1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
অভিবাসনইটালি

বসনিয়া থেকে যেভাবে ইটালিতে মাহিন

আরাফাতুল ইসলাম পালেরমো, সিসিলি
৩ অক্টোবর ২০২২

বাংলাদেশি অভিবাসী আশরাফুজ্জামান মাহিনের সঙ্গে ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাংবাদিকদের প্রথম দেখা হয়েছিল চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি৷ তখন বসনিয়ার ভেলিকা ক্লাদুসা শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে ছিলেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/4Hh9e
বসনিয়া থেকে ইটালি পৌঁছাতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করতে হয়েছে মাহিনকে৷ শুরুর দিকে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন৷
বাংলাদেশি অভিবাসী আশরাফুজ্জামান মাহিনছবি: Arafatul Islam/DW

ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাংবাদিকরা আবারো দেখা পেয়েছেন মাহিনের৷ এবার ইটালির সিসিলি দ্বীপের রাজধানী পালেরমোতে, গত ২০ সেপ্টেম্বর৷ চলুন জেনে নেই কীভাবে বসনিয়া থেকে ইটালিতে পৌঁছেছেন মাহিন৷ সিসিলিতে তার জীবনের গল্প৷

পালেরমোর কেন্দ্রের ব্যস্ত সড়কে স্কুটার দাপিয়ে বেড়ান আশরাফুজ্জামান মাহিন৷ ২০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ইনফোমাইগ্রেন্টসের সাংবাদিকদের দেখে নিজেই স্কুটার থেকে নেমে এগিয়ে আসেন৷ জানান, বসনিয়াতে দেখা হয়েছিল চলতি বছরের শুরুতে৷

জিন্স প্যান্ট আর কালো টি-শার্ট পরা মাহিন বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই জানালেন, বসনিয়া থেকে স্মার্টফোনে লোকেশন দেখে নিজে নিজেই ইটালি পর্যন্ত চলে এসেছেন তিনি৷ প্রথমে মিলানে কয়েকমাস কাটিয়ে এখন সিসিলিতে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের এই তরুণ৷

ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘‘বসনিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়ার জঙ্গল ধরে আমি প্রথমে স্লোভেনিয়া যাই৷ সেখানে পুলিশ হাতে ধরা পড়ার পর দুদিন আটকে রাখে৷ তারপর দেশটিতে সাময়িকভাবে অবস্থানের অনুমতি দেয়৷ এরপর আমি ইটালি চলে আসি৷ সব মিলিয়ে বারো দিন লেগেছে৷''

বসনিয়া থেকে ইটালি পৌঁছাতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করতে হয়েছে মাহিনকে৷ শুরুর দিকে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে নিজে নিজেই চেষ্টা শুরু করেন৷ নিজে নিজে চেষ্টা শুরু করার পর আবারো বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হন তিনি৷ পরে ছয়মাস আগে ইটালিতে পৌঁছাতে সক্ষম হন তিনি৷

‘‘আমি বসনিয়া থেকে ইটালি আসতে দালালকে কোনো টাকা পয়সা দেইনি৷ উল্টো সাথে করে আরো বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছি৷ সবমিলিয়ে ১৯ জনের মতো ইটালি পৌঁছেছি,'' ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন ২৪ বছর বয়সি এই অভিবাসী৷

অভিবাসীদের নিয়ে তথ্যচিত্র- ‘রুটের নাম বলকান’

দীর্ঘচেষ্টার পর ইটালিতে পৌঁছানো

আশরাফুজ্জামান মাহিনের ইউরোপ পৌঁছানোর গল্পটা বেশ লম্বা৷ বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের এই তরুণ অনিয়মিত পথে ইটালি যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন সেই ২০১৮ সালে৷ এজন্য দেশে থাকতেই মানবপাচারকারীদের সহায়তা নেন তিনি৷

মাহিন বলেন, ‘‘আমি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ওমানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই৷ এরপর ওমান থেকে ইরান যাই৷ ইরান থেকে এক পর্যায়ে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে পৌঁছাই৷ এরপর সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া ঘুরে বসনিয়া৷''

বসনিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে ছয় লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছিল মাহিনের৷ দেড় বছরের মতো বলকান দেশটিতে অবস্থান করেছিলেন বাংলাদেশি এই তরুণ৷ আশ্রয় নেন ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত সংলগ্ন ভেলিকা ক্লাদুসা শহরের একটি শরণার্থী শিবিরে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বহিঃসীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইটালি বা ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের অনেকে শুরুতে এই শহরে অবস্থান নেন৷ এরপর সেখান থেকে সুবিধাজনক সময়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন তারা৷

পাকিস্তানি এবং আফগান একদল মানবপাচারকারী অর্থের বিনিময়ে অভিবাসীদেরকে অনিয়মিত পথে ইউরোপে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দেয় বলে জানান মাহিন৷

