বাংলাদেশের সোনালি আঁশ
বাংলাদেশের ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাট মাঝে মুখ থুবড়ে পড়লেও আবার সেই সোনালি অতীত ফিরতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম অর্থকরী এই ফসলের। ফরিদপুর জেলায় পাট চাষ নিয়ে এই ছবি ঘর৷
হারানো সুদিন
অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পাট চাষের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম উপযোগী জায়গা। সুদূর অতীতেই বাংলাদেশের পাট সোনালি আঁশের মর্যাদা পেয়েছিল। মাঝে সিনথেটিক ফাইবারের ব্যাপক ব্যবহার ও নানা কারণে পাটের সেই সুদিন প্রায় হারাতে বসেছিল বাংলাদেশ।
নতুন সম্ভাবনা
বাংলাদেশের পাট আবার সেই সুদিন ফিরে পেতে শুরু করেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক আঁশের ব্যাপক চাহিদা এবং রাষ্ট্রের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে বাংলার পাট আবার নতুন সম্ভাবনার মুখ দেখতে শুরু করেছে।
পরিবেশবান্ধব
পাট বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব আঁশ। এ কারণে পৃথিবীজুড়ে দিন দিন এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।
ফরিদপুরের পাট
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয় ফরিদপুর জেলায়। এ জেলার নয়টি উপজেলাতেই কম বেশি পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী, মধুখালী, সালথা ও নাগরকান্দায় সবচেয়ে বেশি পাট চাষ হয়৷
পাটের উৎপাদন
চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে। আর এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার ১৫১ বেল।
ফলন ভালো, তবে...
এ বছর ফরিদপুরে পাটের ফলন ভালো হলেও পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। পানি সংকটের কারণে অনেকেই জমি থেকে এখনো পাট কাটতেই পারছেন না।
আঁশ ছাড়ানো
পাট শুকানোর জন্য শুকনো ক্ষেত এবং বাড়ির আঙিনার পাশাপাশি আশপাশের খোলা জায়গা বেছে নেওয়া হয়৷ ফরিদপুরের ছোট বড় সব সড়কের পাশেই এখন দেখা যায় পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত কিষাণী বা শ্রমিকরা।
নারী শ্রমিকের পারিশ্রমিক
ক্ষেত থেকে কেটে জাগ দেওয়ার পর থেকে পাটের আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে নারী শ্রমিকরাই বেশি অংশ নেন। পরিবারের নারী সদস্যরাও এ কাজটি করে থাকেন।
পারিশ্রমিক পাট কাঠি
ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া হয় শুধুই পাটকাঠি। দিনে যে পরিমাণে পাটের আঁশ কাঠি থেকে ছাড়াতে পারবেন সেটাই হবে একজনের পারিশ্রমিক।
আঁশ ধোয়া
পাটের আঁশ ছাড়ানোর পর ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়। এ কাজটি করেন সাধারণত পুরুষরা। খালে বা জলাশয়ে দলবেঁধে এ সময়ে পাটের আঁশ ধোয়ার কাজ করেন তারা।
চারদিকে শুধুই পাট
ফরিদপুরের প্রতিটি এলাকায় যে দিকে দুচোখ যায় শুধুই পাট আর পাট। জলাশয়গুলোর আশপাশে উঁচু জায়গাগুলোতে শুকাতে দেওয়া পাট আর পাট কাঠির স্তূপ।
পাটের হাট
মৌসুমে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসে পাটের হাট। এখানকার সবচেয়ে বড় পাটের বাজার হলো মালিগ্রাম ও কানাইপুর হাট।
পাটের দাম
ফরিদপুরের বাজারগুলোতে এ বছর ভালো রঙের পাট প্রতি মণ ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা, আর ধূসর পাট প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৯০০ টাকায়।
কৃষকের প্রত্যাশা
ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকার চাষী আনোয়ার হোসেনের ভাষ্যমতে, প্রতি মণ পাট উৎপাদনে তার খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তাই পাটের ন্যূনতম দাম ৩০০০ টাকা মণ হলে কৃষকরা লাভবান হবেন।