বন্যা, লাভা, ভূমিধসে বিপর্যস্ত ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা
সুমাত্রায় ভয়ঙ্কর বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে পৌঁছেছে৷ নিখোঁজ রয়েছেন ২০ জন৷ কৃত্রিম উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বৃষ্টি হতে না দিয়ে উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ৷
বৃষ্টি, লাভা, ভূমিধস
মৌসুমি বৃষ্টি, নদী তীর উপচে পড়া পানি, তার সাথে মাউন্ট মারাপির শীতল লাভা৷ সব মিলিয়ে শনিবার মধ্যরাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে পশ্চিম সুমাত্রার চারটি জেলায়৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২১টি বাড়িঘর, মসজিদ, ১৯টি সেতু, প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমি৷ বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা৷ আকাশ থেকে তোলা ছবিটি মঙ্গলবারের (১৪ মে) আগাম জেলার৷
৬৭ জনের প্রাণহানি
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র আব্দুল মুহারি বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন কাদার ভেতর ও নদী থেকে ৬৭ জনের মরদেহ তারা উদ্ধার করেছেন৷ বেশিরভাগ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে আগাম ও তানাহ ডাটার জেলায়৷ উদ্ধারকারীরা এখনও ২০ নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান চালাচ্ছেন৷ এর আগে নিখোঁজ থাকা ২৫ জনের মধ্যে পাঁচ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে৷ আহত হয়েছেন ৪৪ জন৷
বিধ্বস্ত বাড়িঘর
বন্যা ও ভূমিধসে বহু বাড়িঘর, ভবন ভেসে গেছে৷ চার হাজারের বেশি মানুষ আশেপাশের ভবন ও সরকারি অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেন৷ বন্যার পানি নামার পর তাদের কেউ কেউ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন৷ বুধবার তানাহ ডাটার জেলার একটি গ্রামের তেমনই কয়েক বাসিন্দা নিজেদের ধসে পড়া বাড়ির জিনিসপত্র খুঁজে দেখছেন (ছবিতে)৷
ক্লাউড সিডিং
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাতে আর বৃষ্টি না হয় সেজন্য বুধবার বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজের সাহায্যে মেঘের উপর লবণ ছিটানো হয়েছে৷ এই অপারেশনের জন্য ১৫ টন লবণ প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া দপ্তরের প্রধান দুইকোরিতা কর্ণবতী৷ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান সুহারিয়ান্তো জানিয়েছেন ‘ক্লাউড সিডিং’ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ছিল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাতে বৃষ্টি না হয় তা নিশ্চিত করা এবং অনুসন্ধান কাজ চালু রাখা যায়৷
উদ্ধার তৎপরতা
বিমান বাহিনী, আবহাওয়াবিদেরা যখন আকাশে বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত তখন উদ্ধারকর্মীরা নদী ও ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রামগুলোতে অনুসন্ধান, সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সেখানে বেশিরভাগ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট কাদায় ঢেকে গেছে৷ উপড়ে পড়েছে গাছপালা৷
জরুরি সাড়াদান
সুহারিয়ান্তো জানিয়েছেন, আগামী ২৫ মে পর্যন্ত জরুরি সাড়াদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন তারা৷ কোন এলাকাগুলো বসবাসের উপযোগী নয় এবং কাদেরকে বিপজ্জনক অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন তা নিরূপন করছে কর্তৃপক্ষ৷ ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে৷
ভয়ঙ্কর মারাপি
গত বছর মারাপির অগ্ন্যুৎপাতে ২৩ জনের প্রাণহানির পর থেকেই সক্রিয় আছে আগ্নেয়গিরিটি৷ এটি ইন্দোনেশিয়ার ১২০ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির একটি৷ ১৭ হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ ইন্দোনেশিয়া৷ আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, বন্যা, ভূমিধসের ঘটনা দেশটিতে লেগেই আছে৷