1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বছরে ২০ লাখ মানুষকে কাজ দেয়াটাই চ্যালেঞ্জ’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ নভেম্বর ২০১৬

‘‘প্রতি বছর নতুন ২০ লাখ মানুষ কাজের বাজারে আসছে৷ সেই পরিমান কাজ তো সৃষ্টি হচ্ছে না,’’ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ৷

https://p.dw.com/p/2TIM0
Qazi Kholiquzzaman Ahmad
ছবি: Q. Kholiquzzaman Ahmad

তাঁর কথায়, ‘‘ বাংলাদেশ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে কৃষির বিভিন্ন খাতে প্রায় ২২ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষি উদ্যোগকে অর্থায়ন করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে নতুন ধরনের ফসল ও পণ্য উৎপাদনে যুক্ত হয়েছেন প্রায় তিন লাখ উদ্যোক্তা৷আমরা এখন টাকার ব্যবস্থা করছি, প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছি, তাদের বাজারজাতকরণে সহায়তা করছি৷ সে কারণে অনেকে এগিয়ে আসছে৷ তবে এখনো অনেক পথ বাকি আছে৷'' 

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণরা এখন কৃষিকাজে এগিয়ে আসছে, বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?

অধ্যাপক ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ : আমার মনে হয় এটা করা উচিৎ৷ কারণ আমাদের কর্মসংস্থান দরকার৷ তরুণ প্রজন্ম যদি এই কাজে না আসে তাহলে দেশের অগ্রগতি যত তাড়াতাড়ি হওয়া উচিৎ তা হবে না৷ কারণ আমাদের দেশে অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে কম বয়সের ছেলে-মেয়ে৷ অতত্রব এগিয়ে আসছে এটা সুখবর৷ এই এগিয়ে আসার জন্য কিছু কাজ করতে হচ্ছে৷ আগে শিক্ষিত হলে কৃষিতে আসতে চাইত না, এটাই ছিল এখানের মোটামুটি ব্যবস্থা৷ এখন এমন অনেক ছেলে-মেয়ে গ্রামে এমনকি শহরেও আছে যাদের কর্মসংস্থান নেই, বেকারত্ব তাদের উপর চেপে বসছে৷ এ অবস্থায় তারা কিছু কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে, যেখান থেকে তাদের উপার্জন হতে পারে৷ এই আগ্রহটাকে কাজে লাগাতে হবে৷ আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি৷ আমারা তাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছি, অর্থ দিচ্ছি৷ এক সময় অর্থায়নও হতো না৷ টাকা পাওয়া যেত না৷ আমরা এখন টাকার ব্যবস্থা করছি, প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছি, তাদের পন্য বাজারজাতকরণে সহায়তা করছি৷ সে কারণে অনেকে এগিয়ে আসছে৷ তবে এখনো অনেক পথ বাকি আছে৷

সরকারের পক্ষ থেকে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে বা সহায়তা দিতে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

সরকারের পক্ষ থেকে তো অনেকগুলো পদক্ষেপ আছে৷ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ ‘চাকরি না খুঁজে চাকরি দাও-' এই ধরনের একটা স্লোগান সরকারের আছে৷ যারা আসছে, তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে৷ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষনও দেয়া হয়৷ শুধু কৃষি নয়, কৃষির বাইরেও প্রশিক্ষন দেয়া হয়৷ আমি পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান৷ এটাও সরকারি প্রতিষ্ঠান৷ আমরাও সরকারের নীতির আঙ্গিকে কাজ করি৷ আমরা দুটো কাজ করছি, একটা হলো তাদের দক্ষতা দিয়ে কাজ করা আর অপরটি হলো তাদের মানবিক মূল্যবোধ যাতে বিকশিত হয় সেদিকে নজর দেয়া, কারণ, অনেক তরুণ বিপথে যাচ্ছে৷ তাদের যাতে ফিরিয়ে আনা যায়৷ আমরা তাদের দক্ষতা সৃষ্টিতেও নজর দিচ্ছি, যাতে তারা কাজ করে আয়-উপার্জন বাড়াতে পারে৷

এই তরুণদের আপনারা কিভাবে কৃষিতে আনলেন?

