1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেট: শুধু একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে চাই

শামীমা নাসরিন
২৬ মে ২০২৩

কেমন বাজেট চান? একজন মধ্যবিত্ত হিসেবে এ প্রশ্ন আমার কাছে বড়ই অবান্তর! শুধু আমার কাছে নয়, পুরো বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের কাছেই এই প্রশ্নের আজ কোনো মানে নেই৷

https://p.dw.com/p/4RqEI
ঢাকার একটি বাজার৷
বাজারে পেঁয়াজ ৮০, চিনি ১২৫, আদা ৫০০! মাছ-মাংস, চাল-তেলের দামতো সেই কবেই আকাশ ছুঁয়েছে৷ছবি: Rashed Mortuza/DW

বাজারে পেঁয়াজ ৮০, চিনি ১২৫, আদা ৫০০! মাছ-মাংস, চাল-তেলের দামতো সেই কবেই আকাশ ছুঁয়েছে৷ মধ্যবিত্ত মাথা ঢাকবে নাকি পা..ভেবে কূল পাচ্ছে না৷ সেখানে বাজেটে কী হবে না হবে তা নিয়ে ভাবার অবস্থা তার কী সত্যিই আছে?

সে শুধু একটা কথাই জানে, বাজেট মানে আরো একদফা বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং তার মাথার উপর করের বোঝাটা আরেকটু ভারি হওয়া৷ আমি তো সেটাই দেখে আসছি গত বেশ কয়েক বছর ধরে৷

আগামী ৩১ মে বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে৷ ধারা মেনে পয়লা জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে৷

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে নানা সংবাদ ঘেঁটে ‍জানতে পেরেছি এ বছর সাড়ে সাত লাখ কোটির বেশি টাকার বাজেট হতে যাচ্ছে৷ বাংলাদেশে বরাবরই ঘাটতি বাজেট হয়৷ এ বছরও নিশ্চয়ই তার ব্যত্যয় হবে না৷

কিন্তু সমস্যা হলো, এ বছর পরিস্থিতি অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি খারাপ৷ কোভিড-১৯ মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্বই টালমাটাল৷ বাংলাদেশও প্রবৃদ্ধির যে ধারায় ছিল, সেটা আর নেই৷ বরং প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে৷ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঝুঁকিপূর্ণ মাত্রায় কমে গেছে৷ সরকারকে তাই ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ ডলার বাঁচাতে বন্ধ রাখতে হচ্ছে আমদানি৷

আর এই সুযোগটাই নিচ্ছে দেশের এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা৷ এই যেমন, বাজারে পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা৷ পাশের দেশ ভারতেই তো পেঁয়াজ কেজি ২০ রুপি দরে বিক্রি হচ্ছে৷

বার বার আমদানি করার হুঁশিয়ারি দিয়েও কেনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?

কয়েকদিন আগে সমকালের প্রথম পাতায় দেখলাম ‘মজুতদাররাই পেঁয়াজের কারসাজির হোতা'৷ খবরে এ বছর দেশে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হওয়ার কথা বলা হয়৷ কয়েক লাখ টন আমদানিও করা হয়েছে, মজুতও পর্যাপ্ত৷ তবে কেনো একমাসের ব্যবধানে নিত্য এই পণ্যটির দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেলো৷ সমকালের প্রতিবেদনে এজন্য আড়তদারদের দায়ী করা হয়েছে৷ বলেছে, তারা বাজার কবজায় নিয়ে নিয়েছে৷

এই আড়তদাররা কী মঙ্গল গ্রহে থাকেন, যে সরকার তাদের ধরতে পারছে না৷

একই অবস্থা ব্রয়লার মুরগির বেলাতেও দেখা গেছে৷ মধ্যবিত্তের প্রোটিনের মূল উৎস ছিল এই ব্রয়লার মুরগি ও ডিম৷ দুইটি পণ্যের দামই এখন হাতের নাগালের বাইরে৷

রোজার মধ্যে মুরগি নিয়ে খুব আলোচনা চললো, সে সময় বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি আড়াইশ টাকা ছাড়িয়ে ছিল৷ অথচ উৎপাদন খরচ অর্ধে!

বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় সে সময় বলা হলো, মুরগি উৎপাদনকারী বড় কর্পোরেট, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী- তিন পক্ষই মুরগিতে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছে৷ আর তাতে ঘাড় ভাঙছে সাধারণ মানুষের৷ সন্তানের পাতে প্রতিদিন একটি ডিম তুলে দিতে না পারার অক্ষমতা আমাদের কুরে কুরে খাচ্ছে৷

বড় বড় কর্পোরেট, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে কেনো থাকবে বাজারের লাগাম৷ বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, মুরগির কেজি ২০০ টাকার উপরে হওয়ার কোনো যুক্তি নেই৷ তারপরও এখনো কেনো দাম আড়াইশ ছুঁই ছুঁই৷

পণ্যের দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের বাধ্য করতে সরকার থেকে বার বার আমদানি করা হবে বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তো জানে সরকারের ‍অবস্থা....

তাই বিশ্ব বাজারে যখন নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে, তখন আমাদের এখানে তা কেবলই বেড়ে যাচ্ছে৷ নানা ছুতায়, নানা অজুহাতে৷ এটা দেখার যেন কেউ নেই! এই অরাজকতা আর নেয়া যাচ্ছে না৷

এবারের বাজেটে তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আমার চাই৷ চাই আমার উপর নতুন করে করের বোঝা যেনো আর বাড়ানো না হয়৷

কিন্তু আমার এই চাওয়া কথা কী সরকার বিবেচনায় নেবে? সামনেই বাংলাদেশে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন৷

নির্বাচনী বছরের বাজেটগুলোতে সাধারণত সরকার জনতুষ্টির দিকে ‍অধিক মনযোগ দেয়৷ যাতে ভোটারা সন্তুষ্ট থাকেন৷ যদিও বাংলাদেশে বর্তমানে ভোটারদের কোনো গুরুত্ব প্রকৃতপক্ষে আছে কিনা তা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান৷

বরং হয়তো নিজেদের নির্বাচনী প্রচার আরো আরো জাঁকজমকপূর্ণ করতে সরকার দৃশ্যমান অবকাঠামো নির্মাণ বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াবে৷ ‍অথচ, অর্থনীতিবীদরা বার বার রিজার্ভের এই সঙ্কটময় সময়ে এখনই প্রয়োজন নয় এমন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ না করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন৷ উদাহরণ হিসেবে তারা শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির কথা বলছেন৷

অর্থনীতিবীদদের কাজ সরকারকে পরামর্শ দিয়ে যাওয়া৷ মানা না মানা তো পুরোপুরি সরকাররের উপর নির্ভর করে৷ জানি, বাজেট তারা দেবেন নিজেদের স্বার্থ বুঝে...

আমি শুধু চাই, নতুন বাজেটের পর নিত্যপণ্যের বাজার একটু নাগালে আসুক৷ বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে৷ অথচ ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ নানা দেশে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে৷

শামীমা নাসরিন, সাংবাদিক
শামীমা নাসরিন, সাংবাদিকছবি: privat

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তাই বাজেটে টেকসই উদ্যোগ নেওয়া হোক৷ জানি বাজার পূর্বের অবস্থায় ফেরানো এখনই সম্ভব নয়৷ কিন্তু বর্তমান অরাজকতাও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছে৷

বিশ্ব বাজারে দাম কমলেও কোনো বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে৷

সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক রায়হান বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কী করা হচ্ছে, বাজেটে সেটার পরিষ্কার ধারণা তৈরি করতে হবে৷

‘‘দেশে চলমান সংকটগুলো কীভাবে সামলানো হবে, তার সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও বাজেটে থাকা দরকার৷ না হলে বৃহৎ সংখ্যার জনগোষ্ঠী মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের বিপদে পড়ে যাবে৷”

অধ্যাপক রায়হান বৃহৎ সংখ্যার জনগোষ্ঠী বলতে তো মধ্যবিত্তকেই বোঝাতে চেয়েছেন৷ এক সময়ে যাদের সমাজের মেরুদণ্ড বলা হতো৷

মেরুদণ্ড ভেঙে গেলে হাঁটতে পারবেন তো?

১১ মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান