1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কি জেব্রা শূন্য হয়ে যাবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এপর্যন্ত ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে৷ মৃত্যুর কারণ এখনো স্পষ্ট না হলেও আরো জেব্রা অসুস্থ হয়ে পড়ছে৷ তাই সাফারি পার্ক জেব্রা শূন্য হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/46N55
ফাইল ছবিছবি: bdnews24

প্রাথমিকভাবে খাবার হিসেবে জেব্রাকে দেয়া ভুট্টা ও ভুট্টা গাছ থেকে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন এই ঘটনায় গঠিত পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কমিটির সদস্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি ভিাগের অধ্যাপক আবু হাদি নূর আলম খান৷ তবে প্রকৃত কারণ জানতে আরো তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি৷ তার কথা,বেঁচে থাকা জেব্রাগুলোও আশঙ্কায় আছে৷

গত কয়েকদিনে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর পর আরো দুইটি জেব্রা অসুস্থ বলে খবর পাওয়া গেছে৷ সাফারি পার্কে মোট জেব্রা আছে ৩১টি৷ আরো জেব্রা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার কারণে প্রশ্ন উঠেছে সাফারি পার্ক জেব্রা শূন্য হয়ে যাবে কী না৷ এদিকে এই সময়ে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে৷ যা আগে গোপন করা হয়েছিল৷ একাধিক সূত্র দাবি করেছে আগে আরো বাঘের মৃত্যু হয়েছে এবং তা গোপন করা হয়েছে৷

জেব্রার মৃত্যু নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলেও সাফারি পার্কের প্রকল্প কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান এরই মধ্যে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন৷ তিনি জানান, ‘‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি৷ এর বেশি কিছু বলতে পারব না৷’’ তার কাছে সাফারি পার্কে প্রাণীর খাদ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলেও তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি৷ সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান ও ভেটেরেনারি চিকিৎসক ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷ প্রকল্প পরিচালক জাহিদুর রহমানকেও সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে৷

যে ভুট্টা গাছ ও ভুট্টা খাওয়ানো হচ্ছিল তাতে নাইট্রেট পয়জনিং পেয়েছি: অধ্যাপক আবু হাদি নূর আলম

জানা গেছে প্রকল্প পরিচালক যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তাতে জেব্রার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ইনফ্লুয়েঞ্জার কথা বলা হয়েছ৷ আর বাঘের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অ্যানথ্রাক্স-এর কথা বলা হয়েছে৷

জাতীয় তদন্ত কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু হাদি নূর আলম বলেন, ‘‘জেব্রার মৃত্যুর পিছনে একাধিক কারণ আছে বলে মনে করি আমরা৷ প্যাথলজিক্যাল টেস্টে তা চিহ্নিত হয়েছে৷ এছাড়া দুইটি রোগকেও আমরা সন্দেহ করছি৷ তবে সেই রোগ নির্নয়ের ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই৷ আফ্রিকায় আছে৷ তবে কিছু রি-এজেন্ট আনা হলে এখানেও আমরা তা টেস্ট করতে পারব৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা কয়েক ধরনের বিষক্রিয়ার উপস্থিতি পেয়েছি৷ জেব্রাগুলোকে যে ভুট্টা গাছ ও ভুট্টা খাওয়ানো হচ্ছিল তাতে আমরা নাইট্রেট পয়জনিং পেয়েছি৷ কিছু হেভি মেটাল পয়জনিং ও কিছু জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছি৷’’

এরইমধ্যে ওই ভুট্টা গাছ ও ভুট্টা খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ যারা সরবরাহ করতো তাদের কাছ থেকেও আর নেয়া হচ্ছে না৷ তিনি জানান, ‘‘বেঁচে থাকা জেব্রাগুলোও ওই ভুট্টা গাছ খেয়েছে৷ ফলে তাদের শরীরেও বিষক্রিয়ার আশঙ্কা আছে৷ আমরা তাই ওই জ্রেবাগুলোকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি এবং তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে৷’’ তার কথা যেসব প্রাণী ওই ভুট্টা গাছ খায়নি তাদের মধ্যে পয়জনিং-এর আশঙ্কা নাই৷

সাফারি পার্কে কথা বলে জানা গেছে এই ভুট্টা গাছ সরবরাহ করত মানিকগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠান৷ এই ভুট্টা গাছ জেব্রা ছাড়াও জিরাফ, বানর, হাতি, গয়ালসহ আরো কিছু প্রাণীকে খাবার হিসেবে দেয়া হত৷ তাদের এখন দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ওইসব প্রাণীকেও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে৷

অধ্যাপক আবু হাদি নূর আলম জানান, তারা তদন্তে দেখতে পেয়েছেন ভুট্টাসহ আরো ঘাস জাতীয় যে সব খাবার সাফারি পার্কে প্রাণীদের খাওয়ার জন্য সরবরাহ করা হয় তা কোনো দিক থেকেই পরীক্ষা করা হয় না৷ সেগুলো এখন পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়েছে৷ অন্যান্য খাবারও পরীক্ষা করা হচ্ছে এই ঘটনার পর থেকে৷

চিড়িয়াখানায় যেসব প্রাণীর মৃত্যু হয় প্রতিটিরই তদন্ত করতে হয়: ডা. দেবাশীষ রায়

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. দেবাশীষ রায় জানান, সাফারি পার্কটি তাদের অধীনে নয়, বন বিভাগের অধীনে একারণে তারা এতদিন জেব্রার মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করেননি৷ কিন্তু মঙ্গলবার তাদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে৷ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ বুধবার থেকে তারা তদন্ত শুরু করবেন৷
তিনি জানান, ‘‘অতীতেও আমরা এই ধরনের প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করেছি৷ চিড়িয়াখানায় যেসব প্রাণীর মৃত্যু হয় প্রতিটি ঘটনারই তদন্ত করতে হয়৷’’

জাতীয় তদন্ত কমিটির আরেকজন সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘‘আমরা মৃত জেব্রাগুলোর শরীরের বিভিন্ন অংশ দেশের মধ্যেই একাধিক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্নয়ের চেষ্টা করছি৷ জেব্রাগুলোকে দেয়া সব ধরনেরই খাবারও পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ একই সাথে সাফারি পার্কে প্রাণীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, অসুস্থ প্রাণীদের কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা সবই দেখা হচ্ছে৷ তদন্ত শেষ হওয়ার আগে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না৷’’

সাফারি পার্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে প্রত্যাহার হওয়া ভেটেরেনারি চিকিৎসক ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলায় আমাদের নিষেধাজ্ঞা আছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য