একটা উদাহরণ দেই৷ একটা ছেলে এমএ পাশ করে গ্রামে যাচ্ছে৷ সেখানে গিয়ে বেশ কিছুদিন কিছু করার চেষ্টা করেছে৷ এরপর শহরে ফিরে চাকরির চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু চাকরি সে পায়নি৷ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন সরাসরি কাজ করে না৷ আমাদের কিছু সহায়ক এনজিও আছে৷ তাদের মাধ্যমে কাজ করি৷ এমন একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে প্রস্তাব দেয়া হলো, ‘‘তুমি যদি কিছু করতে চাও, আমরা সহায়তা করব৷'' শেষ পর্যন্ত সে রাজি হলো এবং একটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করল৷ দুই- তিন বছরের মধ্যে তার অনেকগুলো পুকুর হয়ে গেছে৷ এখন সে স্বচ্ছল৷ গ্রামে আমি দেখেছি, একটা কাজ করে একজন যদি সফলতা পায় তাহলে আরো অনেকেই ওই কাজে আগ্রহী হয়৷ 

তরুণরা এত কাজ থাকতে কেন কৃষিতে আসবে? আপনি কী মনে করেন?

এত কাজ নেই তো৷ ব্যাপারটা হচ্ছে, কাজ পাওয়া যায় না বলেই তো আসছে৷ প্রতি বছর নতুন ২০ লাখ মানুষ কাজের বাজারে আসছে৷ সেই পরিমান কাজ তো সৃষ্টি হচ্ছে না৷ আর এখন তো কৃষি মানে শুধু ধান আর গম না৷ মাছ চাষ, গাভী পালা, মুরগি পালা এ সবই কিন্তু কৃষির মধ্যে৷ সবগুলোতেই তারা আসছে৷ এখানে আমরা প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করছি, অর্থায়ন হচ্ছে৷ কখনও কখনও আমরা অনেককে নিয়ে একসঙ্গে প্রশিক্ষন দেই৷ যে যেটা নিতে চায়, কেউ কৃষিতে যেতে চায়, কেউ মাছ চাষ করতে চায়, যে যেটা করতে চায় আমরা সেদিকে তাকে প্রশিক্ষন দেই৷

Interview of Pof Dr. Qazi Kholiquzzaman Ahmad - MP3-Stereo

কৃষির চেয়ে শিল্প বা প্রযুক্তিতে প্রবৃদ্ধি বেশি৷ তাদের যদি  সেদিকে নিতে পারলে তো রাষ্ট্রের লাভ, নাকি?

অবশ্যই৷ দেশের লাভ, ওদের নিজেদের লাভ, সমাজের লাভ, এমনকি ওদের পরিবারেরও লাভ৷ একজন পিছিয়ে পড়া মানুষ, যার আয়-উপার্জন নেই, তার যদি আয়-উপার্জন বাড়ে, তাহলে তার নিজের উন্নতি হয়, পরিবারের উন্নতি হয় এবং জাতীয় আয়েও সংযোজিত হয়৷ এতে আরেকটা কাজ হয়, সেটা হলো বৈষম্য কিছুটা কমে আসে৷

তরুণরা কৃষিকাজ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা ও কারিগরিসহায়তা কি পাচ্ছে?

প্রয়োজনীয় বলব না, কারণ পাচ্ছে, কিন্তু সেটা আরো বাড়ানো দরকার৷ আমি তো পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের কথা বললাম, আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও করছে৷ এটা আগাচ্ছে, তবে আরো সময় লাগবে৷ এখনো বেকারত্ব অনেক ব্যাপক৷

যে তরুণের অর্থ নেই, জমি নেই, কিন্তু শিক্ষিত, সে কিভাবে কৃষিতে সম্পৃক্ত হবে?

