1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

১৩ জুন ২০১৯

ক্ষমতাসীন দল ও শরিক এবং সংসদে প্রধান বিরোধী দল এবারের বাজেটকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে৷ তবে বিএনপি বলছে, এবারের বাজেট জনবান্ধব নয়৷

https://p.dw.com/p/3KNi1
Bangladesch - Finanzminister Ahm Mustafa Kamal gibt Haushalt für Geschäftsjahr 2019-20 bekannt
ছবি: PID

 

জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

জাহাঙ্গীর কবির নানক

এবারের বাজেট জনগণের জন্য জনকল্যাণমুখী৷ এটাকে সাধারণ গরিব-দুঃখী মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ বাজেট বলা যেতে পারে৷ এর মধ্য দিয়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে৷ একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে নির্বাচনী ইশতাহার দিয়েছেন, সেই অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে, দেয়া হয়েছে এই বাজেট৷ সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের যে সমালোচনা করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন৷ সমালোচকদের কেউই সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ করেননি৷ বরং তারা গৎবাঁধা কিছু কথা ঢালাওভাবে বলার চেষ্টা করছেন৷ বাজেটে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব৷ এমনকি ঘাটতি কিভাবে পূরণ করা হবে, সে বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে রয়েছে৷ সার্বিকভাবে বলতে চাই, এবারের বাজেট জনকল্যাণমুখী বাজেট৷

 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

গত বিশ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে শৃঙ্খলা এসেছিল, সেটা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন৷ বলতে গেলে বিনিয়োগ স্থবির৷ আর পেছনে রয়েছে আস্থার সংকট, ব্যাংকে তারল্য সংকট, ব্যাংকে টাকাও জমা পড়ছে না, ব্যাংক যে ঋণগুলো দিয়েছে, সেগুলো সব কুঋণ হয়ে গেছে, ফলে সেগুলোও তারা পাচ্ছে না৷ সামষ্টিক অর্থনীতিতে এটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ বিনিয়োগ না হলে উন্নয়ন আসবে না৷ সরকার দেশকে ঋণফাঁদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ ঋণ যখন পরিশোধ করতে হবে, তখন ব্যালেন্স অব পেমেন্টে বড় সমস্যা দেখা দেবে৷ এর মধ্যেই সেটা ঋণাত্মক হয়ে গেছে৷

দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগ না বাড়ার কারণে করের পরিমাণও বাড়ছে না৷ কর আদায় কম হওয়ার কারণে সরকার ঋণ-নির্ভর হয়ে পড়ছে৷

প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এর সঙ্গে যে অন্য অনুষঙ্গগুলো আছে, সেগুলোর সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই৷ যেখানে বিনিয়োগ নেই, ব্যাংকে তারল্য নেই, শেয়ার বাজারের কার্যকারিতা নেই, বেকারত্ব কমছে না, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, সেখানে প্রবৃদ্ধি কী করে হবে?

বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে ঘটনা ঘটেছে, মানবাধিকারের বেলায় যা হয়েছে, ঠিক তেমনি অর্থনীতিটাও কিছু মানুষের হাতে চলে গেছে৷

জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নেই, সিদ্ধান্ত প্রণয়নে জনগণের অংশগ্রহণ নেই৷এটা কোনোভাবেই জনবান্ধব বাজেট নয়৷ সামষ্টিক অর্থনীতির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, নিজের খেয়াল-খুশি মতো বিনিয়োগ করবেন, কম টাকার প্রকল্পকে বেশি টাকার বানাবেন, সেই টাকা আবার বিদেশে পাচার করবেন, ফলে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে, আমদানি আর রপ্তানির ফারাক বড় হচ্ছে, ফলে এই বাজেট জনগণের কোনো উপকারে আসবে না৷ একটা শ্রেণির মানুষ হয়তো লাভবান হবে৷ সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না৷

হাসানুল হক ইনু, সভাপিত, জাসদ

হাসানুল হক ইনু

সামরিক শাসন ও সাম্প্রদায়িক সরকারগুলোর বিশৃঙ্খলার অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ধারাবাহিকতায় ১১তম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই বাজেটের ইতিবাচক দিক হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে ৭ থেকে ৮-এর ঘরে থাকা প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার অঙ্গীকার এখানে আছে৷ মুদ্রাস্ফীতিকে ৬-এর নীচে রাখা, দারিদ্র্য বিমোচনের হার আরো কমিয়ে আনা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে বাজেটে৷ থাকছে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর সুযোগ৷ সব মিলিয়ে, সামষ্টিক অর্থনীতিকে আরো একধাপ এগিয়ে নেয়ার বাজেট এটি৷ সমালোচকরা গতবারও সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে নানা কথা বললেও, কাজে তাদের মিথ্যে প্রমাণ করা হয়েছে৷ এবারের বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো৷ তবে চ্যালেঞ্জ হবে, বাড়তি যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করা, যাতে সাধারণ মানুষ সুফল পেতে পারে৷ আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, রেমিটেন্স প্রদানকারীরা ২ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন৷ আমার দাবি থাকবে, প্রকৃত রেমিটেন্স প্রদানকারীদের জন্য এই সুবিধাটা নিশ্চিত করতে হবে৷ দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভূক্তির জন্য থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আশা করি, আগামী বছরগুলোতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে৷ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে৷ আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়বে৷ তবে নতুন ভ্যাট আইন কিভাবে কার্যকর করা হবে, সেটা এখন দেখার বিষয়৷ কারণ, এটি নিশ্চিত করতে হলে, ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে৷

জি এম কাদের, ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান, জাতীয় পার্টি

জিএম কাদের

বড় বাজেট হয়েছে, কিন্তু নেতিবাচকভাবে দেখছি না৷ বরং ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই৷ কারণ, আমাদের মতো দেশে সরকার বড় প্রকল্প নেবে, বড় বাজেট দেবে, তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবে-এটাই আমার চাওয়া৷ যে বিষয়টি কিছুটা হলেও আমাদের ভাবাচ্ছে, তা হলো, প্রচুর ঘাটতি৷  রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য এবার গতবারের সংশোধিত বাজেটের চেয়েও বাড়িয়ে রাখা ধরা হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে ঘাটতি আরো বাড়তে পারে৷ ফলে উন্নয়ন বাজেট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে৷ তেমন পরিস্থিতি হলে, আমরা সেটাতে একমত হতে পারবো না৷ কারণ, জনগণের স্বার্থে যে উন্নয়ন দরকার, সেটা হওয়া উচিত৷ রাজস্ব বাজেটে খাত অনুযায়ী যে বরাদ্দ সেখানে বৈষম্য আসতে পারে৷ ফলে সমন্বয় করতে গিয়ে জনকল্যাণমুখী খাত, যেমন স্বাস্থ্য থেকে বরাদ্দ কমানো হয়, সেটা হবে দুর্ভাগ্যজনক৷ আর ঘাটতি পূরণে সরকার যে কৌশল নিয়েছে, সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে আশঙ্কা আছে৷ সেক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে, তারল্যে সংকট আরো বাড়তে পারে৷ ফলে বাণিজ্যের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও কমে যেতে পারে৷ আর যদি সঞ্চয়পত্র দিয়ে ঋণ নেয়, সেটার সমস্যা হচ্ছে সুদের হার অনেক বেশি, যা পরবর্তীতে আমাদের অর্থনীতিতে একটা চাপ তৈরি করবে৷ আমরা আশা করছি, সরকার এসব দিকে দৃষ্টি দেবেন, বাজেট বাস্তবায়নের সময় জনকল্যাণমূলক বরাদ্দ যাতে কাটছাঁট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য