ঘরে বসে পছন্দের বই কেনা-বেচার এমন ধারণার সঙ্গে লোকের পরিচয়ই হয়নি৷ কিন্তু তরুণ ছিলেন৷ বিশেষ করে বিদেশি বই এবং বিভিন্ন বিদেশি পত্র-পত্রিকা, যা সেই কলকাতায় একেবারেই সুলভ ছিল না, তরুণ ঠিক জোগাড় করে এনে তুলে দিতেন একেবারে পাঠকের হাতে৷ সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে৷ বইয়ের বাক্স স্কুটারে চাপিয়ে আজও ঘুরে ঘুরে বই ফিরি করেন তরুণ শ৷
আদতে ওঁরা কাশ্মীরের লোক, কিন্তু কয়েক পুরুষ ধরে কলকাতার বাসিন্দা৷ তরুণের বাবার একটা বইয়ের দোকান ছিল নিউ মার্কেটে৷ বই পড়ুয়ারা খুঁজতে খুঁজতে চলে আসতেন সেই দোকানে, দেখতেন তরুণ৷ এক পথ দুর্ঘটনায় হঠাৎ বাবা মারা গেলেন৷ ব্যবসা এবং সংসার চালানোর দায়িত্ব এসে পড়ল তরুণ আর তাঁর ভাইয়ের কাঁধে৷ সেই সময়ই ওঁদের মনে হলো, লোকে যেমন বই খুঁজতে খুঁজতে দোকানে আসেন, ওঁরাও তো তেমনই লোকের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দিতে পারেন৷ সেখান থেকেই শুরু৷ ধীরে ধীরে কলকাতার পাঠক মহলের নির্ভরযোগ্য জোগানদার হয়ে উঠলেন তরুণ৷ এছাড়াও একটা নতুন জিনিস তিনি চালু করেছিলেন৷ ধারে বই বিক্রি করা৷ বিদেশি বই, অনেক দাম, একবারে অত টাকা দেওয়া সম্ভব না — তরুণ হাসিমুখে বলেন, নিয়ে নিন না৷ পরে মাসে মাসে একটু একটু করে শোধ দিয়ে দেবেন৷ তরুণের নিয়মিত গ্রাহক যাঁরা, তাঁরা প্রশ্রয়ের সুরে অনুযোগ করেন, এই ধারে বই কেনার অভ্যেস করে দিয়েই সর্বনাশ করেছেন তরুণ৷ একটা বই কিনতে গিয়ে দশটা বই কেনা হয়ে যায়! আর ধারের অঙ্ক বাড়তেই থাকে৷
সে হিসেবে, বইপাগল এই শহর ঋণী তরুণ শ-এর কাছে৷