অর্থ তো বললাম আমরা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে দেই, অন্য প্রতিষ্ঠানও দেয়, আমরা প্রশিক্ষনও দেই৷ সুতারাং তার যদি জমি না-ও থাকে, আগে যে উদাহরণ দিলাম যে পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেছে, সেটা করা সম্ভব৷ সবার যে ধান করতে হবে তা না৷ সবজি করাও তো কৃষি৷ বিভিন্নজন বিভিন্ন রকমের কাজ করছে৷ মাছটা বেশ ব্যাপক আকারে হচ্ছে৷ একটা ভুল ধারণা হয়েছে, কৃষি বললে মানুষ মনে করে ধান৷ শুধু এটা না, অন্যসবও কৃষি৷

বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় তরুণদের আপনারা কৃষিতে সম্পৃক্ত করতে পেরেছেন?

অনেক এলাকায়৷ আমাদের তো সারাদেশে কাজ আছে৷ প্রতিটি উপজেলায় কাজ আছে৷ বিশেষ করে ১৫০টি ইউনিয়নে আমরা কাজ করছি৷ যেমন উপকূলীয় এলাকা আছে, যেখানে খরা আছে সেখানেও কাজ আছে৷ লালমনিরহাটসহ সব এলাকায়ই আমাদের কাজ আছে৷ ফলে এক জায়গায় না সবজায়গাতেই কিছু কিছু কাজ হচ্ছে৷ অনেক এলাকা বাকি আছে৷ আমাদের আরো অনেকদূর যেতে হবে৷

আমাদের দেশে তো হাজার হাজার তরুণ এখনো বেকার৷ তাদের মধ্যে আপনারা যাদের সহযোগিতা করছেন, তাদের বাছাই করছেন কিভাবে?

আমরা ১৫০টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটিকে সহায়তা দিচ্ছি৷ এখানে বাছাই করার কোনো ব্যাপার নেই৷ এই ১৫০টি ইউনিয়নে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করছি৷ অন্যান্য জায়গায় তো আমরা সবাইকে দিতে পারি না৷ শুধু যারা উৎসাহিত হয়, তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করি৷ যুব উন্নয়ন অধিদপ্ততর তো সারাদেশেই কাজ করছে৷ তারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন দিচ্ছে৷ সুতারাং প্রশিক্ষন আস্তে আস্তে বাড়ছে৷ প্রশিক্ষন হলে অর্থায়নের ব্যবস্থাও বিভিন্নভাবে হয়৷ আসলে যতটা প্রয়োজন, ততটা এখনো সম্ভব হয়নি৷ আশা করি ভবিষ্যতে অর্থায়ন আরো বাড়বে এবং তরুণরা আরো এগিয়ে আসবে৷

সরকারের কাছে এই মুহুর্তে তরুণদের জন্য আপনার কী চাওয়ার আছে?

আমার কিছু চাওয়ার নেই৷ আমি চেষ্টা করছি৷ সরকারের একটা নীতি আছে৷ সেই নীতির আওতায় যে কাজগুলো হচ্ছে, সেগুলো যেন আরো সঠিকভাবে হয়৷ আমাদের নীতির কোনো সমস্যা নেই৷ সমস্যা হলো যেভাবে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা সেভাবে বাস্তবায়ন হয় না৷ যাদের জন্য এই উদ্দেশ্য তাদের কাছে অনেক সময় এটা পৌঁছায় না৷ সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে যার যেটা প্রাপ্য সেই জায়গায় যদি আমরা ভালো করে কাজ করতে পারি, দেশটা এমনিতেই এগিয়ে যাচ্ছে, তাহলে আরো অনেক বেশি এগিয়ে যাবে৷

তরুণদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

ওদেরকে আমি দুই-তিনটা জিনিস বলি৷ যারা পড়াশোনা করছে, তাদের ভালোভাবে পড়াশোনাটা করতে হবে৷ পড়াশোনা শেষ হলে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা আছে৷ প্রশিক্ষন নিতে হবে এবং সেটা কাজে লাগাতে হবে৷ আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমি এই কাজটা করব৷ আর আমি যদি আরেকটা কাজ চাই, কিন্তু পাচ্ছি না, তাহলে কিন্তু হবে না৷ সিদ্ধান্তটা নিতে হবে যে আমি এই কাজটা করব৷ অনেকের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে৷ কেউ অঙ্গীকার নিয়ে এলে সে ভালো করবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য