1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৭ নভেম্বর ২০১৭

ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী সুদৃঢ় করতে কলকাতা ও খুলনার মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় যাত্রিবাহী ট্রেন৷ খুলে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস নদীর ওপর রেলসেতু৷ অর্থাৎ জলপথ এবং আকাশ পথেও বাড়ানো হচ্ছে দু'দেশের মধ্যে যোগাযোগ৷

https://p.dw.com/p/2nmmM
কলকাতা-খুলনা রুটে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস
ছবি: DW/P. Mani

ভারত ও বাংলাদেশ পারস্পরিক যোগাযোগ পরিকাঠামোর বিকাশে বিভিন্ন প্রকল্প গড়ে তুলছে৷ তারই অঙ্গ হিসেবে কলকাতা-খুলনা এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রারম্ভ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একসঙ্গে সবুজ পতাকা নেড়ে শুভারম্ভ হয় ‘বন্ধন এক্সপ্রেস'-এর৷ পুরো বাতানুকুল এই বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনটির বাণিজ্যিকভাবে যাত্রারম্ব হয় গত ১৬ই নভেম্বর কলকাতা থেকে সকাল ৭টা-১০ মিনিটে৷ ১৫৭ কিলোমিটার পথ, অর্থাৎ কলকাতা থেকে খুলনা পৌঁছাতে লাগে ঘণ্টা চারেক৷ ফিরতি পথে বেলা দেড়টায় খুলনা থেকে ছেড়ে কলকাতা বন্ধন পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ৷ এবার থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার নিয়মিতভাবে যাবে এই ট্রেন৷

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে দু'দেশের মধ্যে শুরু হয় প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন‘মৈত্রী এক্সপ্রেস'৷ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দু'দেশের প্রান্তিক স্টেশনগুলিতে থাকছে অভিভাসন ও শুল্ক পরীক্ষার আধুনিক সুবিধা৷ অর্থাৎ  যাত্রাকালীন সময় আরো ঘণ্টা তিনেক কম লাগবে৷ এছাড়া এ উপলক্ষ্যে কলকাতায় এক আন্তর্জাতিক যাত্রী টার্মিনাসও চালু করা হচ্ছে৷

দু'টি ট্রেনের প্রথমটির নাম ‘মৈত্রী' দ্বিতীয়টির নাম ‘বন্ধন'৷ দুয়ে মিলে মৈত্রী-বন্ধন৷ একেবারে সার্থক নাম৷ নিবিড় মৈত্রী বন্ধনে জুড়ে যাবে প্রতিবেশী দু'টি দেশ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষায়, ‘‘আমি খুশি যে উভয় দেশের জনগণ এবার খুব সহজেই একে-অপরের আরও কাছাকাছি আসতে পারবে৷''

সেই সঙ্গে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ভৈরব এবং তিতাস নদীর ওপর দু'টি নতুন রেলসেতু ট্রেন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে৷ এই দু'টি রেলসেতু তৈরি হয় ভারতের ৬৫২ কোটি টাকার ঋণ সাহায্যে৷ এতে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের প্রভূত উন্নতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ ১৯৬৫ সালের আগে দু'দেশের মধ্যে (তত্কালীন পাকিস্তান) যেসব রেল সংযোগ ছিল, তা আবারো চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৫ সালে মোদী-হাসিনা শীর্ষ বৈঠকে৷ আশার বিষয়, এই ধরনের ছ'টি রেল সংযোগের মধ্যে চারটি ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে৷ এই চারটি হলো – পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে পেট্রাপোল-বেনাপোল, গেদে-দর্শনা, সিংহবাদ-রোহনপুর এবং রাধিকাপুর-বিরল৷ অন্য দু'টি রেলপথও শীঘ্র চালু করা হবে৷ করিমগঞ্জ-শাহবাজপুর এবং হলদিবাড়ী-চিলহাটির মধ্যে৷ এই দু'টি রেললাইন চালু হলে ভারতের আসাম, তথা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হবে৷ তবে এ জন্য অতিরিক্ত আরও চার কিলোমিটার নতুন রেললাইন বসাতে হবে ভারতকে৷

এখানেই শেষ নয়৷ অতিরিক্ত আরও দু'টি নতুন রেলপথ তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ এর একটি আগরতলা-আখাউরা এবং অন্যটি বেলোনিয়া-ফেনি হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত৷ এতে ত্রিপুরা, তথা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে৷ ইতিমধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশের কন্টেনার কর্পোরেশনগুলির মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ‘কন্টেনার সার্ভিস'৷

এছাড়া গত বছর দু'দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ জলপথ বাণিজ্য, তথা ট্রানজিট সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি অনুসারে পণ্য পরিবহন বা ‘ট্রান্সশিপমেন্ট' বাংলাদেশের আশুগঞ্জে পৌঁছায়৷ সমুদ্রপথেও বাংলাদেশগামী বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরগুলিকে ‘ট্রানজিট' বন্দর হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে৷ ফলে পণ্য পরিবহনের সময় বর্তমানের ৩০-৪০ দিন থেকে কমে হবে ৪ থেকে ১০ দিন৷ এছাড়া, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আছে ৪৯টি স্থল শুল্ক এবং দু'টি সুসংহত ‘চেকপোস্ট'৷ এরমধ্যে ৩৬টি চালু আছে৷ শুধু পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তপথ দিয়েই চলাচল করে দু'দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ বাণিজ্যিক পণ্য৷ এ বছরের ১লা আগস্ট থেকে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা তা খোলা আছে৷ আর ভারতের মেঘালয় এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সঙ্গে চারটি সীমান্ত হাট আছে৷ শোনা যাচ্ছে, আরো দু'টি বাড়ানো হবে শীঘ্রই৷

দু'দেশের বর্তমান বিমান পরিষেবায় সপ্তাহে ১০০টি উড়ান চালু আছে৷ দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাই এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে৷ উড়ান সংখ্যা আরো বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে দু'টি দেশই৷ অন্যান্য শহরগুলিকেও বাংলাদেশ বিমান পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত করা হবে৷ আর এতে বাংলাদেশে বিমানবন্দরগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পেও সহযোগিতা করছে ভারত৷বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বাত্মক যোগাযোগ পরিকাঠামোর বিকাশের তাত্পর্য সম্পর্কে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘সম্প্রতি চীন আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলি, বিশেষ করে বাংলাদেশের দিকে নজর বাড়িয়েছে৷ এমনকি মাস দুয়েক আগে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে একটি ডুবোজাহাজ পর্যন্ত দিয়েছে চীন৷ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ক্রমশ ঢুকে পড়ছে দেশটি৷ এ অবস্থায়, চীনকে ঠেকাতে ভারতও প্রতিবেশী দেশগুলিকে, বিশেষ করে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি৷ কাজেই প্রথম ‘ফ্যাক্টর' চীন৷ দ্বিতীয়ত, মৌলবাদী সংগঠনগুলিকে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে তা ভারতের কাছে খুবই আশাপ্রদ৷ তাই মোদী সরকার চাইছে আগামী নির্বাচনেও শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসুক৷ এর প্রেক্ষিতেই ভারত চাইছে যেসব প্রকল্প রূপায়ণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়িত হোক৷ এরমধ্যে ‘কানেক্টেভিটি' বা যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম৷''

বিশ্বনাথ চক্রবর্তী

বাংলাদেশের অন্য কোনো গন্তব্য থেকে সরাসরি ভারতে রেল যোগাযোগ কি জরুরি? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য