বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা কমেছে
গত এক বছরে যেসব দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে কমেছে তার শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ৷ ফ্রিডম হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের করা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে৷
ফ্রিডম অন দ্য নেট রিপোর্ট
বিশ্বের কোন দেশে মানুষ কত সহজে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়, অনলাইন দুনিয়ার স্বাধীনতা কতটা, ২০০৯ সাল থেকে তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে ফ্রিডম হাউজ নামের একটি সংগঠন৷ তিনটি বিষয়ে ২১ টি সূচকের মাধ্যমে তারা তৈরি করেছে ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০১৯’ প্রতিবেদনটি৷ উঠে এসেছে ৬৫ টি দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার চিত্র৷ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সময়ের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছে তারা৷
সবচেয়ে উন্মুক্ত আইসল্যান্ড
জনগণের ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার সংরক্ষণে সবচেয়ে উদার দেশটির নাম আইসল্যান্ড৷ ফ্রিডম অন দ্য নেটের জরিপে ১০০ তে তাদের নম্বর ৯৫৷ অনলাইনে মত প্রকাশের জন্য দেশটির মানুষকে কোন ধরনের মামলা বা আইনি হয়রানিতে পড়তে হয়নি৷ আছে সবার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা, উন্মুক্ত কনটেন্ট এবং ব্যবহারকারীর অধিকার সংরক্ষণে শক্তিশালী ব্যবস্থা৷ প্রথম পাঁচটি দেশের ভেতরে আরো আছে এস্তোনিয়া, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া৷
সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল চীন
ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা হরণে শীর্ষে থাকা দেশ চীন৷ তাদের পয়েন্ট ১০০ তে মাত্র ১০৷ তিয়েন আনমেন স্কয়ারে গণহত্যার ৩০ বছরপূর্তি, হংকংয়ের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ সহ গত এক বছরে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা৷ বন্ধ করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমের অসংখ্য অ্যাকাউন্ট৷ তালিকায় তাদের পরই আছে ইরান, সিরিয়া, কিউবা ও ভিয়েতনাম৷
স্বাধীনতা কমেছে গোটা বিশ্বে
গত এক বছরে ৬৫ টি দেশের মধ্যে ৩৩ টি দেশেই ইন্টারনেট ব্যবহার স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়েছে৷ ৩৮ টি দেশের সরকার জনগণের মতামত নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিবিশেষকে নিয়োগ দিয়েছে৷ গোটা বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার সার্বিক স্কোরেরও অবনতি হয়েছে৷
অবনতিতে বাংলাদেশ
ইন্টারেনেট ব্যবহারের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের এবারে স্কোর ১০০ তে ৪৪, যা গতবছর ছিল ৪৯৷ যেসব দেশের এবার বেশি অবনতি হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ৷ অবনমনে শীর্ষে সুদান৷ তার পর আছে কাজাখস্তান ও ব্রাজিল৷
বাংলাদেশের পয়েন্ট
ইন্টারনেট ব্যবহারের বাধায় বাংলাদেশের স্কোর ২৫ এ ১৩৷ কনটেন্টে বাধা প্রদানে পেয়েছে ৩৫ এ ১৭৷ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের অধিকার হরণে৷ এক্ষেত্রে পয়েন্ট ৪০ এ মাত্র ১৪৷
বাধা প্রদান
গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে নানা ভাবে বাধা তৈরি করেছে সরকার৷ নির্বাচনের সময় মোবাইল সেবায় বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের স্কাইপি আলাপে বাধা দেয়া হয়েছে৷ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৫৮ টি সংবাদ সাইট৷ ফেব্রুয়ারিতে ২০ হাজার পর্ন ও জুয়ার সাইট বন্ধ করে দেয়া হয়৷ বন্ধ করা হয়েছে সবচেয়ে বড় ব্লগিং ওয়েবসাইটও৷
বিতর্কিত আইন
সেপ্টেম্বরে কার্যকর করা হয়েছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন৷ ইন্টারনেটে মানহানি, অশ্লীল কনটেন্ট, মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ আইনভঙ্গকারিদের সাত বছরের জেল এবং ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধন রয়েছে৷ সাংবাদিক, আন্দোলন কর্মী, শিক্ষকসহ এই আইনের অধীনে অনককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ জানুয়ারিতে একজনকে সাত বছরের জেলও দেয়া হয়েছে৷
সামাজিক মাধ্যমে নজরদারি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারির জন্য একটি প্রকল্পে গত বছরের অক্টোবরে ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার৷ র্যাবের অধিনে নভেম্বরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়৷
অ্যাকাউন্ট ও কনটেন্ট সরাতে চাপ
বিভিন্ন কোম্পানিকে কনটেন্ট সরানোর জন্য চাপ দিয়েছে সরকার৷ গত বছরে ৭৪ টি কনটেন্ট সরিয়ে নিতে গুগলকে আটটি অনুরোধ করা হয়েছে৷ অনলাইন কনটেন্ট বন্ধে অনানুষ্ঠানিক পথও অবলম্বন করা হয়েছে৷ সরকার বিরোধী পোস্টের কারণে বিভিন্ন সাংবাদিকদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধের সরকারপন্থীরা ভূমিকা রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে৷
সরকার সংশ্লিষ্টদের আচরণ
ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ফেসবুক নিজ থেকেই সরকার সমর্থিতদের পরিচালিত বেশ কিছু পেইজ ও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ সংগঠিতভাবে তথ্য বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তির টুইটার অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