বলছি এক গণহত্যার কথা
১৯৯৪ সালের এপ্রিলে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় চালানো হয়েছিল এক গণহত্যা৷ মাত্র একশো দিনে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় আট লক্ষ মানুষ৷
প্রেসিডেন্টের হত্যা দিয়ে শুরু
১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল অজ্ঞাত হামলাকারীরা রুয়ান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানা বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে৷ এতে হাবিয়ারিমানা ও তাঁর সঙ্গে থাকা বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সহ আরও আটজন নিহত হন৷ এর পরদিন থেকেই শুরু হয় গণহত্যা৷
গণহত্যার কারণ
নিহত হওয়া প্রেসিডেন্ট হাবিয়ারিমানা হুটু জনগোষ্ঠীর সদস্য৷ তাঁর সরকার টুটসি সম্প্রদায়ের দল ‘রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট’ (আরপিএফ)-এর সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করেছিল৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়েছিল উগ্র হুটুরা৷ এঁদের মধ্যে সরকারে থাকা অনেক সৈন্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন৷ ফলে উগ্রবাদীরা ছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্য গণহত্যায় অংশ নেয়৷
একশো দিনে আট লাখের প্রাণ!
প্রায় ১০০ দিন ধরে চলা গণহত্যায় প্রাণ যায় প্রায় আট লক্ষ মানুষের৷ উগ্রপন্থি হুটুরা পরিকল্পনা করে টুটসি সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যা করা শুরু করে৷ যেসব হুটু এই হত্যাযজ্ঞের বিরোধিতা করেছিলেন তাদেরও মেরে ফেলে হুটু উগ্রবাদীরা৷ মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে সাংবাদিক, রাজনীতিক কেউ রেহাই পায়নি৷ প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার মধ্য দিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়৷
‘জেনোসাইড ফ্যাক্স’
১৯৯৪ সালের এপ্রিলে গণহত্যা শুরুর তিনমাস আগে জাতিসংঘে একটি সতর্কবাণী পাঠিয়েছিলেন রুয়ান্ডা বিষয়ক জাতিসংঘ মিশনের কমান্ডার রোমিও ডালেয়ার৷ কিন্তু সে সময় তাঁর কথা শোনা হয়নি৷ এই সতর্কবার্তাটি সেসময় ‘জেনোসাইড ফ্যাক্স’ নাম পেয়েছিল৷
গির্জায় গণহত্যা
রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালির কাছের একটি গির্জায় প্রায় চার হাজার পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছিল৷ দা, ছুরি ও কুড়াল দিয়ে তাদের মারা হয়৷ এখনো ঐ গির্জায় গেলে কঙ্কাল, মানুষের শরীরের হাড় ও দেয়ালে বুলেটের আঘাত দেখতে পাওয়া যাবে৷
ফ্রান্সের ভূমিকা
রুয়ান্ডার হুটু সরকারের সঙ্গে ফ্রান্সের ভালো সম্পর্ক ছিল৷ তাই গণহত্যা শুরুর দুই মাসের মাথায় সেদেশে সেনাবাহিনী পাঠায় ফ্রান্স৷ ফরাসি সেনারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত রুয়ান্ডার সৈন্য ও জঙ্গিদের প্রতিবেশী দেশ জাইর (বর্তমানে ডিআর কঙ্গো) পালিয়ে যেতে সহায়তা করে৷ এই মানুষগুলো এখনো রুয়ান্ডার জন্য হুমকিস্বরূপ৷
লক্ষ লক্ষ শরণার্থী
গণহত্যা থেকে বাঁচতে লক্ষ লক্ষ টুটসি ও হুটু দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী তানজানিয়া, জাইর ও উগান্ডায় পালিয়ে গিয়েছিল৷
রাজধানী দখল
হুটুরা গণহত্যা শুরু করার পর টুটসি বিদ্রোহীদের দল আরপিএফ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে৷ অবশেষে তারা রাজধানী কিগালির নিয়ন্ত্রণ নিতে সমর্থ হয়৷
গণহত্যা যেভাবে শেষ হয়
কিগালির দখল নেয়ার পর আরপিএফ নেতা মেজর জেনারেল পল কাগামে ১৯৯৪ সালের ১৮ জুলাই যুদ্ধ শেষের ঘোষণা দেন৷ এর মধ্য দিয়ে তিন মাস ধরে চলা গণহত্যার সমাপ্তি ঘটে৷ উল্লেখ্য, ২০০০ সাল থেকে কাগামে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