প্রেসিডেন্টকে হত্যা, আরও অনিশ্চয়তায় হাইতি
হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভনেল ময়িজকে বুধবার তার বাড়িতে হত্যা করা হয়েছে৷ ফলে আগে থেকে অশান্ত থাকা ক্যারিবীয় এই দেশটির পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে৷
প্রেসিডেন্টকে হত্যা
হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভনেল ময়িজকে বুধবার তার বাড়িতে হত্যা করা হয়েছে৷ ফার্স্ট লেডিও গুরুতর আহত হয়েছেন৷ ৪৮ বছর বয়সি ব্যবসায়ী ময়িজ ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতেছিলেন৷ কিন্তু সেটা বাতিল করে আবারও তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়৷ ময়িজ সেটিও জেতেন৷ অবশেষে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি শপথ গ্রহণ করেন৷ দায়িত্ব নিয়ে ময়িজ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়েছিলেন৷
সমালোচনা
সমালোচকদের অভিযোগ দায়িত্ব নিয়ে ময়িজ একনায়কের মতো আচরণ শুরু করেন৷ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সংসদ ভেঙে দেয়ার পর থেকে তিনি ডিক্রি জারির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করে আসছিলেন৷
হত্যাচেষ্টা
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ময়িজ জানিয়েছিলেন যে, ক্ষমতা থেকে তাকে সরাতে এ পর্যন্ত সাতবার চেষ্টা করা হয়েছে৷ একই মাসে তিনি জানিয়েছিলেন, তাকে হত্যাচেষ্টার দায়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তবে একটি আপিল আদালত পরবর্তীতে ময়িজের অভিযোগ খারিজ করে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিয়েছিল৷ এদের মধ্যে একজন বিচারক ও পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন৷
হত্যার পেছনে কারা?
এখনও পরিষ্কার নয়৷ তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ক্লোদ জোসেফ বলছেন, হত্যাকারীরা উচ্চ প্রশিক্ষিত ছিলেন৷ তাদের কয়েকজন স্প্যানিশ ও কয়েকজন ইংরেজি ভাষায় কথা বলছিলেন৷ এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত হাইতির রাষ্ট্রদূত বোচিত এডমন্ড হামলাকারীদের ‘পেশাদার কমান্ডো’ ও ‘বিদেশি ভাড়াটে গুন্ডা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এজেন্টের বেশ ধরেছিল বলেও জানান তিনি৷
চার সন্দেহভাজনকে হত্যা
হাইতির প্রেসিডেন্ট ময়িজকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর কর্তৃপক্ষ জানায়, পুলিশ চার সন্দেহভাজনকে হত্যা করেছে এবং দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তবে তাদের পরিচয় বা প্রেসিডেন্টকে হত্যার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি৷
দারিদ্র্য ও অপরাধ
১৯৫৭ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ফ্রাসোয়া ডুভালিয়ে ও তার ছেলে জ্য ক্লোদ ডুভালিয়ের (ছবি) একনায়ক শাসনামল শেষ হওয়ার পর হাইতিতে মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে৷ সেই সঙ্গে আছে চরম দারিদ্র্য আর অপরাধ৷ শুধু এ বছরেই ক্রিমিনাল গ্যাংদের কারণে হাজার হাজার মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷
যেন গেরিলা যুদ্ধ
ইউনিসেফে হাইতির প্রতিনিধি ব্রুনো মাস গতমাসে হাইতির গ্যাং পরিস্থিতিকে গেরিলা যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ আর হাইতির ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ডিফেন্স নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক পিয়ের এসপেরাঁস বলছেন, হাইতির প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন ক্রিমিনাল গ্যাং৷
পুলিশ ও সেনার অবস্থাও তথৈবচ
ক্রিমিনাল গ্যাংরা মাঝেমধ্যেই পুলিশ ও সেনাসদস্যদের উপর হামলা চালায়৷ এদিকে, অভ্যুত্থান চেষ্টার দায়ে বন্দি সহকর্মীদের ছাড়াতে গত মার্চ মাসে মাস্ক পরা কয়েক ব্যক্তি (যারা নিজেদের পুলিশের বিক্ষুব্ধ অংশের সদস্য বলে পরিচয় দিয়েছে) কয়েকটি পুলিশ স্টেশনে হামলা চালিয়েছিল৷ ১৯৯৫ সালে একজন একনায়কের পতনের পর হাইতিতে সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করা হয়েছিল৷ এরপর ২০১৭ সালে পুনরায় তা গঠন করা হয়৷
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাড়ছিল
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বন্দ্ব বাড়ছিল৷ কারণ বিরোধীরা দাবি করছিলেন যে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ময়িজের মেয়াদ শেষ৷ কিন্তু ময়িজের যুক্তি ছিল তিনি ২০১৫ সালে নির্বাচনে জিতলেও শপথ নিয়েছেন ২০১৭ সালে৷ সুতরাং তার মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি৷ এরপরও বিরোধীদের দাবির মুখে ময়িজ সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
হাইতিতে হত্যা ও অপহরণের ঘটনা বাড়তে থাকার মধ্যে গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী জোসেফ জুট পদত্যাগ করেন৷ এরপর ক্লদ জোসেফকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী করা হয়৷ তবে খুন হওয়ার একদিন আগে নিউরোসার্জন আরিয়েল হেনরিকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ময়িজ৷ কিন্তু সেটা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি৷
এখন কী?
প্রেসিডেন্ট খুন হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের সভাপতির এখন দায়িত্ব নেয়ার কথা৷ কিন্তু তিনি সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন৷ ফলে নতুন নেতা হিসেবে একজনকে নির্বাচিত করার কথা জাতীয় পরিষদের৷ কিন্তু সেটাও সম্ভব নয়৷ কারণ বর্তমানে কার্যকর কোনো জাতীয় পরিষদ নেই৷ নিম্নকক্ষের সব সদস্য ও সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যেরও মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে৷ ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী জোসেফকেই (ছবি) এখন কাজ চালিয়ে যেতে হতে পারে৷