‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা দেখে যেতে চাই’
১১ মে ২০১১একাত্তরে অনিল চন্দ্র তংচংগা'র বয়স ছিল ১৮ বছর৷ মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে খানিকটা গোয়েন্দার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি৷ চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনায় অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানিদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন এই তরুণ৷ এরপর সেসব তথ্য পৌঁছে দিতেন মুক্তিকামী এক রাজনৈতিক নেতার কাছে৷
ভারতে প্রশিক্ষণ
অনিল ভারতের দেরাদুনে গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন জুন মাসের দিকে৷ আগস্টে ফিরে আসেন দেশে৷ অবস্থান নেন রাঙ্গুনিয়া এলাকায়৷ একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ বিশেষ করে এক সহযোদ্ধাকে রানিরহাটের শত্রুঘাঁটি থেকে উদ্ধারের কথা এখনো মনে আছে তাঁর৷ পরিমল শীল নামে সেই যোদ্ধা আজও বেঁচে আছেন৷ অনিল জানান, আমরা তিনদিক দিয়ে হামলা করেছিলাম রানিরহাটে৷ সেটা ছিল সবার সামনে সম্মুখ যুদ্ধ৷ শত্রুসেনাদের ঘায়েল করে সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পরিমলকে উদ্ধার করি৷ তাকে অত্যাচার করা হয়েছিল৷
পাঁচ সহযোদ্ধার মৃত্যু
এমন সফলতা সবসময় ধরা দেয়নি অনিলের ভাগ্যে৷ আরেকবার কাউখালি থেকে তাঁরই পাঁচ সহযোদ্ধাকে আটক করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী৷ তাদেরকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি৷ অনিল জানান, পাকিস্তানি হানাদাররা কাউখালি থেকে তাদেরকে আটক করে রাঙামাটি নিয়ে যায়৷ আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে উদ্ধারে৷ কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি৷ কেননা, তাদেরকে রাঙামাটি নিয়েই হত্যা করেছিল শত্রুরা৷
ইউনিয়ন চেয়ারম্যান
অনিল চন্দ্র তংচংগা বর্তমানে বাস করছেন চন্দ্রঘোনার ওয়াবদা ইউনিয়নে৷ স্বাধীনতার পর দেশগড়ায় মনযোগী হন এই বিজয়ী সেনা, যোগ দেন রাজনীতিতে৷ ১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন অনিল৷ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি সুযোগসুবিধাও পাচ্ছেন তিনি৷ অনিল মনে করেন, ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মৃত্যুর পর স্বাধীনতা বিরোধীরাই দেশের নেতৃত্বে চলে গিয়েছিল৷
অনিল অবশ্য স্বীকার করেন, বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে৷ শিক্ষা, চিকিৎসা খাতেও উন্নতি চোখে পড়ার মত৷
স্বপ্নের সেনার বাংলা
অনিল চান, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, স্বাধীনতার চেতনায় দেশগড়ায় মনযোগ দিতে পারে৷ অন্তত মৃত্যুর আগে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা দেখে যেতে চান অনিল৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক