ফেলনা কাপড় দিয়ে দামি ফ্যাশন

প্রতি বছর গোটা বিশ্বে দশ হাজার কোটি পোশাক তৈরি করা হয়৷ তার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ২০ লাখ টন আবর্জনার স্তূপে জমা হয়৷ অর্থাৎ কার্যত প্রতি সেকেন্ডে কাপড় বোঝাই একটি ট্রাক সেখানে খালি করা হয়৷ মাত্র এক শতাংশ জামাকাপড় পুনর্ব্যবহার করা হয়৷

মিউনিখ শহরের কাছে ছোট একটি স্টুডিওতে টেক্সটাইল শিল্পের বাতিল করা কাপড় নতুন করে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এমনকি বাণিজ্য মেলায় ক্যাটালগের নমুনা হিসেবে যে কাপড় ব্যবহার করা হয়, সেগুলি থেকেও বালিশ বা কম্বল তৈরি করা হচ্ছে৷ এলপিজে স্টুডিওর হেডভিশ বুলে বলেন, ‘‘ফ্যাশন শিল্পজগতের কাছ থেকে আমরা কাপড় পাই৷ অনেক কোম্পানি ফোন করে জানতে চায়, আমরা সেই কাপড় তুলে নিতে পারি কিনা৷ কোম্পানিগুলির জন্যও সেটা ভালো, কারণ তখন তাদের কিছুই ফেলে দিতে হয় না৷ তাদের অর্ডার দেওয়া কাপড় আবার ব্যবহার করা হয়৷''

তবে এভাবে উপকরণ সংগ্রহ করা বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ৷ কারণ সব কিছু রিসাইকেল করা সম্ভব হয় না৷ কিছু কাপড় নিয়ম মেনে ফেলে দিতে হয়৷

আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, সব কাপড় পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব নয়৷ অথবা আর্থিক মানদণ্ডে সেই কাজের কোনো অর্থ হয় না৷ হেডভিশ বুলে এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘একদিকে প্রক্রিয়াকরণ, অন্যদিকে কাপড়ের আয়ু, সেই কাপড় কতটা মজবুত, এমন কারিগরি বিষয় যাচাই করা জরুরি৷ মান যত বেশি হবে, সেলাই যত ভালো হবে, যত ঘনভাবে বোনা হবে, যত সূক্ষ্ম হবে, দাম ও কদরও তত বেড়ে যাবে৷ নিম্ন মানের পণ্য আপসাইক্লিং করার কোনো অর্থ আমার কাছে নেই৷ আমি সেটা করি না৷''

মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সেই সব বিষয় বিবেচনা করা হয়৷ বালিশের দাম ৩৫০ ইউরো অথবা কম্বল ও হাতে বোনা কার্পেটের দাম হাজার ইউরোরও বেশি হতে পারে৷ বিলাসবহুল এমন পণ্যের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়৷ কিছু দোকানে সরাসরি অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্যগুলি বিক্রি হয়৷ যেমন মিউনিখের উপকণ্ঠে এই দোকানের ক্রেতারা দামের তোয়াক্কা না করে ডিজাইন, টেকসই প্রক্রিয়ার মতো বিষয়কে বাড়তি গুরুত্ব দেন৷

পুরানো থেকে নতুন কিছু তৈরি করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে৷ টালমায়ার কোম্পানির ক্রিস্টফ মিটারমায়ার বলেন, ‘‘বর্তমানে সত্যি অনেকে উৎপাদনের জায়গা, কাজের পরিবেশের মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইছেন৷ ভেবেচিন্তে একবার কিছু কিনলে অনেক কাল সেটার আনন্দ উপভোগ করা যায়৷''

হেডভিশ বুলাই ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জার্মানির একাধিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের হয়ে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন৷ তিনি এই শিল্পশাখা খুব ভালোই চেনেন, গাফিলতি সম্পর্কেও জানেন৷ তিনিও পরিবর্তন দেখতে চান৷ হেডভিশ বুলাই বলেন, ‘‘অবশ্যই আমার নিজেরও অপরাধ বোধ রয়েছে৷ কিছু পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার দুটি বিকল্প ছিল৷ আমরা কি ২০ সেন্ট বেশি মূল্যের টেকসই ও অরগ্যানিক সুতি ব্যবহার করবো? নাকি এতকাল যেমন চলে এসেছে, তেমনটাই রেখে দেবো? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবর্তনের বিরুদ্ধেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷''

আপসাইক্লিং এখনো ছোট আকারেই সম্ভব হচ্ছে৷ কিন্তু টেকসই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বেড়ে চলা সচেতনতার প্রেক্ষাপটে ছোট কোম্পানিগুলির জন্য এ ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷

২০১৯ সালের ছবিঘর

মার্তা গ্রুদজিনস্কা/এসবি