1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে চালু হচ্ছে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট

আরাফাতুল ইসলাম১৪ জুলাই ২০০৮

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ই‌ন্টারনেটকে সুলভ ও সহজে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য তারবিহীন দ্রুতগতির ইন্টারনেট প্রযুক্তি ওয়াইম্যাক্স উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, অন্তত তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা তাই মনে করছেন৷

https://p.dw.com/p/EcC7
যখন তখন, যেখানে খুশি সেখানে বসে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার স্বাধীনতা দেবে ওয়াইম্যাক্সছবি: PA/dpa

বাংলাদেশে শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবা৷ কি এই ওয়াইম্যাক্স? প্রশ্ন করেছিলাম আমার নেটওয়ার্কস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল টি আহমেদের কাছে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি সোজা কথায় বলতে গেলে ওয়াই-ফাইয়ের বর্ধিত রুপ৷ ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে আমরা ঘরে বা অফিসের ভেতর তারবিহীন ইন্টারনেট পেয়ে যাই৷ আর ওয়াইম্যাক্সের মাধ্যমে সারাদেশে একই ধরনের নেটওয়ার্ক করা সম্ভব, বড় শহরে নেটওয়ার্ক করা সম্ভব৷ এই নেটওয়ার্ক হয়ে গেলে যেকোন জায়গায় বসে কম্পিউটার ব্যবহার করে ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়া যাবে৷

বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স চালু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ওয়াইম্যাক্স অনেক বড় একটা কিছু নিয়ে আসছে৷ কারণ হচ্ছে বিশ্বে অনেক দেশের শক্তিশালী ক্যাবল বা তার নেটওয়ার্ক আছে যেটা আমাদের দেশে নেই৷ ওয়াইম্যাক্স যেহেতু তারবিহীন নেটওয়ার্ক, আর তারবিহীন নেটওয়ার্কে যেহেতু তার রক্ষণাবেক্ষণের কোন প্রয়োজন নেই, সেহেতু ওয়াইম্যাক্স দিয়ে ভালো কিছু হতে পারে বলে আমার বিশ্বাস৷

Mit Handy und Computer im Freien
মুক্ত আকাশের নিচে বসে ইন্টারনেটে অফিসের কাজ, ওয়াইম্যাক্সেই সম্ভবছবি: dpa

ওয়াইম্যাক্সের সুবিধা

ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি তুলনামূলকভাবে কম ব্যান্ডউইথ ফ্রিকুয়েন্সির মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়৷ একটি টাওয়ার দিয়ে ৪ থেকে ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় তারবিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব৷ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারে ক্ষদ্র একটি চিপ যুক্ত করে ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে৷ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে৷ আর মোবাইল ফোন ব্যবহারের মতোই সহজ এই প্রযুক্তিটি৷

সুবিধা বঞ্চিতদের জন্য ওয়াইম্যাক্স

বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে তথ্য প্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে অনেক প্রতিষ্ঠান৷ এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান ডি নেট৷ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অনন্য রায়হানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ওয়াইম্যাক্স সেবা বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কি ধরনের সুবিধা বয়ে আনতে পারে? তিনি বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কিন্তু নিরক্ষর কিংবা স্বাক্ষরতাহীন৷ তো তাদের পক্ষে কনটেন্ট পড়ে তাদের জীবন-জীবিকায় কাজে লাগানো কঠিন৷ তাদেরকে যদি আমরা মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দিতে পারতাম, তাহলে সেটা বেশি কার্যকর হতো৷ এখন মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট দিতে গেলে অবশ্যই উচ্চমাত্রার ইন্টারনেট সংযোগ দরকার৷ তো সেক্ষেত্রে অবশ্যই তারিবহীন ব্রডব্যান্ড বা ওয়াইম্যাক্স প্রয়োজন৷

খুশি নয় ইন্টারনেট সেবাদাতারা

বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজন হবে লাইসেন্সের৷ ইতিমধ্যে তিনটি লাইসেন্স দেবার কথা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি৷ উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং এ জন্য নিলামের আয়োজন করা হবে৷ দরপত্রে অংশগ্রহণের প্রাথমিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা৷

অবশ্য বিটিআরসির এই উদ্যোগের খানিকটা সমালোচনা করেছে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি৷ এই সংগঠনটি গত ৮ই জুলাই এক সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যোগ্যতার ভিত্তিতে ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ স্থানীয় আইএসপিদের পক্ষে এত বেশি টাকা দিয়ে লাইসেন্স নেয়া অনেকটাই অসম্ভব বলে দাবি করেছে আইএসপিএবি নেতারা৷ এই প্রসঙ্গে আইএসপিএবির সহ-সভাপতি আজাহার এইচ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইএসপিএবির মূল দাবিটা হলো যে, আমরা ওয়াইম্যাক্স চাই৷ আর যেভাবে ওনারা লাইসেন্স প্রাপ্তির ফি ২৫ কোটি টাকা থেকে শুরু করেছেন, যেটা আসলে নিলামের মাধ্যমে আমরা আশা করছি ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে৷ তো এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় আইএসপিএবিদের পক্ষে এতো বিশাল অংকের টাকা দিয়ে লাইসেন্স নেয়া সম্ভব নয়৷

DW Bengali service took interview of Zakaria Swapan. He is a Wi-max Consultant for Cisco Systems.
বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট চালুর উদ্যোগকে ''উচ্চাভিলাষী প্রকল্প'' বলে মনে করছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া স্বপনছবি: Zakaria Swapan

ভারত ও তাইওয়ান

প্রসঙ্গত, ভারত এবং তাইওয়ানে ইতিমধ্যে ওয়াইম্যাক্স নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ তাইওয়ান সরকার এম-তাইওয়ান নামক একটি প্রজেক্ট হাতে নেয় যার লক্ষ্য ছিল শহরাঞ্চলের ৮০-৯০ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের ৩০-৪০ শতাংশ এলাকা তারবিহীন ব্রডব্যান্ডের আওতায় নিয়ে আসা৷ একইসঙ্গে ২০১০ সালের মধ্যে আট মিলিয়ন তারবিহীন ব্রডব্যান্ড গ্রাহক তৈরি করা এবং সর্বোপরি ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানো৷ এম-তাইওয়ান এর জন্য বাজেট করা হয় ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ অন্যদিকে ভারতের টাটা কমিউনিকেশন ওয়াইম্যাক্সের জন্য ভারতে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স খাতে এত বিশাল বিনিয়োগ কোন প্রতিষ্ঠান করবে কি?