1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের অধিকাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘নির্যাতনের শিকার’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৮ নভেম্বর ২০২০

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক’ নির্যাতনের শিকার৷ সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না৷ নিজেদের পরিচালিত এক গবেষণার ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন৷

https://p.dw.com/p/3l1Yo
Bangladesh | Men's Rights Foundation (BMRF) feiert den Männertag in Dhaka
ফাইল ছবিছবি: Privat

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক' নির্যাতনের শিকার৷ সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না৷ নিজেদের পরিচালিত এক গবেষণার ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন৷

বেসরকারি সংগঠনটি বলছে, সামাজিক লজ্জার ভয়ে পরিচয় প্রকাশ করেন না অভিযোগকারীরা৷ বিবাহিত অনেক পুরুষের নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়ে একমত মানবাধিকারকর্মীরাও৷ তারা বলছেন, পুরুষদের নির্যাতিত হওয়ার খবর তাদের কাছে আসে৷ তবে যেই নির্যাতিত হোক তার আইনি সুরক্ষার দাবি জানান তারা৷

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু বেসরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পালন করছে৷ ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মেন'স রাইটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশে পুরুষ দিবস পালন করছে৷ চলতি বছরও ছোট পরিসরে এমন আয়োজন করা হবে বলে জানায় সংগঠনটি৷

ডয়চে ভেলের সাথে আলাপকালে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ খাইরুল আলম জানান, ‘নির্যাতিত পুরুষদের' পরামর্শ ও আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা দিতে এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ৷

‘নীরবে চোখের জল ফেলছে’

তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রতিদিন যে ফোন আসছে তাতে আমরা দেখেছি, নীরবে চোখের জল ফেলছেন অনেক পুরুষ৷ লজ্জায় তারা নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না৷ কোন নারী নির্যাতিত হলে তিনি তো বিচার চাইতে পারেন৷ অনেক সংগঠন তার পাশে দাঁড়ায়৷ নির্যাতিত পুরুষদের সহযোগিতার জন্য আমরা এ সংগঠনটি করেছি৷''

নিজেও এমন নির্যাতনের শিকার দাবি করে আলম বলেন, ‘‘নির্যাতনের শিকার হয়ে আমি অনেক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গিয়েছি৷ তারা কেউই নির্যাতিত পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়নি৷ অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা এই সংগঠন করেছি৷ এখন আমরা নির্যাতনের শিকার পুরুষকে আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করছি৷ তাদের পরামর্শ দিচ্ছি৷ জাতীয় সংসদে পুরুষ নির্যাতনবিরোধী আইন করার জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি৷ এই আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রচারণাও চালাচ্ছি৷’’

সংগঠনটির গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে আলম বলেন, ‘‘আমাদের কাছে প্রতিদিন যে অভিযোগ আসে তার ভিত্তিতেই আমরা গবেষণাটি করেছি৷ তবে সমস্যা হলো, কেউই লিখিত অভিযোগ করতে চান না৷ ফলে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোন দলিলাদি নেই৷’’

সাম্প্রতিক সময়ের উদাহরণ দিয়ে আলম বলেন, ‘‘গত শুক্রবার ঢাকার মিরপুর থেকে একজন ফোন করে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন৷ তিনি ফোন করে কাঁদছিলেন৷ লজ্জায় নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি৷ অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রেই একই চিত্র, নীরবে চোখের জল ফেলছে, প্রতিকার চাইতে পারছে না৷’’

সংগঠনটির দাবি বিদেশ থেকে ফোন করেও অনেকে তাদের কাছে নির্যাতনের অভিযোগ করছে৷

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ফারুক সাজেদের মতে, বাংলাদেশে পুরুষদের উপর নির্যাতন, বৈষম্যের ব্যাপারটি এখন বিরাট সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে৷ বাংলাদেশে সবার জন্য অধিকার আদায়ের সংগঠন আছে৷ যেমন নারীদের জন্য, শিশুদের জন্য, তৃতীয় লিঙ্গের জন্য, এমনকি প্রাণী অধিকার রক্ষার জন্যও আছে৷ কিন্তু পুরুষদের জন্য কোন প্লাটফর্ম নেই৷ বাংলাদেশে পুরুষ এখন এতটাই ভালনারেবল যে তার নামে একটি মামলা দিলে, একটা অভিযোগ করলে, সেটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে৷ সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কোন ব্যাপার এখন আর নেই এখানে৷

বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সানজীদা আখতার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে পুরুষ একই সঙ্গে কিন্তু নির্যাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ৷ কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রেণিভেদে তারা নির্যাতিত হলেও হতে পারে৷’’

‘সব নির্যাতনেরই আইনি সুরক্ষা থাকা প্রয়োজন’

তিনি বলেন ‘‘গত বছর আমাদের এখানে (বাংলাদেশে) ছোট পরিসরে পুরুষ দিবস উদযাপিত হয়েছে৷ পুরুষ নির্যাতন নিয়ে আমরা এখনো কোন গবেষণা বা পরিসংখ্যান পাইনি৷ পুরুষরা যত বেশি পুরুষ হিসেবে নির্যাতিত হয়ে থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রেণী, অবস্থান ও আর্থ-সামাজিক দুর্বল অবস্থানের কারণে নির্যাতিত হন৷ একই কারণে নারীও নির্যাতিত হন৷ আমি মনে করি সব নির্যাতনেরই আইনী সুরক্ষা থাকা প্রয়োজন৷’’

তার মতে, পুরুষ দিবসকে তাৎপর্যপূর্ণ করতে চাইলে সমাজে পুরুষকে যেভাবে তৈরি করা হয় সেই জায়গাগুলো চিহ্নিত করতে হবে৷

পুরুষ নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে একমত পোষণ করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী শিপা হাফিজা৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে হাফিজ বলেন, ‘‘আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকার সময় দেখেছি, অনেক পুরুষ নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ নিয়ে এসেছেন৷ আমার ঘনিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাও এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ তার স্ত্রীর অভিযোগের পর গণমাধ্যমে সেটি ফলাওভাবে প্রচারিত হয়েছে৷ কিন্তু আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন৷ ততদিনে কিন্তু তার সমাজিক যে ক্ষতি, সেটা হয়ে গেছে৷’’

তবে তিনি মনে করেন, নারীরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় আলাদা দিবস পালন করছে এ কারণে পুরুষদেরও এমন দিবস পালন করতে হবে বিষয়টি এমন হওয়া উচিত নয়৷

‘‘কোন পুরুষ নির্যাতিত হলে তারও আইনি সুরক্ষা থাকা উচিত,’’ বলেন তিনি৷