1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বই কিনলে উপহার, লটারির হাতছানি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কলকাতা বইমেলায় বই কিনলে পুরস্কারের হাতছানি! প্রকাশনা সংস্থা লেডিজ পার্স দিচ্ছে বই কিনলে৷ মেলার পরিচালক ‘পাবলিশার্স গিল্ড’ আয়োজন করেছে লটারির৷

https://p.dw.com/p/3XM0w
Indien Buchmesse in Kalkutta
ছবি: DW/S. Payel

৪৪তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা চলছে হইহই করে৷ উদ্যোক্তাদের দাবি অনুযায়ী, এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা৷ অসংখ্য বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের স্টলের সঙ্গে রয়েছে লিটল ম্যগাজিনের পসরা৷ হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন মেলায় আসছে৷ তবে, ভিড় মূলত মুষ্টিমেয় নামজাদা প্রকাশকের স্টলে৷ অপেক্ষাকৃত ছোট প্রকাশকদের স্টলে ভিড় কম৷

মেলার মাঠে একটি প্রকাশনা সংস্থা বই বিক্রির জন্য উপহারের বিজ্ঞাপন দিয়েছে৷ নির্দিষ্ট অঙ্কের বই কিনলে বিনামূল্যে মিলছে লেডিজ পার্স, ল্যাপটপ ব্যাগ ও ব্যাকপ্যাক৷ এই বিজ্ঞাপন একটি সঙ্কটকে সামনে এনেছে৷ প্রশ্ন উঠেছে, বই পড়ার অভ্যেস কি এতটাই কমে গেছে যে বিক্রির জন্য উপহারের প্রলোভন দিতে হচ্ছে? অভ্যেস কমছে বলে মানতে রাজি নন এই সময়ের বিশিষ্ট সাহিত্যিক অমর মিত্র৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ যদি বই না পড়ে তাহলে এত কিনবে কেন? শুধু ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য মানুষ বই কেনে না৷ আমার অনেক লেখা পড়েই পাঠক মতামত দেন৷ ফেসবুকেও অনেক মন্তব্য পাই৷ না পড়লে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়৷ আর বই কিনলে উপহার দেওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা৷ যে বই চলে না, তা বিক্রি করার জন্য প্রকাশকরা উপহার দিয়ে থাকতে পারে৷’’

বই কিনলে উপহার দেওয়া ব্যতিক্রমী ঘটনা: অমর মিত্র

বইয়ের সাম্রাজ্যে মূলত থাবা বসিয়েছে টেলিভিশনের বিনোদন৷ এর উপর চ্যালেঞ্জ বাড়িয়েছে মোবাইল৷ তবে এর মধ্যেও একটা ইতিবাচক দিক দেখছেন আনন্দ পুরস্কারজয়ী সাহিত্যিক নলিনী বেরা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "অনেক কালজয়ী সাহিত্যের ওপর নির্ভর করে টিভি ধারাবাহিক তৈরি হচ্ছে৷ ধারাবাহিক দেখে মানুষ সেই বইটা পড়তে আগ্রহী হচ্ছে৷ যেমন ধরুন, প্রফুল্ল রায়ের কেয়া পাতার নৌকো৷ তাই মাঝখানে বই বিক্রিতে যে ভাটা এসেছিল, এখন সেটা কিছুটা কমেছে৷ আমার যে বই পুরস্কার পেয়েছে, সেটা ভাল বিক্রি হচ্ছে৷ লোকে যদি বই না পড়ে, তাহলে কিনবে কেন?”   

যদিও বই বিক্রির সঙ্গে পাঠের সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন না বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ বই কেনা হচ্ছে কালচারাল ট্যাগ হিসেবে৷ বাঙালি নিজেদের সংস্কৃতিমনস্ক বলে মনে করে, তাই বই কেনে৷ তাও সেটা থ্রিলার বা কমিক জাতীয় বই৷ ভাবনা চিন্তার খোরাক আছে, এমন বই নয়৷’’ এই প্রসঙ্গে তিনি টেনে আনেন সাম্প্রতিককালের জনপ্রিয় ইংরেজি সাহিত্যের প্রসঙ্গ৷ চেতন ভগত, অর্জুন পান্ডে প্রমুখ লেখকদের সম্পর্কে তাঁর মত, ‘‘এর কোনোটাই ধ্রুপদী নয়৷ একটা ট্রেন যাত্রায় পড়তে ভাল লাগে, এর বেশি কিছু নয়৷ এই লেখা কলজয়ী হতে পারে না৷’’

অধিকাংশ বই কেনা হচ্ছে কালচারাল ট্যাগ হিসেবে: সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

গত বছরের কলকাতা বইমেলায় ২৪ লাখ মানুষ এসেছিল৷ ২২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে৷ এই হিসেবে গড়ে মাথাপিছু একশো টাকার কম বই বিক্রি হয়েছে৷ বাণিজ্যের হিসেবে এই সংখ্যা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়৷ কলকাতার সর্বাধিক বিক্রিত সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক, সাহিত্যিক জয়ন্ত দে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভাবের ঘরে চুরি করে লাভ নেই৷ বই পড়ার অভ্যেস কমেছে৷ মানুষ এখন মোবাইল, কিন্ডল-এ বই পড়ে নিচ্ছে৷ তবে সাহিত্যচর্চা ও লেখালেখির ঝোঁক বাড়ছে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে৷ অনেক ব্লগের লেখা এবার বই হিসেবে বেরিয়েছে৷’’    উপহারের বিজ্ঞাপন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি প্রকাশনা সংস্থা দেজ পাবলিশিং-এর কর্ণধার শুভঙ্কর(অপু)দে৷ তাঁর মতে, ‘‘এটা একেবারেই সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা সংস্থার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷’’

Indien Buchmesse in Kalkutta
ছবি: DW/S. Payel

বইমেলার আয়োজক ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’ প্রতিদিন লটারির আয়োজন করেছে৷ এক হাজার টাকার বই কেনার রসিদ দিলেই এই লটারিতে অংশ নেওয়া যাবে৷ ২০ জন বিজয়ীর জন্য রয়েছে ২৫ হাজার টাকা মূল্যের বইকেনার ভাউচার৷ এ নিয়ে সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘উপহার, লটারিতে প্রমাণ হচ্ছে আমাদের তৃতীয় বিশেব সাক্ষরতার হার বাড়েনি৷ বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে আমরা ব্যর্থ৷’’