1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বম পার্টি'র নাথা বমসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

১৮ জানুয়ারি ২০২৩

বান্দরবানে ‘বম পার্টি'র আখড়ায় খুন হয়েছেন তার সন্তান আল আমিন৷ জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'র এই সদস্যের নিহত হওয়ার ঘটনায় কুমিল্লার আদালতে মামলা হয়েছে৷ মামলাটি করেছেন আল আমিনের বাবা নুরুল ইসলাম৷

https://p.dw.com/p/4MLoY
ছবি: DW/M. Mamun

নুরুল ইসলামের অভিযোগ, তার ছেলেকে ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই' করে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করা হয়৷

মঙ্গলবার বিকালে করা মামলায় বাদী নুরুল ইসলাম আসামি হিসেবে পাহাড়ের সশস্ত্র দল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের-কেএনএফ বা‘বম পার্টি'র  প্রধান নাথান বমসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করেছেন৷ আসামিরা সবাই জঙ্গি ও সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য৷

বাদী তার ছেলেকে ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই' করে উগ্রবাদীরা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করেছেন এবং দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণেনিয়ে ‘মতের মিল না হওয়ায়' খুন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন৷

মঙ্গলবার ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিকালে আমার ছেলে আল-আমিনকে হত্যার অভিযোগে মামলা করেছি৷ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷”

বাদী পক্ষের আইনজীবী খলিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘বিকালে বান্দরবানের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. নাজমুল হোসেনের আদালতে মামলাটি করা হয়েছে৷ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রুমা থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷” 

মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আর ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যা ছাড়াও ২০১ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে৷

মামলার আসামিরা হলেন- কুমিল্লার মোখলেছুর রহমানের ছেলে আনিসুর রহমান মাহমুদ (৩২), শামীম মাহফুজ (৪৭), আব্দুর রহমানের ছেলে দিদার (২৭), মৃত মমতাজ আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩৫), মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. বায়েজিদ ইসলাম (২১), আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সালেহ আহম্মদ সাইহা (২৭), মজিবুর রহমানের ছেলে ইমরান বিন রহমান শিথিল (১৮), নারায়ণগঞ্জের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন বাবু (৩৪), সিলেটের মাওলানা হোসাইনের ছেলে আব্দুল্লাহ মায়মুন (৩৪), মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাসকুর রহমান রনবীর (৪৪), আব্দুস সালামের ছেলে শিবির আহমেদ (২৬), মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. সাদিকুর রহমান সুমন (২৯), সুনামগঞ্জের মৃত সৈয়দ আব্দুল কালামের ছেলে সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক (৩১), আব্দুল কাদের সুজন, বান্দরবানের জাওতন লনচেও'র ছেলে নাথানা লনচেও ওরফে নাথান বম (৫০), সাংবেম বমের ছেলে লালদন সাং বম পাদন (২৭), লালমোহন বিয়াল ওরফে কর্নেল সলোমান (৫০), নোয়াখালীর আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে নিজামুদ্দিন হিরন ইউসুফ (৩২) ও ইসমাইল হোসেন হানজালা৷

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা ‘ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দিয়ে ও মগজ ধোলাই করে' আল-আমিনকে সংগঠনে যুক্ত করেছে এবং পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠিয়েছে৷ এক পর্যায়ে আল-আমিন ‘নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসতে চাইলে' এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ‘দ্বিমত' হয়৷ তাই তাকে গত বছরের ২৪ থেকে ২৬ নভেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময় হত্যা করে এবং লাশ গুম করে দেয়৷ যাতে তাদের সংগঠনের বেআইনি কার্যকলাপ প্রকাশ না হতে পারে৷    

নুরুল ইসলাম বলেন, আল-আমিন ২৩ আগস্ট বিকালে কুমিল্লার বাড়ি ছাড়েন৷ ছেলের খোঁজ না পেয়ে তিনি ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন৷ 

গত ১২ জানুয়ারি র‌্যাব জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল  আনসারের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ জঙ্গিরা রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার গহীন পাহাড়ে সশস্ত্র দল ‘কেএনএফ' বা ‘বম পার্টি'র আস্তানায় প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল৷ 

পরে তাদের জিজ্ঞাবাদের জন্য রিমান্ডে পায় পুলিশ৷ তখন দুই জঙ্গি ‘নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে একজনকে খুন করে কবর দেওয়ার' কথা জানায়৷ 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নুরুল ইসলাম ছেলেকে হত্যার খবর পান৷ তিনি তখন পরিবার নিয়ে বান্দরবান আসেন ছেলের লাশ পাওয়ার আশায়৷ মরদেহের খোঁজে ১৫ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রুমা উপজেলার রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম মুয়ংমুয়াল পাড়ায় অভিযান চালায়৷ অভিযানে আল-আমিনের বাবা নুরুল ইসলামও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন৷ 

কিন্তু কবর খুঁড়ে গিয়ে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি; পাওয়া গেছে একটি কম্বল৷ আর আশপাশে পাওয়া গেছে কাপড়-চোপড় ও হাঁড়ি-পাতিল৷ ছেলের লাশ না দেখতে পেয়ে হতাশ, দিশেহারা কুমিল্লার নুরুল ইসলাম ও তার পরিবার৷ 

মুয়ংমুয়াল পাড়া এলাকাটি খুবই দুর্গম৷ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ১৪ জানুয়ারি প্রস্তুতি নিয়েও সেখানে যেতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হয়৷ 

এলাকাটি রুমা উপজেলার মধ্যে হলেও যাওয়ার সহজ পথ থানচি উপজেলা হয়ে৷ রুমা উপজেলার উপর দিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে হলে এক থেকে দেড় দিন সময় লেগে যায়৷ ফলে দলটি থানচি হয়ে যায়৷ অভিযান শেষ করে রাতে থানচি উপজেলা সদরে ফিরে আসে দলটি৷

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য