1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বহিরাগত নয়

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী২৪ জানুয়ারি ২০১৫

বুধবার ২০১৩ সালের অভিবাসন রিপোর্ট, তার পর দিনই বেরল আর একটি রিপোর্ট যা থেকে দেখা যাচ্ছে: জার্মানিতে যে সাড়ে চার লাখ কারখানায় প্রশিক্ষণার্থী নেওয়া হয়, তাদের ৬০ শতাংশ কখনো কোনো বহিরাগতকে নেয়নি৷

https://p.dw.com/p/1EPYa
Erich-Kästner-Schule Bonn Lehrerin Gabriala Schäfer
ছবি: DW/A. Berger

ব্যার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের ফরমায়েশে এই জরিপ করা হয়: পেশার ক্ষেত্রে যে ‘আউসবিল্ডুং' বা প্রশিক্ষণ ছাড়া জার্মানিতে কর্মজীবনের ভিত্তিই গড়ে ওঠে না, সেই আউসবিল্ডুং-এর ক্ষেত্রেই এমন একটি বুনিয়াদি বৈষম্য মুখব্যাদান করে আছে যে, এর পর অভিবাসী ও অভিবাসন সম্পর্কে আলোচনা সম্পূর্ণ অন্য ধারায় প্রবাহিত হওয়া উচিত৷

কী কারণে এই সব কারখানা ও অপরাপর শিল্পসংস্থা বিদেশি-বহিরাগত পটভূমি যুক্ত তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নেয় না, সে ব্যাপারে ৩৮ শতাংশ বলেছে, বিদেশিদের নিয়ে ভাষাগত সমস্যা হতে পারে; সাংস্কৃতিক ব্যবধানের কথা বলেছে ১৪ শতাংশ; নয় শতাংশের আশঙ্কা, বিদেশি তরুণ-কিশোররা জার্মান কিশোর-তরুণদের মতো গা লাগিয়ে কাজ করবে না৷ মনে রাখতে হবে, এ সবই কিন্তু ধারণা, কেননা এই সংস্থাগুলি কখনো বিদেশি-বহিরাগত প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগ করে দেখেনি, তাদের ধারণাগুলি ঠিক কিনা৷

এবার যাওয়া যাক সেই সংস্থাগুলির কথায়, যারা বাস্তবিক বিদেশি-বহিরাগত প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগ করেছে৷ এদের সংখ্যা হল সত্তর হাজার, অর্থাৎ অনুপাতের হিসেবে ১৫ শতাংশ, এবং এই সংস্থাদের ৭৫ ভাগ বলছে, তারা তাদের বিদেশি প্রশিক্ষণার্থীদের সফলভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে৷ বলতে কি, তাদের কাছে বিদেশি প্রশিক্ষণার্থী নেওয়াটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কে কোন দেশ থেকে আসছে, তা নয়, বরং তারা আস্থাভাজন কিনা, তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারে কিনা, সেগুলোই হল বড় ব্যাপার৷

এই দু'টি সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি মেলালে বোঝা যাবে, ভয়-ভীতি-আশঙ্কা, এ সব আসে অপরিচয় থেকে৷ অপরিচয়ই সবচেয়ে বড় প্রাকার এবং সবচেয়ে বড় ব্যবধান৷ পরস্পরকে চিনতে, জানতে শিখলে অনেক ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়ে যায়৷ অপরদিকে সেই ভ্রান্ত ধারণার ফলে কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তিবর্গকে দূরে রাখলে, সেখানেই এক ধরনের সামাজিক টিউমার জন্ম নেয়, যা থেকে কালে জীবনসংশয় ঘটতে পারে৷ শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ডের মূল ইয়েমেন বা সিরিয়া বা ইরাকে নয়, কোনো বিশেষ ধর্মেও নয়; ফ্রান্সে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে, তার একটি কারণ নির্দেশ করেছেন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স নিজে৷ এ সপ্তাহেই তিনি বলেছেন: ফ্রান্সে এক ধরনের ‘‘সামাজিক ও জাতিগত অ্যাপারথাইড'' বা বর্ণবৈষম্য রয়েছে৷

DW Bengali Redaktion
ডয়চে ভেলের অরুণ শঙ্কর চৌধুরীছবি: DW/P. Henriksen

ফ্রান্সের বড় বড় শহরগুলির চারপাশে যে কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠেছে, সস্তার বহুতল বস্তিগুলিতে যে অভিবাসী সন্তানেরা বড় হচ্ছে, তাদের পুঞ্জীভূত ক্রোধ এর আগেও বিশৃঙ্খলা ও দাঙ্গা হয়ে ফুটে বেরিয়েছে৷ ফ্রান্সেও সরকারি স্কুলগুলির মান কমছে, বেসরকারি স্কুলগুলি তাদের প্রাধান্য আরো বাড়তে পেরেছে৷ শার্লি এব্দো হত্যাকাণ্ডের পর এতোদিনে ফরাসি সরকার স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশের দিকে নজর ফিরিয়েছেন, এক হাজার শিক্ষককে নতুন প্রশিক্ষণ দেবার পরিকল্পনা নিয়েছেন, ৯ ডিসেম্বর-কে ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতার দিবস'' হিসেবে পালন করার সংকল্প ঘোষণা করেছেন৷

এ ভাবেই আমাদের জার্মান সমাজের মূল ক্ষতগুলোর দিকে নজর ফেরাতে হবে – কেননা ক্ষোভ, অসন্তোষ, এমনকি হতাশার ক্ষত বিষয়েই সন্ত্রাসের সেপসিস সৃষ্টি হয়, সেই সন্ত্রাসই পরে বিপর্যয় ডেকে আনে৷ ইউরোপের বুকে সন্ত্রাস রোখার একটি পদ্ধতি হওয়া উচিত, সেই সন্ত্রাস যাতে জন্ম না নেয়, তার উপযোগী সুস্থ সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা৷ সূচনা হিসেবে জার্মানির তিন লাখ পনেরো হাজার শিল্পকারখানাকে বলা যেতে পারে: একবার একজন বিদেশি-বহিরাগত কিশোর-তরুণকে প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিয়ে দেখুনই না, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কিনা?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য