1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফরাসি-জার্মান চুক্তি

১৫ জুলাই ২০১২

১৯৬৩ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গোল এবং জার্মান চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার এলিসে চুক্তি স্বাক্ষর করেন, ইতিহাসের দুই চরম বৈরী থেকে দুই পরম মিত্র সৃষ্টি হয়৷ এ চুক্তি বিশ্বের অন্যান্য সংঘাতের ক্ষেত্রেও এক দৃষ্টান্ত৷

https://p.dw.com/p/15XyH
ছবি: picture-alliance/dpa

এলিসে চুক্তির আগের ৫০ বছরে ফ্রান্স এবং জার্মানি দু'টি বিশ্বযুদ্ধে শত্রু হিসেবে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে৷ অথচ আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের আঙ্গিকে এই দু'টি দেশের সম্পর্ক, বিভিন্ন প্রসঙ্গে তাদের যৌথ অভিমত অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ সংঘাত থেকে সম্প্রীতির এ'রকম উদাহরণ ইতিহাস খুঁজলে খুব কমই পাওয়া যাবে৷

২২শে জানুয়ারি, ১৯৬৩৷ গভীর শীতের দিন, শীঘ্রই অন্ধকার নামে৷ সন্ধ্যায় ফরাসি প্রেসিডেন্টের এলিসে প্রাসাদের একটি আলোকোজ্জ্বল কক্ষে দ্য গোল এবং আডেনাউয়ার মৈত্রী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন৷ মুহূর্তটি ছিল আবেগপূর্ণ৷ উভয় রাজনীতিক পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন৷ দ্য গোল ফরাসি প্রথায় আডেনাউয়ার'এর কপোল চুম্বন করেন৷ দূরদর্শী দুই রাজনীতিকই জানতেন যে, তাঁদের এই চুক্তি উভয় দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর হয়ে দাঁড়াবে এবং ইউরোপকে একীকৃত করতে সাহায্য করবে৷ এলিসে চুক্তির এই সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা স্মরণ করেই আডেনাউয়ার পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন - জার্মানে নয়, খোদ ফরাসি ভাষায়:

Bildergalerie zum deutsch-französischen Verhältnis
চুক্তির পর গোল আর আডেনাউয়ারছবি: picture-alliance/dpa

‘‘এই চুক্তি ছাড়া ইউরোপের একীকরণ সম্ভব নয়৷ পদ্ধতি বদলাতে পারে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, মিত্রদের আস্থা না হারানো৷''

এলিসে চুক্তির সরকারি নাম হল জার্মান-ফরাসি মৈত্রী চুক্তি৷ এই চুক্তিতে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যে আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যাতে উভয় দেশ একটি যৌথ অবস্থানে পৌঁছতে পারে৷ অপরদিকে দু'পক্ষের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত আলাপ-আলোচনারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ পররাষ্ট্রনীতি, নিরাপত্তা নীতি, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান, সর্বক্ষেত্রেই উভয় দেশ পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, মতবিনিময় করবে৷ এলিসে চুক্তির বিষয়বস্তুর চেয়ে তার এই মূলমন্ত্রই হয়ত জার্মান-ফরাসি সম্পর্কে শুধু একটি নতুন যুগ নয়, যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে৷ জার্মান-ফরাসি সংলাপ সংক্রান্ত পত্রিকা ‘‘ডকুমেন্টে''-র সম্পাদক জেরার ফুসিয়ের'এর মতে:

‘‘ষাটের দশকের গোড়াতেও অনেকে দুই চরম বৈরীর কথা বলতেন৷ এবং ইউরোপের দু'টি জনবহুল জাতির মানুষরা যে বহুদিনের শত্রুতার কথা না বলে মৈত্রী এবং সহযোগিতার কথা বলছে, এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল৷''

জার্মান-ফরাসি সম্পর্কের যুদ্ধপরবর্তী বিকাশধারাকে আদর্শ বলে মনে করা হয়৷ বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিবেশি দেশ, যাদের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনা আছে, তাদের কাছে জার্মান-ফরাসি সম্প্রীতি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ লুডভিগসবুর্গের জার্মান-ফরাসি ইনস্টিটিউটের স্টেফান জাইডেনডর্ফ'এর সম্পাদিত একটি প্রবন্ধ সংকলনের শীর্ষকই হল ‘জার্মান-ফরাসি সম্পর্ক: শান্তিস্থাপনের মডেল?' বইটিতে এলিসে চুক্তির বিভিন্ন উপাদান পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে, এর মধ্যে কোনগুলি অপরাপর সংঘাতেও ফলদায়ক হতে পারে৷ এক্ষেত্রে জাইডেনডর্ফ'এর কাছে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে জার্মান-ফরাসি মৈত্রী চুক্তির নিয়মিত পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার উপাদানটি, সব পর্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা যাতে সংশ্লিষ্ট থাকছেন৷ জাইডেনডর্ফ বলেন:

Merkel und Hollande erinnern an deutsch-französische Versöhnung
৫০ বছর পূর্তিতে বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদছবি: Reuters

‘‘দু'পক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে কারোর পক্ষেই সাক্ষাৎ থেকে দূরে থাকা সম্ভব নয়৷ সংকটের সময় এটা আজও কাজ দেয়, যখন একপক্ষের প্রতিনিধিরা পারলে অপরপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে চান না৷''

অনেক সাক্ষাতেই যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, এমন নয়৷ কিন্তু পরস্পরের বিভিন্ন অবস্থান সম্পর্কে পুনরায় সচেতন হওয়ার একটা অবকাশ পাওয়া যায়৷ সভাকক্ষ, সভাকক্ষের বাইরে মিডিয়ার প্রতিনিধিরা কোনো না কোনো বিবৃতির জন্য অপেক্ষা করছে৷ জনমানসে এই প্রত্যাশা থেকেও একটা তাগিদ এবং তাগাদা সৃষ্টি হয় বলে জাইডেনডর্ফ মনে করেন৷ জেরার ফুসিয়ের বলেন, সব সমস্যা সত্ত্বেও বন্ধুত্ব এবং মৈত্রী যে অটুট থাকছে, সেটাই তো একটা অভিজ্ঞতা:

‘‘বিশ্বের অপরাপর অঞ্চলের অপরাপর দেশ, যেমন ইসরায়েল এবং প্যালেস্টাইনও ভাবতে পারে, আমরা যদি সঠিক সংলাপে লিপ্ত হই, তবে আমরাও শান্তি প্রক্রিয়ায় প্রগতি অর্জন করতে পারি৷''

প্রতিবেদন: রাল্ফ বোজেন / এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য