারি’-কে ভিত্তি করে এ পর্যন্ত একটি ফিল্ম ও একটি ব্রডওয়ে মিউজিক্যাল তৈরি হয়েছে৷
‘পিটার ব়্যাবিট’
দুষ্টু খরগোশ পিটারের কাহিনির অলঙ্করণও করেছিলেন বিয়াট্রিক্স পটার৷ একাধিক প্রকাশক পাণ্ডুলিপিটি ফেরত পাঠানোর পর বিয়াট্রিক্স নিজেই বইটি প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন৷ সেটা ছিল ১৯০২ সাল৷ তারপর থেকে এ পর্যন্ত পিটার ব়্যাবিট বইটি বিক্রি হয়েছে সাড়ে চার কোটি বার, ডজন-ডজন ভাষায় অনুদিত হয়েছে৷ বলতে কি, পিটার ব়্যাবিট আজও ছোটদের ক্লাসিক৷
‘লর্ড অফ দ্য ফ্লাইজ’
উইলিয়াম গোল্ডিং-এর ‘লর্ড অফ দ্য ফ্লাইজ’ বইটি ২০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল৷ এক প্রকাশক তো কাহিনিটিকে ‘একটি উদ্ভট ও নীরস কল্পনা’ বলে বাতিল করেছিলেন৷ বইটি শেষমেষ প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে৷ সে যাবৎ একদল স্কুলের কিশোরের একটি জনমানুষহীন দ্বীপে গিয়ে পড়ে শেষমেষ বর্বরতায় লিপ্ত হওয়ার কাহিনি দুনিয়া জুড়ে হাই স্কুলের পড়ুয়াদের স্কুলের পাঠ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কাহিনিটি নিয়ে একাধিক ফিল্ম তৈরি করা হয়েছে৷
‘লোলিটা’
রুশ-মার্কিন লেখক ভ্লাদিমির নাবোকোভ-কে তাঁর এই বইটির জন্য প্রকাশক পেতে বেগ পেতে হয়েছিল৷ এক সম্পাদক পরামর্শ দিয়েছিলেন, বইটিকে ‘হাজার বছরের জন্য পাথর চাপা দিয়ে রাখা হোক৷’ এক কিশোরীর প্রতি এক প্রবীণ অধ্যাপকের এই অসম অনুরাগের কাহিনি শেষমেষ প্রকাশিত হয় ফ্রান্সে, ১৯৫৫ সালে এবং তার তিন বছর পরে যুক্তরাষ্ট্রে৷ এর কাহিনি নিয়েও একাধিক ফিল্ম ও নাটক তৈরি হয়েছে৷
‘গন উইথ দ্য উইন্ড’
মার্গারেট মিচেলের লেখা মার্কিন গৃহযুদ্ধের এই মহাকাব্য প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে৷ পরের বছরই পুলিৎসার পুরস্কারে ভূষিত হয় বইটি৷ হাজার পাতার বেশি দৈর্ঘ্যের পাণ্ডুলিপিটি প্রথমে ৩৮ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল৷ ১৯৩৯ সালে মুক্তি পায় ক্লার্ক গেবল ও ভিভিয়েন লে অভিনীত ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ ছবি, যা আটটি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জয় করে৷ ছবিটি আজও হলিউডের সফলতম ফিল্মগুলির অন্যতম৷