1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌বাংলা রুখবে বিভাজনের রাজনীতি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ভোটের আগে বিজেপি সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করবে–অ্যামেরিকার সেনেটে সম্প্রতি এই রিপোর্ট দিয়েছেন সেদেশের গোয়েন্দা কর্তা৷ কী বলছেন বাংলার রাজনৈতিক নেতারা?‌

https://p.dw.com/p/3CZHg
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP/M. Sharma

ভারতে ভোটের আগে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে দাঙ্গা বাধাতে পারে বিজেপি৷ অ্যামেরিকার সেনেটে ২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস সম্ভাবনা নিয়ে পেশ করা এক লিখিত রিপোর্টে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ড্যান কোট্‌স সম্প্রতি জানিয়েছেন, ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি যদি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ওপরেই জোর দেয়, তাহলে ভোটের আগে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হতে পারে দেশজুড়ে৷ এমনিতেই ভারতের অনেক রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি সক্রিয়৷ বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নীতি ভুল সংকেত পাঠাবে সেই সব রাজ্যের নেতাদের কাছে৷ দলের নিচুতলার কর্মীদের উৎসাহিত করতে ছোট ছোট আকারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা লাগিয়ে দিতে পারে তারা, যাতে ভোটে তার ফায়দা তোলা যায়৷ এতে ভারতীয় মুসলিমরা আরো বিচ্ছিন্ন বোধ করবে এবং সেই সুযোগে প্রসার পাবে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী৷ মার্কিন বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র প্রধান জিনা হ্যাসপেল সদ্য ভারত ঘুরে যাওয়ার পর মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই রিপোর্ট জমা পড়েছে সে-দেশের সেনেটে৷

ওদের রিপোর্ট ভুল, এমন কথা একদম বলতে পারব না: প্রদীপ ভট্টাচার্য

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, যারা স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে অক্ষত রাখার চেষ্টা করে চলেছে, তারা কতটা সচেতন এই দাঙ্গার বিপদ সম্পর্কে?‌ কী বলছেন বাংলার নেতারা?‌ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য দিল্লিতে বাজেট অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘‌‌ওদের (‌অ্যামেরিকার)‌ যে রিপোর্ট, সেটা ভুল, এমন কথা একদম বলতে পারব না৷ এবং আমি মনে করি যে, এরকম ধরনের একটা চক্রান্ত ইতিমধ্যেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হয়েছে৷ সেটার জন্য কংগ্রেস শুধু নয়, বিভিন্ন যে রাজনৈতিক দল আছে, তারা সকলে এই ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন শুধু নয়, এই ব্যাপারটা কীভাবে আটকানো যাবে, সে নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তা করছে৷ এবং কংগ্রেস ইতিমধ্যেই তার ইশতাহারে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত কর্মীর কাছে, যে আপনারা বিভিন্ন গ্রামে, এবং বিভিন্ন শহরে, পাড়ায় পাড়ায়, অর্থাৎ মহল্লায় মহল্লায় মিটিং করুন৷ বয়স্ক, প্রবীণ মানুষদের নিয়ে মিটিং করুন৷ যুবক এবং তরুণদের নিয়ে মিটিং করুন৷ এবং তাদের কাছে এটা পরিষ্কারভাবে বলুন যে, এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি কিন্তু ভারতবর্ষের যে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সেই সামাজিক বিশৃঙ্খলাকে তৈরি করবে৷ আর তা যদি হয়, তা হলে শুধুমাত্র একটা সম্প্রদায়ের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা নয়, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের যাঁরা আছেন, তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ সার্বিকভাবে ভারতবর্ষের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এটা ঘোর সংকট তৈরি করবে৷ সুতরাং এ জিনিস বন্ধ হওয়া দরকার৷ এই চিন্তাধারা মানুষের কাছে আমরা পৌঁছে দিতে শুরু করে দিয়েছি ইতিমধ্যেই৷’’

