1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা

২ মে ২০১২

ভারতে গিয়ে বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করেছেন৷ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় সহায়তা করেছেন সাহসী নারী মাজেদা শওকত আলী৷ এখনও গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/14nmH
ছবি: AP

‘‘২৬শে মার্চ মুক্তিযোদ্ধারা আমার স্বামীকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য বাড়ি থেকে সাথে করে নিয়ে যান৷ আমি ছোট্ট দুই সন্তানকে নিয়ে বাসায় ছিলাম৷ দুপুরের দিকে যশোর থেকে খুলনা যাওয়ার সময় পাক সেনারা আমাদের বাসায় আসে৷ আমার সন্তানসহ আমাকে আটক করে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে৷ এক সেনা কর্মকর্তা পিস্তলের ট্রিগারে আঙুল দিয়ে আমার ছেলের বুকের উপর ধরে৷ আর আরেক মেজর আমার বুকে পিস্তল ধরেছিল৷ এসময় আমি কীভাবে যেন জোরেই বলে ফেলেছিলাম যে, তোমার সন্তান হলে মারতে পারতে কিনা? তোমার মা-বোনদের উপর এভাবে অস্ত্র ধরে থাকতে পারতে কিনা? আমার কথা শুনে মেজর আমাদের বলে গেল যে, তোমাদের এখন ছাড়া পেলে৷ তবে আমরা শওকত আলীকে খুঁজতে যাচ্ছি৷ তাঁকে পেলে তখন তোমাদেরকেও আবার ধরে নিয়ে যাবো৷ তবে আমার স্বামী কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন৷ তাঁকে তারা আর খুঁজে পায়নি৷ আর আমাদের পাহারা দেওয়ার জন্য পাক সেনা সদস্যদের কাউকেও রেখে যায়নি৷ শুধু আমাদের বাড়ির দারোয়ানদেরকে বলে গিয়েছিল আমাদের পাহারা দিতে৷ এসময় তারা চলে গেলে আমরা বাড়ি থেকে চলে যায়৷ পরে পাক সেনারা ফিরে এসে আমাদের না পেয়ে দারোয়ানদের হত্যা করে৷ এছাড়া আমাদের পাশের বাড়িতে পাটকলের এক কর্মকর্তা থাকতেন তাকেও মেরে ফেলে৷'' স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই কীভাবে পাক সেনাদের বন্দুকের নল থেকে জীবন ফিরে পেয়েছিলেন সেকথাই জানাচ্ছিলেন বীর সাহসী নারী মাজেদা শওকত আলী৷

নারী মুক্তিযোদ্ধা মাজেদার স্বামী সেনা কর্মকর্তা শওকত আলী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে ছাড়া পান৷ কিন্তু একইসাথে সেনা বাহিনীর চাকুরি থেকেও তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়৷ ফলে কর্নেল (অবঃ) শওকত আলী পরে খুলনা ও যশোরের মাঝামাঝি নওয়াপাড়ায় একটি পাট কারখানায় চাকুরি শুরু করেন৷ একইসাথে মাজেদা-শওকত দম্পতি চালিয়ে যেতে থাকেন মুক্তির সংগ্রাম৷ রাজনৈতিক পট পাল্টে সাধারণ নির্বাচনের পর আসে ১৯৭১ সালের সেই ভয়াল ২৫শে মার্চ রাত্রি৷ অবশ্য তার আগে থেকেই মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন শওকত আলী৷ ফলে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরপরই তাঁদের বাসায় হানা দেয় পাক বাহিনী৷

Flash-Galerie Bangladesch 1971 Freiheitskrieg
একাত্তরের নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজনছবি: Zinat Rahman

মাজেদা সন্তানদের নিয়ে চলে যান গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে৷ এরপর শওকত আলী প্রথমে মাদারীপুরে এবং পরে মেলাঘরে গিয়ে দুই নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং নেতৃত্ব দেন৷ মাজেদা সন্তানদের নিয়ে মে মাসে ভারত পাড়ি দেন৷ সেখানে গিয়ে তরুণ-তরুণীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন এবং সংগঠিত করেন মাজেদা৷ বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় সহায়তা করেছেন মাজেদা শওকত আলী৷ তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মাজেদার দুই সন্তানের একসাথে অপারেশন করতে হয়েছিল৷ ফলে তখন নিজের সন্তানদের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়েছিল মাজেদাকে৷

দেশ স্বাধীন হলে ২৮শে ডিসেম্বর নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন মাজেদা শওকত আলী৷ এসে দেখেন তাঁর বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি সবকিছুই পাক সেনারা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে এবং বাড়ি দেখা-শোনার ভার ছিল যার উপর তাকেও হত্যা করেছে৷ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ফিরে নিজেদের গুছিয়ে নিতে বেশ সময় লেগেছিল৷ এরপর তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অবস্থার উন্নয়নের কাজ শুরু করেন মাজেদা-শওকত দম্পতি৷ ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি বা নুসা নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা৷ বর্তমানে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাজেদা শওকত আলী৷ আর মুক্তিযুদ্ধের অগ্রণী সৈনিক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শওকত আলী বর্তমানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার৷

মুক্তিযুদ্ধের যেসব বিয়োগান্তক ঘটনা এখনও আলোড়িত করে, সেগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি ঘটনার কথা জানান নারী মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘যুদ্ধের সময় আমরা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের পাশেই থাকতাম৷ জাহানারা ইমামের ছেলে শফি ইমাম রুমী গেরিলা যুদ্ধ থেকে আসলে যোগাযোগ হতো৷ একদিন রুমী আমার বাসায় গিয়েছিল এবং খাওয়া দাওয়া করেছিল৷ এরপর সে গেরিলা অভিযানে যায় কিন্তু আর ফিরে আসেনি৷ রুমীর স্মৃতিগুলো আমাকে এখনও খুব নাড়া দেয়৷ এছাড়া নওয়াপাড়ায় আমার পাশের বাসার দিলরুবার স্বামীকে পাক সেনারা হত্যা করেছিল৷ যুদ্ধ শুরুর মাত্র ১০ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল৷ আমি বিজয়ের পর দেশে ফিরে প্রথম সেই মেয়েটির সাথে দেখা করেছিলাম৷ এসব ঘটনা আমাকে এখনও খুব বিমর্ষ করে তোলে৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য