1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর প্রতি নির্মমতা বেশি

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ নভেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের মানুষ বন্যপ্রাণীর প্রতি অনেক বেশি নির্মম৷ উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই এই নির্মমতা বেশি বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান৷

https://p.dw.com/p/3TYTu
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে চশমা পরা একটি হনুমানছবি: DW/ M. Mamun

তিনি বলেন, ‘‘কোথাও আমরা বন্যপ্রাণী দেখলে সেটাকে হত্যা করতে বহু মানুষ জড়ো হই৷ অথচ সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের আগ্রহ অনেক কম৷’’

গত বুধবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নে একটি বানরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ গত দেড় মাসে এই বানরের কামড়ে ৩৫ জন শিশু-কিশোর আহত হয় বলে জানান দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘আমরা বারবার বন বিভাগকে বিষয়টি বলেছি৷ তারা একবার এলেও কোনো সমাধান না দিয়েই চলে গেছেন৷ তারা বানরটিকে সরাসরি হত্যার কথা না বললেও তাদের নিষ্ক্রিয়তায় গ্রামবাসী বানরটিকে পিটিয়ে হত্যা করে৷’’

তবে দু'টি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুলহাস উদ্দিন এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী লোকজনকে বানরটি মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ বানর ধরা বা তাড়ানোর সরকারি কোনো সাপোর্ট না থাকায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে দাবি করা হয়৷

বুধবার বানরটিকে ধরার পর আদালত বসিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়৷ তারপর গাছে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় বানরটিকে৷ তবে ডয়চে ভেলের প্রশ্নের জবাবে বানর হত্যার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘‘আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছি, তারা বানরটিকে দেখতে পেলে যেন আমাদের খবর দেন৷ আমরা ঢাকা থেকে ট্রাংকুলাইজার গান নিয়ে অচেতন করে বানরটিকে ধরে চিকিৎসা করাবো৷ হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ সত্যি নয়৷ আমরা যেখানে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ করি, সেখানে কেন মেরে ফেলার নির্দেশ দেবো? আর আদালত বসানো বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না৷’’

হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ সত্যি নয়: জুলহাস উদ্দিন

কোনো বন কর্মকর্তা বন্যপ্রাণী হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন কি-না জানতে চাইলে প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অবশ্যই এমন নির্দেশ তিনি দিতে পারেন না৷ রবিবারই আমি তদন্ত কমিটি করব৷ সেখানে যদি দেখা যায় তিনি এমন কিছু বলেছেন, তাহলে অবশ্যই তার শাস্তি হবে৷ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী, যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ৷ যদি ফরেস্ট অফিস থেকে কোনো বন্যপ্রাণীকে পাগল আখ্যা দিয়ে হত্যার নির্দেশনা জারি করা হয়, তাহলে সেটাকে হত্যা করা যায়৷ তা-ও গ্রামবাসী না, ফরেস্ট বিভাগের লোকজনই সেটাকে হত্যা করবে৷ আমার জানা মতে, মৌলভীবাজারে এমন কোনো নির্দেশনা জারি হয়নি৷ ফলে বানরটিকে যে হত্যা করা হয়েছে সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷’’

এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৭ সালের মার্চে নড়াইলের লোহাগড়ায় বানরের কামড়ে শিশুসহ ৯ জন আহত হন৷ পরে এলাকাবাসী বানরটিকে ধরার জন্য দা, লাঠিসোঁটা নিয়ে অভিযান চালায়৷ দীর্ঘ চার ঘণ্টার অভিযানে এলাকাবাসীর তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে বানরটি পাশের নবগঙ্গা নদীতে পড়ে যায়৷ সেখানে তাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ পরে পাশের একটি স্কুলের মাঠে সেই  বানরের দেহ বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়৷

জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে: অধ্যাপক খান

গত ৭ নভেম্বরে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় সাদিয়া সালমা নামে একজন নারী অভিযোগ করেন, পিংক সিটি এলাকায় আটটি কুকুর কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ৷ ওই দিন সকালেই সেই এলাকায় একটি কুকুরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়৷ সাদিয়া সালমার আশঙ্কা, কুকুরগুলোকে কেউ হত্যা বা হত্যার পর গুম করে থাকতে পারে৷ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন আরো দুটি কুকুর মারা গেছে৷ ওই এলাকায় মোট তিনটি কুকুরের মৃত্যু এবং ৮টি কুকুর গুম হওয়ার বিষয়ে এখনো তদন্ত চলছে৷

অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘‘কুকুর বন্যপ্রাণীর মধ্যে পড়ে না৷ তবুও এটাও তো প্রাণী৷ কুকুর হত্যাও অপরাধ৷’’ সাধারণ মানুষের অসচেতনতা সম্পর্কে অধ্যাপক খান বলেন, ‘‘দেখেন, আমাদের ছোটবেলা থেকেই মানসিকতা বদলাতে হবে৷ এই বন্যপ্রাণীরা আমাদের কিছু ক্ষতি করে সত্যি, কিন্তু উপকার করে তার চেয়েও বেশি৷ ফলে বইপত্রে যদি এগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷ পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য নিয়মিত প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে৷’’

প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী স্বীকার করেছেন, এগুলো নিয়ে তারা কিছু প্রচারণা চালান, তবে সেটা পর্যাপ্ত নয়৷

বন বিভাগের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাত বছরে ৪২ হাজার বন্যপ্রাণী পাচারের সময় আটক হয়েছে৷ এর মধ্যে সুন্দরবনের ১৩টি বাঘ ও তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে৷ এসব বন্য প্রাণীর একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য নেওয়া হচ্ছিলো৷