ফুটবল দ্বৈরথ জার্মানি-ইংল্যান্ডের যত গল্প
জার্মানি আর ইংল্যান্ডের ফুটবল ম্যাচ মানেই নতুন গাঁথা, নতুন কোনো গল্প৷ ছবিঘরে দেখুন এ দুই দলের ফুটবল ম্যাচ ঘিরে ইতিহাস৷
১৯০৯: লিখা নেই ইংল্যান্ডের যে ইতিহাস
একশ বছরেরও বেশি সময় আগে ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড সিটি গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিকে জার্মানির বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জয় বলে থাকেন অনেকে৷ বলবেনই বা না কেন? এই ম্যাচে জার্মানিকে ৯-০ গোলে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড৷ কিন্তু দুঃখজনক হলো, এটি ছিল অপেশাদারদের অংশগ্রহণে একটি ম্যাচ৷ আর তাই রেকর্ডবুকে স্থান পায়নি ওই ইতিহাস৷
১৯৬৬ বিশ্বকাপের গোল বিতর্ক
সেবছরের বিশ্বপকাপে দু’দল মুখোমুখি হলে ইংল্যান্ডের কাছে ৪-২ গোলের ব্যবধানে হেরে যায় জার্মানি৷ এরপর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছর৷ জার্মানিও এ সময়ে বেশ কয়েকবার ঘরে তুলেছে বিশ্বকাপ৷ কিন্তু ৫০ বছর আগের ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডের একটি গোল নিয়ে রয়ে গেছে বিতর্ক৷ অনেকেই বলে থাকেন, ইংল্যান্ডের তৃতীয় গোলটি নাকি গোল লাইন অতিক্রম করেনি৷
১৯৬৮ সালে পশ্চিম জার্মানির প্রতিশোধ
৬৬’র বিশ্বকাপে হারার পর যেন প্রতিশোধ নিতে উন্মুখ হয়েছিল পশ্চিম জার্মনি৷ নিজ দেশে অনুষ্ঠিত ম্যাচে সেই সুযোগও পেয়ে যায় দলটি৷ ১-০ গোলের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কিছুটা হলেও তৃপ্তি মেটায় পশ্চিম জার্মানি৷
১৯৭০ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানির প্রত্যাবর্তন
মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপটি ছিল জার্মানির জন্য বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার সুযোগ৷ শুরুতে ২ গোলে পিছিয়ে পড়লেও দ্রুতই সমতা ফেরান পশ্চিম জার্মানির সেরা তারকা ফ্রানজ বেকেনবাউয়ার এবং উভে সিলার৷ অতিরিক্ত সময়ে গের্ড ম্যুলারের গোলে জয় পায় জার্মানেরা৷ বিশ্বকাপের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হারার কারণ হিসেবে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী হ্যারোল্ড উইলসন জার্মানির কাছে পরাজয়কেই নাকি দায়ী করেছিলেন৷
১৯৭২: ঘরে ড্র, বাইরে জয় জার্মানির
৭০-এর বিশ্বকাপের পর ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে আবারো মুখোমুখি৷ সেই টুর্নামেন্টে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দল হোম ও অ্যাওয়ে গ্রাউন্ডে পরস্পরের মুখোমুখি হতো৷ ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে, যেটি ছিল জার্মানির অ্যাওয়ে ম্যাচ, ৩-১ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নেয় জার্মানি৷ আর বার্লিনে অনুষ্ঠিত ম্যাচে অর্থাৎ হোম গ্রাউন্ডের ম্যাচটি ড্র হয়৷
১৯৯০: উত্তেজনা, পেনাল্টি আর কান্না
১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৯০ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে ইংলিশরা৷ আর মুখোমুখি হয় জার্মানির৷ শিরোপার জন্য প্রতিমুহূর্তে নিজেদের সেরাটি দিয়েই লড়তে থাকে দুই দল৷ শেষ পর্যন্ত খেলা টাই-ব্রেকারে গড়ালে দু্-দুবার বল জালে পাঠাতে ব্যর্থ হয় ইংল্যান্ড৷
২০০০: জয়ের আশা, কোচের পদত্যাগ
২০০০ সালে নিজ দেশে আবার জার্মানির মুখোমুখি ইংল্যান্ড৷ ২০০২ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে এ ম্যাচটি ইংল্যান্ডের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আর দেশটির বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের জন্য এটি ছিল শেষ ফুটবল ম্যাচ৷ কিন্তু ইংলিশ টিমের দুর্ভাগ্য, তারা ১-০ গোলে হেরে যায় ম্যাচটি৷ ফল- ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেন কোচ কেভিন কিগান৷
২০০১: মিউনিখের মিরাকল
প্রায় কয়েক দশক ধরে বড় আসরে বার বার জার্মানির কাছে ধরাশায়ী হতে থাকা ইংলিশ টিম মনে হয়ত পণ করেছিল- আর নয়৷ মাঠের লড়াইয়েও তাই দেখা গেল৷ এক কিংবা দুই গোলের জয় নয়, এবার স্বাগতিকদের ৫-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে মাঠ ছাড়েন ব্রিটিশরা৷
২০১০: আবারো বিতর্ক
ফুটবলে মুখোমুখি হলে বিতর্ক জন্ম নেবে না তা কি হয়? ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও তাই হলো৷ সেবছর ইংল্যান্ডকে ৪-১ গোলে হারায় জার্মানি৷ প্রথমার্ধের শেষ সময়ে জার্মানির ফ্রাংক লামপার্ডের দূর থেকে নেওয়া একটি কিক গোলবারে লেগে গোললাইনের অনেকটা ভেতরে পড়ে আবার বেরিয়ে আসে৷ কিন্তু উরুগুয়ের রেফারি ব্যাপরটি বুঝতে পারেননি৷
২০১৬ সালে দারুণ প্রত্যাবর্তন
এবার জার্মানির রজধানী বার্লিনে মুখোমুখি দু’দুল৷ জার্মানিকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারায় ইংল্যান্ড৷ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ানশিপের আগে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচটি প্রীতিম্যাচ হলে কী হবে, এই দু’দলের দেখা হওয়া মানেই যে অস্তিত্বের লড়াই৷ আর তাই এ ম্যাচের ফলাফলকে আলাদা করেই মনে রাখবে ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা৷
২০২২ নেশনস লিগের ম্যাচের বিতর্ক
সোমবার রাতে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি ঘিরে ছিল বাড়তি উত্তেজনা৷ গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে হাজার হাজার ব্রিটিশ ফুটবলপ্রেমী জড়ো হয়েছেন মিউনিখে৷ ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচটিতে ইংল্যান্ড গোল পায় পেনাল্টি থেকে৷ জার্মান কোচ হ্যান্সি ফ্লিকের দাবি, রেফারি ভালোমতো না দেখেই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিয়েছেন৷ যদিও রেফারির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে বলেই মত তার৷