1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাঙালি নারীর ফ্যাশন এবং...

গোলাম মোর্তোজা
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঊনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগ পর্যন্ত বাঙালির সেলাইবিহীন পোশাক পরিধানের তথ্য জানা যায়৷ ড. নীহাররঞ্জন রায় তার ‘বাঙালীর ইতিহাস’ বইয়ে বিস্তারিত লিখে গেছেন৷ তবে এর পরের শতাব্দিতে পোশাকের ইতিহাস অত্যন্ত গতিশীল৷

https://p.dw.com/p/3PAZD
প্রতীকী ছবিছবি: Sazzad Hossain

ইতিহাসের সেদিকে যাব না৷বাঙালি নারীর পোশাক বা ফ্যাশন সচেতনতা বিষয়ে দু'একটি কথা বলা যাক৷

বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ১৯৩২ সালে৷ পরনে শাড়ি, এমন বেগম রোকেয়াই বেঁচে আছেন বাঙালির দৃশ্যপটে৷ বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের আরেক সাহসী নারী বেগম সুফিয়া কামাল৷ শাড়ি পরিহিত সুফিয়া কামালই রয়ে গেছেন বাঙালির দৃশ্যপটে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আওয়াজে দেশ কাঁপানো জননী জাহানারা ইমামকেও বাঙালি মনে রেখেছেন শাড়ি পরিহিত অবয়বেই৷ শাড়ি বাঙালির প্রিয় পোশাক, রুচিশীল-মার্জিত-আকর্ষণীয় পোষাক৷ বিচিত্র রঙ-ঢঙ্গের শাড়ি,বহু ঢঙ্গে-রীতিতে পরিধানের বর্ণনা ইতিহাসে পাওয়া যায়৷ 

আবার ব্রিটিশ শাসনকালেও বাঙালি নারীর সালোয়ার-কামিজ পরতেন৷

বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক বিষয়ে অনেক কিছু লেখার উপাদান আছে৷ বাঙালি নারীর নিজস্ব পোশাক কী? এই প্রশ্নের সহজ-সরল উত্তর জানা নেই৷ কেউ জানেন কিনা,তাও জানিনা৷ যতটা জানি, বহু বর্ণ গোত্রের থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আসা পোষাকই বাঙালি নারীর পোশাক হয়ে উঠেছে৷
গত ৩০ বা ৩৫ বছরে পোষাকে বাঙালি নারীর ফ্যাশন সচেতনতা বহুগুণ বেড়েছে৷ শাড়ি-সালোয়ার কামিজের পাশাপাশি পশ্চিমা পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে বাঙালি নারী৷ পশ্চিমের মেয়েদের মত অত ছোট পোষাকে অভ্যস্ত না হলেও, জিন্স-টিশার্টের মত পোষাককে বাঙালি নারীরা প্রিয় করে নিয়েছে৷ ফ্যাশনে থ্রি পিস হয়ে যাচ্ছে টু পিস৷ আরও বহু রকমের দেশ বিদেশের পোশাকের সঙ্গে নিজেকে অভ্যস্ত করে নিয়েছে বাঙালি নারী৷ শাড়ির গ্রহণযোগ্যতা-আকর্ষণ কমেনি একটুও৷ একই সঙ্গে বাঙালি নারীর একটি বড় অংশের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হিজাব৷ পূর্বের রীতিতে বাঙালি নারীদের মধ্যে সাধারণত বয়স্কদের বোরকা পড়ার চল ছিল৷ তা এখন যে নেই তা নয়৷ তবে কম বয়সী মেয়ে-নারীদের হিজাব পড়ার প্রবণতা বেড়েছে৷ ফলে পোশাক নির্বাচন বা ফ্যাশন সচেতনতায় বাঙালি মেয়ে-নারীদের এক বাক্যে চিত্রিত করা যাবে না৷ জিন্স-টিশার্ট বা আরও ছোট পোশাক যেমন শহরের অনেক মেয়েদের প্রিয় পোশাক৷ হিজাবপ্রিয়দের সংখ্যাও কম নয়৷ জেলা বা গ্রাম পর্যায়ে হিজাবের সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে৷ বহুজাতিক কোন্পানিগুলো তাদের প্রসাধন সামগ্রীর বিজ্ঞাপন করছেন হিজাবের সঙ্গে মিলিয়ে ৷

সামগ্রিকভাবে বলা যায়,সময়ের সঙ্গে মিল রেখে বাঙালি নারীদের ফ্যাশন সচেতনতাও এগিয়ে চলছে৷ বর্তমানের ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে কবে কোথায় কী ঘটছে,তা জানা সহজ৷ সেই ধারাবাহিকতায় দিল্লি বা প্যারিসের আজকের ফ্যাশনের সংবাদ পৌঁছে যায় ঢাকার মেয়ে-নারীদের কাছেও৷ পোষাক বা ফ্যাশন একটি দেশ বা অঞ্চলের আবহাওয়া-পরিবেশ-প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত৷ ফলে সব পোষাক সব অঞ্চলের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়তা পায় না৷এবং জীবনের মত পোশাকও বিবর্তনশীল৷ ফ্যাশন বা পোশাকের সেই বিবর্তনশীলতার সঙ্গেই আছে বাঙালি নারী-মেয়েরা৷
মানুষ পোষাক পরে কেন? শরীরের কিছু অংশ ঢেকে রাখার জন্যে মানুষ পোশাক পরেন৷নিজেকে সুন্দর-আকর্ষণীয় রূপে উপস্থাপনের জন্যে মানুষ পোশাক পরে৷ সাধারণত মানুষ রূপচর্চাও করে সে কারণেই৷ শুধু নিজের ভালো লাগার থেকে পোষাক নির্বাচন করেন না, রূপচর্চা করেন না৷অন্যের চোখে তাকে সুন্দর বা আকর্ষণীয় দেখা যাবে,সেই বিবেচনাটা মূখ্য থাকে৷ 

Bangladesh Journalist Golam Mortoza
গোলাম মোর্তোজা, সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্বছবি: Golam Mortoza

তবে পৃথিবীতে শিল্প-সাহিত্যের বর্ণনায় নারীর বহুবিধ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷নারীর সৌন্দর্যের বর্ণনা পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত শিল্পীর তুলিতে, লেখকের কলমে,কবির কবিতায় স্থান করে নিয়েছে৷ কোন পোশাক কে পরবেন,সেটা তার রুচির বিষয়৷ কাকে কোন পোশাকে ভালো বা আকর্ষণীয় বা আবেদনময়ী লাগে, সেটাও যিনি দেখছেন তার বিষয়৷ দেহের বর্ণনা দেওয়া যেমন কবির কাছে অপরাধ নয়৷ নারী বা পুরুষ তার পছন্দ অনুযায়ী যেমন পোশাক পরতে পারেন, কোন পোষাকে কাকে কেমন লাগে, শরীরের কোন অংশ বের করে বা ঢেকে রাখলে কেমন লাগে, তার বর্ণনা একজন শিল্পী-সাহিত্যিক-কবি দিবেন বা দিতে পারবেন,সেটাই স্বাভাবিক৷

রূপ, সৌন্দর্য বা ফ্যাশন নিয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে,যুক্তি দিয়ে লেখা যেতে পারে৷ তবে চরিত্রহনন বা বিষেদগার আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও ফ্যাশনের সঙ্গে বেমানান৷ বাঙালি নারীর ফ্যাশন সচেতনতা সময়ের সঙ্গে মিল রেখে সামনের দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকুক৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