সিপিআইএম সাংসদ ও পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম যদিও বিশ্বাস রাখেন, বাংলা এই বিভাজনের রাজনীতিকে ঠেকিয়ে দেবে৷ কারণ, বাংলার ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির৷ ডয়চে ভেলেকে মহম্মদ সেলিম বললেন, ‘‌‘‌আজকে যেটা মূলধারার সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, মার্কিন সূত্রকে উদ্ধৃত করে, সেটা আমরা গত তিন বছর ধরে মাঠে, ময়দানে, রাস্তায়, ঘাটে, কনভেনশনে বামপন্থীরি গোটা বাংলা জুড়ে এই প্রচারটা করছি৷ এবং এখনো দাঙ্গা লাগেনি, তার কারণ, বাংলার সংস্কৃতি সম্প্রীতির এবং সাধারণ মানুষ তার কৃষির সমস্যা, বেকারির সমস্যা, তার যন্ত্রণা নিয়ে ব্যস্ত৷ তার গণতান্ত্রিক অধিকার যে হরণ হচ্ছে, সেটা নিয়ে ব্যস্ত৷ তারা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে লড়াই করতে চায় না৷ প্রতিদিন কোনো-না-কোনো জায়গায় এরকম প্ররোচনা হচ্ছে এবং পরিকল্পিতভাবে এরকম প্রশিক্ষিত লোকজনকে বিজেপি, আরএসএস, সঙ্ঘ পরিবার রাস্তায় নামিয়েছে৷ অন্যদিকে অন্যান্য কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তিও তাদের জমি বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত হয়েছিল৷ এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার, তৃণমূলের দ্বারা যেটা পরিচালিত হচ্ছে, তারা অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করলেও, তলায় যেটা হচ্ছে, যেখানে হিন্দু বেশি সেখানে হিন্দু, যেখানে মুসলমান বেশি, সেখানে মুসলমান, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতিকে চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের নিজেদের স্বার্থে৷ যে কারণে বামপন্থিরাই ছোট ছোট ব্রিগেড পাড়ায় পাড়ায় করে, গোটা রাজ্যে আমাদের বাংলার যে হৃত গৌরব, সেটা পুনরুদ্ধার করা, এখানে সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো স্থান নেই, এটাকে আরেকবার মানুষের সামনে তুলে ধরা (‌দরকার)‌৷ এবং রাজনৈতিক লড়াই হোক, অর্থনৈতিক বিষয় সামনে আসুক৷ কিন্তু এই গুন্ডামি এবং প্রতিযোগিতামূলক যে সন্ত্রাস চলছে বিজেপি এবং তৃণমূলের, তাতে সাধারণ মানুষ খুন হচ্ছেন৷ প্রতিদিন কোথাও না কোথাও৷ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হচ্ছে তৃণমূলের, কিন্তু সেটাকে কোথাও হিন্দু-মুসলমান, কোথাও বিজেপি-তৃণমূলের ঝান্ডা লাগিয়ে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ আমরা পাড়ায় পাড়ায় এটাকে প্রতিহত করছি এবং গোটা রাজ্যেও প্রতিরোধ করব৷ আর অতীতে যেটা হয়েছিল যে, শাসকদল মানুষকে আহ্বান করত সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার জন্য৷ কিন্তু আমরা দেখেছি, বসিরহাট থেকে রানিগঞ্জ, কালিয়াচক থেকে ধূলাগড়, যখনই দাঙ্গা হয়েছে, মমতা ব্যানার্জি, বা তৃণমূল কংগ্রেস, বা শাসকগোষ্ঠী কখনোই সর্বদলীয় বৈঠক করা, মানুষের মত তৈরি করা, বা রাস্তায় সবাইকে (‌নিয়ে)‌ যৌথ মিছিল করা, শান্তির জন্যে আবেদন করা— এটা করেনি৷ এমনকি তদন্ত কমিশনও একটাও গঠন হয়নি৷ কারা দাঙ্গা লাগাতে চাইছে, কেন লাগাতে চাইছে, এবং এর পেছনে কারা আছে?‌ এটা যদি না করা হয়, তা হলে কখনোই মূল যে ষড়যন্ত্র, সেটা ধরা যাবে না৷ যেটা অ্যামেরিকার এজেন্ট ধরতে পারছে, সেটা আমাদের রাজ্যের যে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ, আমাদের রাজ্যের যে পুলিশ, যে গোয়েন্দা বিভাগ, তারা কি জানে না?‌ তারা কি জানতে পারছে না?‌ কিন্তু সেখানে সরকারের প্রতিক্রিয়া খুবই খারাপ৷ এই জন্যে মানুষকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে৷ অতীতেও তাই হয়েছে৷ নবজাগরণের উত্তরসূরি বাংলা৷ তারা এরকম বিভাজনের রাজনীতিকে চলতে দেবে না৷’’

নবজাগরণের উত্তরসূরি বাংলা: মহম্মদ সেলিম