1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের কারণে আটকে যাচ্ছে ‘‌বাংলা'‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ নভেম্বর ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘‌বাংলা'‌ করতে চেয়েছিল মমতা ব্যানার্জির সরকার৷ কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির নাম যেহেতু বাংলাদেশ, মূলত সেই যুক্তিতেই আপত্তি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷

https://p.dw.com/p/38UfG
West Bengal Chef-Ministerin Mamata Bannerjee
ছবি: UNI

পশ্চিমবঙ্গের নাম পালটেবাংলা করার প্রস্তাব নিয়ে শুরুতেই এই আপত্তি ছিল৷ প্রথমত, একটি ভাষার নামে কোনো অঙ্গরাজ্যের নাম হয় কিনা, সেই নিয়ে সমালোচনা ছিল গোটা দেশজুড়েই৷ এবং সোশাল মিডিয়ায় এই নিয়ে অসংখ্য রসিকতা ছড়িয়ে পড়েছিল৷ মূল কটাক্ষ ছিল পশ্চিমবঙ্গের দেশী মদ নিয়ে, যার বাজারচলতি নামও বাংলায়৷ হিন্দিতে একাধিক ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরি হয়েছিল, যার বক্তব্য ছিল— বাংলার লোক, বাংলা বলে, বাংলা লেখে, আবার বাংলা খায়, অর্থাৎ পান করে৷ হিন্দি বলয়ে এটাও আবার বাঙালিকে নিয়ে একটা বাড়তি রসিকতা যে, বাঙালি সবই খায়৷ ভাত, জল, বিড়ি–সিগারেট৷ কিন্তু এইসব রঙ্গ-ব্যঙ্গের থেকে দূরে একটা যুক্তিপূর্ণ প্রতিবাদ উঠেছিল যে, ঐতিহাসিক কারণেই পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলানো উচিত নয়৷ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গ আলাদা হয়েছিল৷ পরে পূর্ববঙ্গ স্বাধীন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়৷ কাজেই পূর্ববঙ্গ এখন আর নেই বলে পশ্চিমবঙ্গও থাকবে না, এই কুযুক্তি আসলে ওই ঐতিহাসিক সত্যতাকে অস্বীকার করার শামিল৷ রাজ্যের নাম বদলালে যে বিপুল পরিমাণ খরচ হবে সমস্ত সরকারি নথিপত্রে নতুন নাম চালু করতে গিয়ে, সেই বাস্তবিক অসুবিধার কথাও উঠেছিল৷ এবং বড় আপত্তি উঠেছিল, প্রতিবেশী দেশটির নাম যেহেতু বাংলাদেশ, সেই কারণে৷ ডয়চে ভেলেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেছিলেন, বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যটির নাম বদলে বাংলা হলে চূড়ান্ত বিভ্রান্তির সম্ভাবনা৷ আঞ্চলিক থেকে আন্তর্জাতিক স্তর পর্যন্ত যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যেতে পারে৷ কাজেই নাম বদল না হওয়াই বাঞ্ছনীয়৷

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হালফিলের রীতি অনুযায়ী বিরোধীস্বরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ তৃণমূল বিধায়কদের সম্মতিতে পাসও হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের নাম বদলের সেই প্রস্তাব৷ কিন্তু সেই সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত আটকে গেল কেন্দ্র সরকারের কাছে পৌঁছে৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সঙ্গত কারণেই আপত্তি করল যে, প্রতিবেশী দেশ যেহেতু বাংলাদেশ, রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধে হতে পারে৷ কাজেই অনুমোদন না দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিদেশ দপ্তরের বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে৷ এবং সেখানেও এই প্রস্তাব নাকচ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি৷ রাজ্য সরকার, বলাই বাহুল্য, এই অসম্মতিতে চূড়ান্ত অখুশি৷ কথা উঠছে, উত্তরপ্রদেশ সরকার একদিকে যখন ঢালাও হারে বিভিন্ন জায়গায় নাম বদলে দিচ্ছে, মোগলসরাই জংশনের মতো বিখ্যাত স্টেশনের নাম হয়ে যাচ্ছে দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন, এলাহাবাদ শহর হয়ে যাচ্ছে প্রয়াগরাজ, ফৈজাবাদ জেলা হয়ে যাচ্ছে অযোধ্যা, তখন কেন কেন্দ্র সরকার আপত্তি করছে না?‌ যত আপত্তি তা হলে পশ্চিমবঙ্গের বেলাতেই?‌ কিন্তু যাঁরা এই কথা বলছেন, তাঁরা হয়ত নিজেরাও এটা বুঝছেন যে, একটা যুক্তিহীন কাজ দিয়ে আরেকটা যুক্তিহীন কাজকে সমর্থন করা যায় না৷

তবে নাম বদলের প্রস্তাব ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মোদী সরকারের ওপর চূড়ান্ত ক্ষিপ্ত৷ গত সপ্তাহেই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ঘোষণা করেন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের কোনো লোককে তিনি রাজ্যে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে দেবেন না৷ সঙ্গে সঙ্গে মমতা ব্যানার্জিও জানিয়ে দেন, তাঁর রাজ্যের ক্ষেত্রে তিনিও তা ভেবে দেখবেন৷