1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে এক বছরে ৫১৩ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, অধিকাংশই নারী

হারুন উর রশীদ স্বপন
২৭ জানুয়ারি ২০২৪

বাংলাদেশে এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন ৫১৩ জন শিক্ষার্থী৷ যাদের মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি নারী শিক্ষার্থী৷ আরো উদ্বেগের বিষয়, যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের মধ্যে ৪৪ ভাগেরও বেশি স্কুল শিক্ষার্থী৷

https://p.dw.com/p/4bkQH
(প্রতীকী ছবি) বাংলাদেশে নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি৷
(প্রতীকী ছবি) বাংলাদেশে গত এক বছরে ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ছবি: picture-alliance/Photoshot

বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আচঁল ফান্ডেশন' শনিবার তাদের এক জরিপে এই তথ্য প্রকাশ করেছে৷

সংগঠনটি জানিয়েছে, আত্মহননকারীদের মধ্যে প্রায় ১০ ভাগ মানসিক সমস্যার কারণে এই পথ বেছে নিয়েছেন৷ আর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ গবেষণা বলছে কিশোর-কিশোরীদের প্রায় ১৩ ভাগ মানসিক রোগে আক্রান্ত৷ আর দেশের তিন কোটি মানুষ মানসিক রোগাক্রান্ত৷

আঁচল ফাউন্ডেশন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৫১৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷ তবে ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৫৩২ জন৷

সংগঠনটি জানিয়েছে, নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি৷ আত্মহননের পথ বেছে নেয়াদের মধ্যে ৬০ দশমিক ২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী৷ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের তুলনায় স্কুলমুখী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করেছে তারা৷ তার পরিমাণ ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ৷

২০২৩ সালে যে ৫১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ১৪০ জন কলেজ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন এবং ৪৮ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী৷

আত্মহননকারীদের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিভাগের নাম৷ এই বিভাগের অন্তত ১৪৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ এরপর চট্টগ্রাম বিভাগের ৮৯ জন, রাজশাহী বিভাগের ৭৭ জন, খুলনা বিভাগের ৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন৷ তালিকার পঞ্চম স্থানে যৌথভাবে রয়েছে বরিশাল ও রংপুর বিভাগের নাম৷ আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩ জন৷ ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ জন এবং সিলেট বিভাগের ১২ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷

(প্রতীকী ছবি)
(প্রতীকী ছবি) ২০২৩ সালে যে ৫১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ১৪০ জন কলেজ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন এবং ৪৮ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী৷ছবি: picture-alliance/chromorange

সাধারণভাবে আত্মহত্যার কারণ হিসাবে অভিমান, প্রেম, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক কলহ, পারিবারিক নির্যাতন, পড়ালেখার চাপ, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে না পারা, যৌন হয়রানি ও অপমান বোধের মত বিষয়গুলো উঠে এসেছে আঁচলের প্রতিবেদনে৷

সংগঠনটি জানিয়েছে, ১৩-১৯ বছর বয়সি ৩৪১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন, যা মোট আত্মহননকারীর ৬৬ দশমিক ৫ ভাগ৷

আঁচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০২২ সালের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সামান্য কম৷ কিন্তু এটা আসলে কমার কেনো প্রবণতা নয়৷ সামনের বছর দেখা যাবে আবার বেড়ে গেছে৷ আত্মহত্যার কারণ দূর করার কেনো সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ আমরা দেখছি না৷''

চূড়ান্ত হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়: তানসেন রোজ

তিনি আরো বলেন, ‘‘চূড়ান্ত হতাশা থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷এর পেছনে অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও সামাজিক কারণ আছে৷ সেগুলো এখনও বিদ্যমান৷ সমাজ ও রাষ্ট্রের যে অস্থিরতা, যারা এসব নিতে পারেন না তারাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়৷ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন বা পড়া শেষ করেছেন তাদের ওপর পরিবারের চাপ আছে চাকরি বা কর্মসংস্থানের৷ সমাজও তাদের নানা কথা বলে৷''

কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে পরিবারের সদস্য এবং বাইরের লোকজনের সঙ্গে ‘জেনারেশ গ্যাপ' দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে তানসেন রোজ বলেন, ‘‘যা তাদের হতাশা ও আত্মহত্যার মূল কারণ৷''

বাংলাদেশে এখন মোট জনগোষ্ঠীর ১৮ ভাগ মানসিক রোগে ভুগছেন৷ ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় বলা হয়, ওই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের ৪৮ দশমিক ৪ ভাগ মানসিক রোগী৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ ৩৪৭ জন রোগীর ওপর গবেষণা করে ওই তথ্য প্রকাশ করেছে৷ ওই রোগীদের মধ্যে ১৬৮ জন কেনো না কোনোভাবে মানসিক রোগে ভুগছিলেন৷

পোশাক কর্মী এবং তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু' এর প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদা শিরোপা৷ তিনি বলেন, ‘‘পোশাক কর্মীদের ২০ ভাগ নানা ধরনের মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে থাকেন৷ তারা মূলত তাদের  পরিবার, সন্তান ও তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চাপে থাকেন৷ মানসিক অস্থিরতায় থাকেন৷ আর তরুণদের মধ্যে যারা নারী, তাদের ৫০ ভাগ এবং পুরুষদের ৩০ ভাগ এখন মানসিক অস্থিরতার মুখে আছেন৷''

তিনি জানান, তরুণীরা মূলত নানা রকম আ্যাবিউজের মধ্য দিয়ে যান, যা তাদের মানসিকভাবে পীড়িত করে৷ আর তরুণেরা নানা ধরনের সামাজিক ও পারিবারিক চাপে পীড়িত হন৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘২০০৫ ও ২০০৬ সালের গবেষণায় আমরা দেখেছি, তখন দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ মানসিক রোগী ছিলেন৷ ২০১৮ সালে তা হয়েছে ১৮ শতাংশ৷ মানসিক রোগী বাড়ছে, তবে তার চেয়ে আত্মহত্যার হার বাড়ছে৷ এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই বাড়ছে৷''

‘আত্মহত্যার হার শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা পৃথিবীতেই বাড়ছে’

কারণ হিসাবে তিনি দায়ী করেন, সামাজিক অস্থিরতা, বেকারত্ব, অসহিষ্ণুতার মাত্রা বেড়ে যাওয়া, পরমত সহিষ্ণুতার অভাব, মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা, মাদকাসক্তি এবং মানুষের যন্ত্র নির্ভরতাকে৷

এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে তরুণেরা মানসিক সমস্যা নিয়ে আসেন তাদের অধিকাংশই পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বা তারা তাদের দক্ষতা দিয়ে টিকতে পারছেন না৷''

মানসিক চাপই কাউকে কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে আত্মহত্যা ফৌজদারী অপরাধ ও পাপ হিসেবে গণ্য হয়৷ ফলে কারো মধ্যে কোনো কারণে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগলেও ভয়ে সে তা প্রকাশ করেন না৷ তাই আমাদের আইন ও মানসিকতার পরিবর্তন দরকার৷''

আত্মহত্যা সম্পর্কিত ২০২১ সালের একটি ছবিঘর: