1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
সমাজফ্রান্স

ফেলনা কাপড় দিয়ে হালফ্যাশনের পোশাক

২৭ অক্টোবর ২০২২

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে হালফ্যাশনের সম্পর্ক থাকতে পারে কি? ফ্রান্সের এক ডিজাইনার ফেলে দেওয়া পোশাক দিয়ে উচ্চ মানের পোশাক তৈরি করে আন্তর্জাতিক আঙিনায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন৷

https://p.dw.com/p/4IlLf
Fashion Gesichtsmaske Marine Serre
ছবি: Getty Images/AFP/F. Guillot

ফ্রান্সের ডিজাইনার -এর নতুন সৃষ্টি একই সঙ্গে চটকদার ও ট্রেন্ডি৷ তবে ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে যে ব্যবহার করা তোয়ালে ও পুরানো রেশমের স্কার্ফ দিয়ে সেগুলি তৈরি করা হয়েছে৷

প্যারিসে মারিন স্যার-এর গুদামে অনেক পুরানো জামাকাপড় সরবরাহ করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সত্যি আর একটি স্কার্ট তৈরি করতে চাই না৷ আমাদের কত জামাকাপড় আছে! প্রথম বার এখানকার প্রায় একশ গুণ বড়ো একটি গুদামে গিয়ে আমার কান্না পেয়ে গিয়েছিল৷ কারণ আমরাই তো এই শিল্পের অংশ৷ আগামী দশ বছরে আমরা পরবর্তী ধাপের কাপড় সৃষ্টি করবো৷ তখন আমার মনে হলো, আজকের ডিজাইনারদের কাঁধে গোটা বিশ্বের দায়িত্ব রয়েছে৷''

প্যারিসের উত্তরে কোম্পানির সদর দফতরে সপ্তাহে দুই বার পুরানো কাপড় বোঝাই ট্রাক আসে৷ প্রত্যেকটি কাপড় পরীক্ষা করে রং অনুযায়ী আলাদা করে কাচা হয়৷ তারপর ডিজাইনার সেগুলি কাজে লাগানোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করেন৷ নিজের কর্মপদ্ধতি বর্ণনা করে মারিন স্যার বলেন, ‘‘আমার টিম পুরানো কাপড় ঘেঁটে কিছু উপাদান বেছে আমার কাছে আনে, যা দিয়ে আমি পোশাক তৈরি করি৷ ডিজাইন করার সময়েও সেই উপাদান সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধাবোধের চেষ্টা থাকে৷ যত কম সম্ভব কেটে এবং যত কম সম্ভব রদবদল করে পোশাক তৈরি হয়৷ সেই উপাদান সত্যি আকারের সঙ্গে মানানসই, পোশাকের ঢলের সঙ্গেও দিব্যি খাপ খেয়ে যায়৷''

কাপড় কখনো ফেলনা নয়

তাঁর ব্যবহৃত বেল্টগুলি দিয়ে প্রায় ‘ওৎ কুতুয়র' মানের একটি পোশাক তৈরি হয়েছে৷ রেশমের স্কার্ফও সেই জাদু সৃষ্টি করেছে৷ সেই সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে মারিন স্যার বলেন, ‘‘সেই ড্রেসে পাঁচটি সিল্ক স্কার্ফ রয়েছে৷ পাড়গুলির জন্য অনেক কাপড় লাগে৷ এখানে একটা দিতে হবে৷ দেখতেই পাচ্ছেন এই সিল্ক স্কার্ফটি অন্যটির মতো নয়৷ ফলে প্রত্যেকটি পোশাকই অনন্য হবে৷ আরও একবার কিনলে তাতে ভিন্ন স্কার্ফ থাকবে৷''

একটি কোটের ক্ষেত্রেও বোঝার উপায় নেই, যে সেটির উপাদান আসলে একটা ব্যবহৃত তোয়ালে৷

তার সব কালেকশনেই একটি বিষয় চোখে পড়ে৷ মারিন স্যার প্রায়ই রিসাইকেল করা পোশাকের উপর অর্ধচন্দ্রের আকৃতির ছোট এক ছাপ রাখেন, যা অনেকটা তাঁর লোগোর মতো৷

মার্কিন গায়িকা বিয়ন্সে, টেলিভিশন তারকা কাইলি জেনার বা ব্রিটিশ গায়িকা অ্যাডেল তাঁর তৈরি পোশাক পরার ফলে মারিনের খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়েছে৷ তারকা গায়ক ম্যাডোনার মেয়ে লুর্দ ব়্যাম্পের উপর মারিনের তৈরি পোশাক পরেছেন৷ মারিন মনে করেন, ‘‘সেলিব্রিটি তারকারা আমার তৈরি পোশাক পরলে অবশ্যই সুবিধা হয়৷ আমার মতে, চাঁদের প্যাটার্নসহ ড্রেস মানুষের কাছে অর্থবহ মনে হয়৷ সেটা অনেকটা দ্বিতীয় ত্বকের মতো৷ মানুষ হয়তো সংগ্রামের গন্ধ পায়৷ তবে ‘মিলিট্যান্ট' হলেও সেগুলি মোটেই আগ্রাসী নয়৷ সেইসঙ্গে সত্যি মেয়েলি একটা ব্যাপারও রয়েছে৷ ফলে অনেক শক্তিশালী নারী এই বিন্যাসের পোশাক পরছেন৷''

ফ্যাশন শোয়ের দর্শকরাও এই ডিজাইনারের সর্বশেষ সৃষ্টি গায়ে চাপিয়েছেন৷ পুরানো কাপড় দিয়ে তৈরি হওয়ায় অনেকের কাছে সেগুলির বিশেষ মূল্য রয়েছে৷ ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে ইসাবেল শাপু মনে করেন, ‘‘মারিন সমাজের পরিত্যক্ত এই সব বর্জ্য নিয়ে নতুন পোশাকে রূপান্তরিত করেন৷ সেগুলি অসাধারণ এবং একেবারে আধুনিক৷''

টেকসই পণ্যের এমন ব়্যাডিকাল কনসেপ্টের কারণে ৩০ বছর বয়সি মারিন স্যার আজ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন আঙনায় অন্যতম জনপ্রিয় ডিজাইনার হয়ে উঠেছেন৷ পুরানো পোশাক নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রেন্ট সেটার হয়ে ওঠার এই দৃষ্টান্ত সত্যি অনুকরণের যোগ্য৷

কাটিয়া লিয়ার্শ/এসবি