তিনি বলেন, ‘‘ভেলিকা ক্লাদুসাকেন্দ্রিক মানবপাচারকারীচক্রের হোতা মূলত পাকিস্তানি এবং আফগানরা৷ তারা মানুষকে এক জায়গায় জড়ো করেন এবং তারপর বসনিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া হয়ে ইটালিতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন৷''

তবে, এভাবে ইইউ সীমান্ত পাড়ি দেয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এক ব্যাপার৷ ক্রোয়েশিয়া পুলিশ অভিবাসীদের নির্দয়ভাবে পিটিয়ে বসনিয়ায় পুশব্যাক করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ অনেক সময় সীমান্তে অভিবাসীদের লক্ষ্য করে কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়৷ 

ইনফোমাইগ্রেন্টস অতীতে বসনিয়াতে একাধিক বাংলাদেশি অভিবাসীর সঙ্গে কথা বলেছে যারা সীমান্ত বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন৷

মাহিনও অনিয়মিত পথে ইইউ সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে বারবার বাধার মুখে পড়েছেন৷ তার হিসেবে, ১৫ বারের মতো আটকে দেয়া হয়েছিল তাকে৷ ফেরত পাঠানো হয়েছে বসনিয়ায়৷

তিনি বলেন, ‘‘বেশিরভাগ সময় স্লোভেনিয়াতে গিয়ে আটকে যেতাম৷''

ইটালিতে রাজনৈতিক আশ্রয়

ইউরোপের দেশ ইটালিতে পৌঁছানোর পর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন আশরাফুজ্জামান মাহিন৷ তার সেই আশ্রয়ের উপর শুনানি এখনো হয়নি৷

তাতে অবশ্য বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয়নি তার৷ মাহিন জানান, ইতোমধ্যে ইটালিতে ছয়মাস কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন তিনি৷

‘‘আমি ছয়মাসের কাগজ দিয়ে কাজ করতে পারছি৷ ছয়মাস পর আবার এটি নবায়ন করতে হবে৷ এরমধ্যে আমার আশ্রয়ের আবেদনের শুনানির জন্য একটি তারিখ পড়বে৷ যদি আমার আবেদন গ্রহণ করা হয় তাহলে বছরখানেকের মধ্যে পুরোপুরি বৈধ হয়ে যেতে পারবো৷''

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির অবস্থান ইটালিতে৷ অনেক অভিবাসীর মধ্যে এমন ধারণা রয়েছে যে, কোনোক্রমে ইটালিতে পৌঁছাতে পারলে একসময় বৈধ হওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে৷ মাহিনও সেটাই আশা করছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন একটি সুশি রেস্তোরাঁয় কাজ করছি৷ সেখানে সুশি বানানো শেখার পাশাপাশি ওয়েটারের কাজ করি৷''

রেস্তোরাঁয় কাজ করে সবকিছু ভালোভাবে চলছে বলেই জানালেন এই বাংলাদেশি তরুণ৷ ইতোমধ্যে ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে একটি স্কুটারও কিনেছেন তিনি৷ সেটি নিয়ে অবসর সময়ে পালেরমো চষে বেড়ান মাহিন৷

তিনি বলেন, ‘‘আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি৷ ভবিষ্যতে কাগজপত্র হয়ে গেলে নিজেই একটি সুশি রেস্তোরাঁ করার ইচ্ছা আছে৷ দেশে গিয়েও ঘুরে আসবো৷''

‘এভাবে আসা ঠিক নয়, বিকল্পও নেই'

মাহিন চারবছর চেষ্টা করে যে পথে বাংলাদেশ থেকে ইটালি পৌঁছেছেন তা অত্যন্ত বিপজ্জনক এক পথ হিসেবে পরিচিত৷ বিশেষ করে ইরান-তুরস্ক সীমান্তে পুলিশের গুলিতে অভিবাসীদের মৃত্যুর খবর শোনা যায় মাঝেমাঝেই৷ এছাড়া মানবপাচারকারীদের হাতে অভিবাসীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটে সেখানে৷ অনেক সময় মানবপাচারকারীরা অভিবাসীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করে৷

মাহিন মনে করেন, এরকম অনিয়মিত পথে ইউরোপে আসা উচিত নয়৷ তারপরও অনেকে চলে আসেন৷

‘‘ইউরোপে কোনো রকমে ঢুকতে পারলেই আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়,'' বলেন তিনি, সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমাদের তরুণরা দেশে থেকে তেমন কিছু করতে পারে না৷ কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই৷ লেখাপড়া শিখেও বেকার থাকতে হয়৷ এজন্যই এভাবে যাত্রা করে৷''

প্রথম প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর, ২০২২ ইনফোমাইগ্রেন্টস

অভিবাসী বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইনফোমাইগ্রেন্টস তিনটি প্রধান ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমের নেতৃত্বে একটি যৌথ প্লাটফর্ম৷ প্লাটফর্মটিতে রয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, ফ্রান্স মিডিয়া মোন্দ, এবং ইটালিয়ান সংবাদ সংস্থা আনসা৷ এই প্রকল্পের সহ-অর্থায়নে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য