বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের বিকাশ
৭ নভেম্বর ২০১২বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন তিনি, বিষয় ছিল স্থাপত্যবিদ্যা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যেতেন৷ ছবি তৈরির বাসনা মনে জেগেছিল সেখান থেকেই৷ এরপর ২০০৮ সালে কাজ শুরু এবং ২০১২ সালে জার্মানির লাইপসিশ শহরে ‘ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার'৷ বলছি সারা আফরিনের কথা৷ ছবি তৈরিতে নিজের জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এমন নয় যে আমি সবসময় চিন্তা করেছিলাম যে ছবি তৈরি করবো৷ মূলত স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেছি আমি৷ স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়ার সময়ই বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার অভ্যাস ছিল৷ এভাবেই ছবি তৈরির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়৷''
প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ নেই
বাংলাদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ে প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এখনো তৈরি হয়নি৷ তাই ছবি নির্মাণ শিখতে একটু ভিন্ন পথ বেছে নেন সারা আফরীন৷ চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, উৎসব থেকে ছবি তৈরি শেখার চেষ্টা করেছেন তিনি৷ সারা বলেন, ‘‘আমাদের দেশে যেহেতু ছবি তৈরির ওপর কোন প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই, তাই আমি যতদূর পারি বিভিন্ন উৎসব এবং ওয়ার্কশপ থেকেই শেখার চেষ্টা করেছি৷''
লাইপসিশে ‘শুনতে কি পাও!'
তথ্যচিত্র বিষয়ক পৃথিবীর প্রাচীনতম উৎসব ডক-লাইপসিশের উদ্বোধনীতে জায়গা করে নেয় বাংলা ছবি ‘শুনতে কি পাও!'৷ কামার আহমাদ সাইমন ছবিটির পরিচালক এবং সারা আফরীন প্রযোজক৷ এই প্রথম কোনো বাংলা ছবি ডক-লাইপসিশের উদ্বোধনী ছবি হলো৷ এছাড়া এটি আরো কয়েকটি বিদেশি ছবির সঙ্গে মূল প্রতিযোগিতায়ও ছিল৷ শুনতে কি পাও!'র নির্মাণ সম্পর্কে সারা বলেন, ‘‘আমি আর সাইমন আসলে ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী-স্ত্রী৷ আমরা অনেক দিন ধরেই একসঙ্গে আছি এবং পাস করার পর থেকেই একসঙ্গে কাজ করছি৷ প্রথম দিকে আমাদের একটি ক্রিয়েটিভ স্টুডিও ছিল, যেখানে আমরা পুরো সাত বছর ২২ থেকে ২৪ জনের একটি দল চালিয়েছি৷ ২০০৮ সালে আমরা ঠিক করলাম (ক্রিয়েটিভ স্টুডিও) যথেষ্ট হয়েছে, এখন আসলে আমাদেরকে (ছবি তৈরির কাজ) শুরু করতে হবে৷ ''
ছবির বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন
প্রথম ছবি বা প্রামাণ্যচিত্রের কাহিনী হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে বেছে নেন সারা ও কামার৷ এজন্য তিন মাস ধরে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে সমীক্ষাও করেছেন তারা৷ এ বিষয়ে সারা বলেন, ‘‘ওই সময় (২০০৮) সারা পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছিল৷ তখন আমরা রুট লেভেলে আমাদের মানুষরা কিভাবে আছে এবং তারা কিভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করছে, সেটা দেখতে চাচ্ছিলাম৷ তখনই আমরা এ ছবিটি তৈরির কাজ শুরু করি৷ প্রথমে আমরা তিনমাস ধরে একটি নৌকায় করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে দেখি৷ তারপর আমরা একটি পরিবারের পর মনোনিবেশ করি৷''
প্রসঙ্গত, কামার ও সারার তৈরি ছবিটি লাইপসিশে দর্শকদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে৷ ছবিটির প্রতিটি দৃশ্যে রয়েছে দক্ষতার ছোঁয়া৷ এক কথায় ভিনদেশি দর্শকরা, ছবিটির প্রতিটি দৃশ্যই উপভোগ করেছেন৷
তৈরি হয়নি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিটিউট
সারা আক্ষেপ করে বললেন, স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছর পেরুলেও বাংলাদেশে এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিউট তৈরি হয়নি৷ আরো অনেক বাধার প্রসঙ্গই উঠে এসেছে তাঁর কথায়৷ তারপরও ছবি তৈরির প্রেমে পড়ে গেছেন৷ লাইপসিশে ডয়চে ভেলেকে সারা বলেন, ‘‘অনেক ধরনের বাধা আছে, চ্যালেঞ্জ আছে, কারণ, আমাদের প্রফেশনাল বা সেরকম কোনো ইন্সটিটিউশন নেই৷ (চলচ্চিত্র বিষয়ে) প্রফেশনাল পাওয়াও কঠিন৷ আমরা যেটা করছি তা হলো ক্রিয়েটিভ ডকুমেন্টারি, এ সম্পর্কে আমাদের দেশে অন্যদের বা আমাদেরও ধারনা ঠিক ছিল না৷ আমরা সম্প্রতি এ বিষয়টি বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, বাইরের বিভিন্ন ফোরামে গিয়ে শেখার চেষ্টা করছি৷ এই চ্যালেঞ্জগুলো আছে, থাকবে৷''
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী ছবি তৈরির প্রতি আকর্ষণ বোধ করছেন বলে জানান সারা৷ সঙ্গে এ কথাও বলেন যে, তরুণদের জন্য একটি দিক নির্দেশনা দরকার৷ কিন্তু তারা কোনদিকে এগোবে কিংবা কিভাবে এগোবে, সেটা ঠিক করার ক্ষেত্রেই সমস্যা৷ সারা আফরীন মনে করেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ম ইন্সটিটিউট এ সমস্যা দূর করতে পারে৷