ফুলের পরাগ, নাকি ‘হে ফিভার’?
বসন্ত থেকে শুরু করে গ্রীষ্মের সূচনা অবধি জার্মানির ১৫ শতাংশ মানুষ ‘হে ফিভার’ বা পরাগ অ্যালার্জিতে ভোগেন৷ নাক সুড় সুড়, গলা খুস খুস, চোখ ছলছল, এই সব হল হে ফিভারের লক্ষণ৷
টার্মিনেটর নয়, পলিনেটর
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরের অদূরে কোনো একটি ক্ষেতে এক মৌমাছি গায়ে-মাথায় ফুলের পরাগ মেখে আরেকটি সূর্যমুখী ফুলে বসতে যাচ্ছে৷ এক ফুলের পুরুষ ‘অ্যান্থার’ বা পরাগধানী থেকে আরেকটি ফুলের স্ত্রীজাতীয় ‘স্টিগমা’ বা গর্ভমুণ্ডে পরাগ পৌঁছে দেওয়াই হলো তার কাজ৷ বলতে কি, পরাগযোগের কাজে মৌমাছিরাই স্পেশালিস্ট – যদিও অন্যান্য নানা ধরণের পাখি কিংবা বাদুড় বা কীটপতঙ্গেরাও এ কাজ করে থাকে৷
গাড়ির ওপর ধুলো নয়, পরাগ
স্টুটগার্টে একটি গাড়ি হলদে পরাগে ঢেকে আছে, বৃষ্টি পড়ার পর তা আরো অদ্ভুত দেখাচ্ছে৷ এ বছর নাকি বিশেষ করে স্প্রুস নামের দেবদারুজাতীয় গাছটি থেকে বিপুল পরিমাণ পরাগ ছড়িয়েছে৷ খাসা রোদ্দুর আর মোলায়েম বাতাসে তা বহুদূর অবধি ভেসে গেছে৷
আখরোট কারো ধার ধারে না
কেননা প্রতিটি আখরোট গাছের স্ত্রী এবং পুরুষ, দু’টি অঙ্গই আছে৷ বাতাসেই আখরোটের পরাগ ভেসে তার পুরুষ অঙ্গ থেকে স্ত্রী অঙ্গে গিয়ে পড়ে – এমনকি হয়তো একই গাছের! একে আমরা বলব স্বনির্ভর – বিজ্ঞানীরা বলেন ‘স্ব-উর্বর’৷ তবে ফুল ফোটানোর জন্য নাকি পরনির্ভর হওয়াটাই ভালো৷
হলুদ কুয়াশা...
দক্ষিণ জার্মানির বাভেরিয়া প্রদেশে পাইন, ফার ইত্যাদি গাছের বনে যে বসন্ত এসেছে, তা তাদের রেণু ওড়া থেকেই বোঝা যায়৷ হে ফিভারের ভুক্তভোগীরা দুঃস্বপ্নে এ ধরণের পরাগ ওড়া দেখেন৷ আবহাওয়া বিশারদরা বলেন, শীত যত কম পড়বে, তত তাড়াতাড়ি পরাগের মরসুম শুরু হবে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নাকি ২০৪০ সালের মধ্যে বাতাসে পরাগের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হবে৷
সবার প্রিয় চেস্টনাট
জার্মানির এই সুপরিচিত বাদাম গাছটির দু’টি সংস্করণ আছে, একটি সাদা, একটি লাল৷ গরমের সূচনায় যখন চেস্টনাট গাছগুলি ফুলে ভরে যায়, তখন যেমন সুন্দর দেখায়, পরে চেস্টনাট রোস্ট করে খেতেও তেমনি মজা – যদিও সেটা শীতে৷ ওদিকে চেস্টনাটের কিন্তু পরাগযোগের জন্য বাতাস আর পোকামাকড়দের সাহায্য লাগে৷
আজি বসন্ত জাগ্রত...
জার্মানিতে জঙ্গল বলতে প্রধানত স্প্রুস, ফার ও পাইন গাছের বনকেই বোঝায়৷ বসন্তের সূচনায় বনজঙ্গল পরাগে পরাগে আবছা হয়ে যায় – সে এক অপূর্ব দৃশ্য৷ বাতাস যত গরম হয়, তত বেশি পরাগ ওড়ে৷
মৌ বনে আজ
মৌমাছিদের তো আর হেমন্ত মুখার্জির গান শোনার অবসর নেই, কারণ দিনে তাদের হাজার পাঁচেক ফুলের মধু সংগ্রহ করতে হয়৷ এ কাজ করতে গিয়ে যদি তারা পরাগের ডাকহরকরার কাজটাও করে দেয়, তবে সেটা স্বেচ্ছায় নয়, অজান্তে৷ বলা যাক, প্রকৃতিতে তো আর বেগার খাটনি নেই: ফেলো কড়ি, মাখো তেল৷ আনো পরাগ, লে যাও মধু৷
হে ফিভার
অসুখটির পোশাকি নাম হল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস৷ হে ফিভার না বলে একে মে ফিভার, অর্থাৎ মে মাসের অসুখ বললেও কোনো অসুবিধে ছিল না – অন্তত জার্মানিতে নয়৷ অসুখটিতে রোগীর রোগ প্রতিরোধ প্রণালী তার নাকে-চোখে পরাগ ঢুকলে মনে করে, নিশ্চয় কোনো শত্রু এসেছে – তাই হেঁচে-কেশে তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করে৷
পরাগের আস্তরণ
ছবিটা নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের৷ এপ্রিল মাসটা বেশ শুকনো, খটখটে আর সেই পরিমাণে গরম থাকার ফলে এবার পাইন আর স্প্রুস গাছগুলো যথেচ্ছ পরাগ বিতরণ করেছে৷ তার ফল: রাস্তাঘাটের সর্বত্র পরাগের প্রলেপ৷
ভু্ট্টাক্ষেতে
শান্ত, সুন্দর, সবুজ দৃশ্যটি দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, যেখানে ২০০০ সালে জার্মানিতে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৮,৮৫৫টি রেণু ছিল, ২০৪০ সালে তা ২১,৭৩৫-এ দাঁড়াবে, বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ হে ফিভারের রোগীরা যে তখন কী করবেন, সেটা তারাই জানেন৷